গণহত্যা জাতিগত, বর্ণগত, ধর্মীয় বা নৃতত্ত্বীয় গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচিত মানুষজনকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য ইচ্ছাকৃত কার্য। ‘গণ’-এর অর্থ গোষ্ঠী এবং ‘হত্যা’র অর্থ সংহার। অর্থাৎ, গণহত্যা হলো কোনো গোষ্ঠীভুক্ত মানুষজনকে মেরে ফেলা। ইংরেজি প্রতিশব্দ জেনোসাইডের উৎসও একই। এটি গ্রিক জেনোস, অর্থাৎ মানুষ বা বর্ণ থেকে এবং সাইড অর্থাৎ মারা থেকে এসেছে। সেহেতু জেনোসাইডের বা গণহত্যার অর্থ “জাতীয়, নৃগোষ্ঠীয়, বর্ণগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ রূপে বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে করা কার্য।
রাজবাড়ী জেলা সমস্ত দেশের মধ্য ছিল একটু ভিন্ন পেক্ষাপট। এখানে প্রচুর বিহারীদের বসবাস ছিল। এখানে এক একটি বিহারী কলোনী ছিল এক একটা মিনি ক্যান্টনমেন্ট। রাজবাড়ী যুদ্ধ হয়েছিল মূলত: বিহারীদের সাথে । সারাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সহযোগিতায় এ হত্যাকান্ড চলে। রাজবাড়ীর বধ্যভূমিগুলোকে অসংখ্য মাথার খুলি, হাড়গোড় ও চুল পাওয়া গেছে। চিহ্নিত করা গেছে বেশ কিছু স্থান। কিছু কিছু স্খান সংরক্ষণ করা হলে অবহেলা আর অযত্নে রয়ে গেছে বহু স্থান। শুধু ১৪ ই ডিসেম্বর নয় পুরো নয় মাস ধরেই চলে হত্যাকান্ড। রাজবাড়ী অবাঙালীরা এতই শক্তিধর ছিল যে সমস্ত দেশ ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হলেও রাজবাড়ী শত্রুমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর।
তথ্য এবং স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে এখনই উদ্যোগ নেয়া উচিত , স্বাধীনতার যেহেতু ৫০ বছর হয়ে গেছে তাই আরো দেরি হলে হয়তো সংরক্ষণের জন্য উপাদান পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এসব শুধু গল্পই হয়ে যাবে।
কালুখালি। রাজবাড়ী
কালুখালী রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশের বধ্যভূমি
কালুখালী রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশের বধ্যভূমিতে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়। এ সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট (অব.) আকামত আলী মন্ডল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় কালুখালী রেলস্টেশনের ওই স্থানে একটি বড় খাল ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা নিরীহ মানুষকে হত্যা করে ওই খালে ফেলত। কালুখালীর মালিয়াট বধ্যভূমি: কালুখালীর মালিয়াট বধ্যভূমিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিভিন্ন স্থান থেকে নিরীহ মানুষকে ধরে এনে সেখানে ফেলে রাখত।
লোকোশেড বধ্যভূমি, রাজবাড়ী
রাজবাড়ীর লোকোশেড এলাকা ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে লোকোশেডের পুকুরে ফেল দেওয়া হতো। তখন রাজবাড়ী রেলস্টেশন দিয়ে বেশ কয়েকটি ট্রেন চলাচল করত। ট্রেন রাজবাড়ী রেলস্টেশনে থামলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা বগিতে থাকা যাত্রীদের সন্দেহ হলে ধরে লোকোশেড ক্যাম্পে নিয়ে আসত। তারপর নির্যাতন করে হত্যার পর পুকুরে ফেলে দিত।
গোয়ালন্দের গণহত্যা, রাজবাড়ী
