রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার বহুতল মার্কেটের ভবন নির্মাণের শুরুতেই পাইলিং স্থাপনে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে পাইপগুলো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ২৫ থেকে ৪০ ফুটের বেশি পোতা সম্ভব হচ্ছে না। মাটি অত্যধিক শক্ত হওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। কার্যাদেশ পাওয়ার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও ১৪০ টি খুটির মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ৩৫ টি স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। মূল ভবনের নির্মাণ কাজ কবে শুরু হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা । এ নিয়ে স্থানীয়দের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রকল্প স্থানে পাকা ফ্লোরযুক্ত দুইটি টিনশেড মার্কেট থাকায় এখানে যথাযথভাবে মাটি পরীক্ষা না করে কাজের ড্রইং ও ডিজাইন অনুমোদন করা হয়েছে। এমতাবস্থায় গত ১৮ আগষ্ট হতে পাইলিং স্হাপনের বিষয়ে পিডি’র পরবর্তী নির্দেশনার জন্য গত ৫ দিন ধরে কাজটি বন্ধ রেখেছে পৌর কতৃপক্ষ।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন আইইউজিআইপি (ইম্প্রুভিং আরবান গভর্নেন্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্ট) প্রকল্পে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে ৭ তলা ভীতবিশিষ্ট ৩ তলা মার্কেট নির্মাণের জন্য ফরিদপুরের তাশা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও জান্নাত কনস্ট্রাকশন যৌথভাবে ৮ কোটি ৫৭ লক্ষ ২২ হাজার ৭০০ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর শুরু হওয়া কাজটি ২০২৫ সালের ৩০ অক্টোবর তারিখের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্পের তদারকিতে থাকা আইইউজিআইপি প্রকল্পের প্রকৌশলী নাসরিন আক্তার শিমা জানান, সয়েল টেষ্ট অনেক আগে করা হয়েছে। সে বিষয়ে না জেনে কোন মন্তব্য করতে পারব না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমরা ৫০ ফুট পিলার কোথাও পুততে পারছি না। বিষয়টি পিডি অফিসে জানানো হয়েছে। সেখানকার নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তীতে কাজ করা হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্হানীয় প্রতিনিধি সালাউদ্দিন চৌধুরী জানান, সিডিউল অনুযায়ী আমরা ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ১৪০টি পাইল তৈরি করেছি। কিন্তু মাটি অত্যাধিক শক্ত হওয়ার কারণে সেগুলো পুরোপুরি পোতা যাচ্ছে ন। শিডিউল অনুযায়ী কাজটি বাস্তবায়নে তাদের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ সময় খুঁটিগুলি স্হাপনে নিয়োজিত বিলটেক্স টেকনোলজি কোম্পানির চালক মিঠুন বিশ্বাস জানান, খুটিগুলো মাটিতে পুততে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ৪২০ টন ওজনের হাইড্রোলিক কমপ্রেসার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। শব্দমুক্ত এই মেশিনটি ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের পিলারগুলো পুততে যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু ঠিকমতো পোতা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া এখানে চারদিকে মেশিনটি ঠিকমতো ঘুরার মতো পর্যাপ্ত জায়গাও নেই। এতে কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
গোয়ালন্দ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ফেরদৌস আলম খান স্বীকার করে বলেন, সয়েল টেস্টের সঙ্গে ডিজাইনের কিছু পার্থক্য থাকায় পাইলের দৈর্ঘ্য কমিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
কাজে ধীরগতির বিষয়ে তিনি জানান, পুরনো মার্কেট নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরও অপসারণ হতে বাড়তি সময় লাগে। যে কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করা যায় নি।
গোয়ালন্দ পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান জানান, খুটি স্থাপন করতে গিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা পিডি অফিসে জানানো হয়েছে। সেখান হতে পরবর্তী লিখিত নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এখানে ২ কোটি টাকার অধিক ব্যায় করেছে এবং তাদেরকে ৭৫ লক্ষ টাকার বিল দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।