১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল সকাল নয়টার দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে গোয়ালন্দের উজানচরের বাহাদুরপুর ঘাটে আসে। এখানে মুক্তিযোদ্ধা ও সম্মিলিত জনতা তাদের বাধা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ হন আনছার কমান্ডার ফকির মহিউদ্দিন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঘাট দখল করে অদূরে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামের ২১ জন মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর অবাঙালি বিহারি ও রাজাকাররা ব্যাপক লুটপাটের পর গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়।
ছোটভাকলার বালিয়াকান্দি গ্রামে গণহত্যা। রাজবাড়ী
ছোটভাকলার বালিয়াকান্দি গ্রামে ২৭ এপ্রিল কুখ্যাত বিহারি সাইদ, ইউনুছ, সামিমসহ ১৫ থেকে ২০ জনের সশস্ত্র একটি দল স্থানীয় জমিদার যামিনী রঞ্জন রায়ের বাড়িতে হামলা চালিয়ে জমিদারের শ্যালক হরেকৃষ্ণ, পার্শ্ববর্তী জমিদার মুহিত কুমার সাহার ছেলে মৃগেন্দ্র নাথ সাহা, জমিদারবাড়িতে আশ্রয় নেওয়া স্কুলপন্ডিত পরেশ চন্দ্র চক্রবর্তী ও পন্ডিতের ভায়রাকে (অজ্ঞাত) গুলি করে হত্যা করে। এরপর বিহারিরা জমিদারবাড়িতে ব্যাপক লুটপাট চালায়। বিহারিরা চলে যাওয়ার পর রাত ১০টার দিকে স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আবদুল আজিজ শিকদার ও অনীল চন্দ্র বৈরাগী লাশ চারটিকে জমিদার বাড়ির পেছনে গর্ত করে পুঁতে রাখেন।
পাংশার তারাপুর ব্রিজ বধ্যভূমি। রাজবাড়ী
১৯৭১ সালের ২১ মে পাংশার বাবুপাড়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর বাহিনী এলাকার নিরীহ ৩৬ জনকে হত্যা করে রেলব্রিজের নিচে পুঁতে রাখে। পাংশার বধ্যভূমি সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা চাঁদ আলী খান জানান, সেদিন ছিল ২১ মে। পাকিস্তান বাহিনী রেলগাড়িতে করে এসে নামে মাচপাড়া রেলস্টেশনে। এরপর পশ্চিম পাশে মথুরাপুর, কালিনগর ও রামকোল বাহাদুরপুর গ্রামে ঢুকে বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। এদের সঙ্গে মিলিশিয়া, বিহারি, রাজাকার ও শান্তি কমিটির লোকেরাও যোগ দেয়। গ্রামগুলো থেকে ৩৬ জন নিরীহ মানুষকে ধরে বেয়নেট দিয়ে খোঁচাতে খোঁচাতে তারাপুর রেলব্রিজের কাছে নিয়ে আসে। তাদের মধ্যে তখনো কেউ কেউ বেঁচে ছিলেন। তখন ছিল বর্ষাকাল। ব্রিজের নিচ দিয়ে স্রোত বইছিল। নরপশুরা ওই ৩৬ জনের সবাইকেপাংশার বধ্যভূমি সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা চাঁদ আলী খান জানান, সেদিন ছিল ২১ মে। পাকিস্তান বাহিনী রেলগাড়িতে করে এসে নামে মাচপাড়া রেলস্টেশনে। এরপর পশ্চিম পাশে মথুরাপুর, কালিনগর ও রামকোল বাহাদুরপুর গ্রামে ঢুকে বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। এদের সঙ্গে মিলিশিয়া, বিহারি, রাজাকার ও শান্তি কমিটির লোকেরাও যোগ দেয়। গ্রামগুলো থেকে ৩৬ জন নিরীহ মানুষকে ধরে বেয়নেট দিয়ে খোঁচাতে খোঁচাতে তারাপুর রেলব্রিজের কাছে নিয়ে আসে। তাদের মধ্যে তখনো কেউ কেউ বেঁচে ছিলেন। তখন ছিল বর্ষাকাল। ব্রিজের নিচ দিয়ে স্রোত বইছিল। নরপশুরা ওই ৩৬ জনের সবাইকে ব্রিজের নিচে ফেলে দিয়ে হত্যা করে। এ ছাড়া মাচপাড়া রেলস্টেশনের কাছে ইন্দারার মধ্যেও পাকিস্তান সেনাবাহিনী মানুষকে হত্যা করে ফেলে দেয়, যাদের একজন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হরেন্দ্রনাথ সরকার। তাঁকে হত্যা করে ইন্দারার মধ্যে ফেলা দেওয়া হয়।
উজানচর গণহত্যা। রাজবাড়ী
১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল গোয়ালন্দের উজানচরের বাহাদুরপুর ঘাটের প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ হন আনছার কমান্ডার ফকির মহিউদ্দিন। সেখানে পাকিস্তানি বাহিনী ঘাট দখল করে অদূরে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামের ২১ জন নর-নারীকে গুলি করে হত্যা করে।
কল্যাণপুর গণহত্যা। রাজবাড়ী
কল্যাণপুরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ২৫ জন নিরীহ মানুষকে। এসব বধ্যভূমিতে রয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। বাংলাদেশের মাটিতে যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, তা ছিল বিশ শতাব্দীর অন্যতম নৃশংস গণহত্যা। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ২৫ তারিখ থেকে ৮ মাস ২ সপ্তাহ ৩ দিনের এই গণহত্যার স্বরূপ ছিল ভয়ঙ্কর। পরিকল্পিত পন্থায় বাঙালিকে খুন করা হয়েছে, গণহারে নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে; ঘরবাড়িতে আগুন দেয়াসহ অপহরণ, গুম ও বর্বর শারিরীক নির্যাতন চালানো হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে এসব বর্বরতায় সহযোগী ছিল বাঙালি ও অবাঙালি সদস্য সমন্বয়ে গঠিত রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং শান্তি কমিটির সদস্যরা। কোলার হাটে সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় নেয়া একটি বাড়ীকে স্মৃতি চিহ্ন হিসাবে সরকারী উদ্যোগে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রামকান্তপুর অস্থায়ী হাসপাতাল হিসাবে পরিচিত যেখানে আহত মুক্তি যোদ্ধাদের সেবা দেয়া হত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করা জায়গাটি সংরক্ষণ করা দরকার।
রাজবাড়ীর মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার ইতিহাস পরতে পরতে রয়েছে প্রতিরোধ যুদ্ধ ও সেই সঙ্গে রয়েছে পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যার নিষ্ঠুর কাহিনী। ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল গোয়ালন্দের উজান চরের বাহাদুরপুর ঘাটের প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ হন আনছার কমান্ডার ফকির মহিউদ্দিন। সেখানে পাক বাহিনী ঘাট দখল করে অদূরে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামের ২১ জন নর-নারীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে। ২১ মে পাংশার বাবুপাড়ায় পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর বাহিনী এলাকার নিরীহ ৩৬ জনকে হত্যা করে রেল ব্রিজের নিচে পুঁতে রাখে। রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মালিয়াটে পাক বাহিনী বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে পুঁতে রাখত। কল্যাণপুরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ২৫ জন নিরীহ মানুষকে। এসব বধ্যভূমিতে রয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। তবে ওই স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ।
লোকোশেড বধ্যভূমি : রাজবাড়ী শহরে পাক হানাদার বাহিনীর হত্যা-নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বর্তমান রাজবাড়ী জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাংগঠনিক কমান্ডার বাকাউল আবুল হাসেম বলেন, পাক হানাদার বাহিনী এতটাই নৃশংস ছিল যে তারা যাকে সন্দেহ করত তাকেই হত্যা করেছে। ওদের সঙ্গে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী হাত মেলায়। রাজবাড়ীর লোকোশেড এলাকা ছিল তাদের মিনি ক্যান্টনমেন্ট। রাজবাড়ী শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে অগণিত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করেছে লোকোশেডের পুকুরে। তখন রাজবাড়ী রেলস্টেশন দিয়ে অনেকগুলো ট্রেন চলাচল করত। যখন ট্রেন এসে রাজবাড়ী রেলস্টেশনে থামত, তখনই ওই নরপশুগুলো ট্রেনের ভেতরে বগিতে গিয়ে খুঁজে খুঁজে যাকেই সন্দেহ হতো তাকেই ধরে এনে হত্যা করে লোকোশেড পুকুরে ফেলে দিত।
গোয়ালন্দের গণকবর : ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে পাক বাহিনী পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে গোয়ালন্দের উজান চরের বাহাদুরপুর ঘাটে আসে। এখানে মুক্তিযোদ্ধা ও সম্মিলিত জনতা তাদের বাধা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ হন আনছার কমান্ডার ফকির মহিউদ্দিন। পাক বাহিনী ঘাট দখল করে অদূরে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামের ২১ জন নর-নারীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে। এর পর অবাঙালি বিহারী ও রাজাকাররা ব্যাপক লুটপাটের পর গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়। স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের মাঠে ২১ শহীদের স্মরণে একটি নামফলক তৈরি করা হয়েছে।
ছোটভাকলার বালিয়াকান্দি গ্রামে ২৭ এপ্রিল কুখ্যাত বিহারী সাইদ, ইউনুছ, সামিমসহ ১৫-২০ জনের সশস্ত্র একটি দল স্থানীয় জমিদার জামিনী রঞ্জন রায় এর বাড়িতে হামলা চালিয়ে জমিদারের শ্যালক হরেকৃষ্ণ, পার্শ্ববর্তী জমিদার মুহিত কুমার সাহার ছেলে মৃগেন্দ্র নাথ সাহা, জমিদার বাড়ীতে আশ্রয় নেওয়া স্কুল পন্ডিত পরেশ চন্দ্র চক্রবর্তী ও পন্ডিতের ভায়রাকে (অজ্ঞাত) গুলি করে হত্যা করে। এর পর বিহারীর দল জমিদার বাড়ীতে ব্যপক লুটপাট চালায়। বিহারীরা চলে যাওয়ার পর রাত ১০টার দিকে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আব্দুল আজিজ শিকদার ও অনীল চন্দ্র বৈরাগী লাশ চারটিকে জমিদার বাড়ির পেছনে গর্ত করে পুঁতে রাখেন।
পাংশার তারাপুর ব্রিজ বধ্যভূমি: ১৯৭১ সালের ২১ মে পাংশার বাবুপাড়ায় পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনী এলাকার নিরীহ ৩৬ জনকে হত্যা করে রেলব্রিজের নিচে পুঁতে রাখে।
পাংশার বধ্যভূমি সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে পাংশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার চাঁদ আলী খান বলেন, সেদিন ছিল ২১ মে। পাকহানাদার বাহিনী রেলগাড়িতে করে এসে নামে মাচপাড়া রেলস্টেশনে। এরপর পশ্চিমপাশে মথুরাপুর, কালিনগর এবং রামকোল বাহাদুরপুর গ্রামে ঢুকে বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয়। এদের সাথে মিলিশিয়া, বিহারী, রাজাকার ও পিচকমিটির লোকেরাও যোগ দেয়। তারা এ গ্রামগুলো থেকে ৩৬ জন নিরীহ মানুষকে ধরে বেয়োনেট দিয়ে খোচাতে খোচাতে তারাপুর রেলব্রিজের কাছে নিয়ে আসে। এদের মধ্যে তখনও কেউ কেউ বেঁচে ছিল। তখন ছিল বর্ষাকাল। ব্রিজের নিচ দিয়ে স্রোত বইছিল। নরপশুরা ওই ৩৬ জনের সবাইকে ব্রিজের নিচে ফেলে দিয়ে হত্যা করে। এ ছাড়া মাচপাড়া রেলস্টেশনের কাছে ইন্দারার মধ্যেও পাক বাহিনী মানুষকে হত্যা করে ফেলে দেয়। যাদের একজন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হরেন্দ্রনাথ সরকার। যিনি অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। তাকে বিনাকারণে হত্যা করে ইন্দারার মধ্যে ফেলা হয়।
এই তারাপুর বধ্যভূমি সংরক্ষণে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সেখানে বাঁশের বেড়া দিয়ে রেখেছে মাত্র। কিন্তু সচেতন মহল মনে করেন, বধ্যভূমি সংরক্ষণে সরকারের আরও জোরালো ভূমিকা নেওয়া দরকার। (তথ্য সূত্র- প্রথম আলো, গুগল,এবং বিভিন্ন জার্নাল)