শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন

শুভ নববর্ষ আজ বৈশাখ মাসের প্রথম দিন নেহাল আহমেদ।

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২
  • ৪৫১ Time View

করোনা ভাইরাসের প্রকোপের মুখেই এসেছে দুইবার পহেলা বৈশাখ। সারা দেশের মানুষ গৃহবন্দী থাকায় ফলে অনেকটাই চাঞ্চল্যহীন হয়ে পড়ে ছিলো নববর্ষ বরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা উৎসব। করোনার পর এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হচ্ছে যদি ও রোজার কারনে অনুষ্ঠানসুচি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। বাংলা শুভ নববর্ষ পয়লা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বাংলা সনের প্রথম দিন। এই দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শুভ নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন উৎসব। বিশ্বের সকল প্রান্তের সকল বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়, ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশের প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা দিনটি নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেয়।

ইতিহাসে দেখা যায় প্রথমে সৌরপঞ্জি অনুসারে বাংলা মাস পালিত হতো অনেক প্রাচীনকাল থেকেই। তখনও আসাম, তামিল নাড়ু, ত্রিপুরা, বঙ্গ, পাঞ্জাব প্রভৃতি সংস্কৃতিতে বছরের প্রথম দিন উদযাপনের রীতি ছিলো। তাহলে বাংলা নববর্ষের ইতিহাসে বাংলা বারো মাস কিভাবে এলো? আর এর দিন, ক্ষণ কিভাবে ঠিক করা হলো? বাংলা সনের প্রবর্তক নিয়ে সম্রাট আকবর বেশি আলোচিত হলেও, বাংলাপঞ্জির উদ্ভাবক ধরা হয় আসলে ৭ম শতকের রাজা শশাঙ্ককে। পরবর্তীতে সম্রাট আকবর সেটিকে পরিবর্তিত করেন খাজনা ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে। প্রথমে আকবরের পঞ্জিকার নাম ছিল “তারিখ-এ-এলাহী” আর ঐ পঞ্জিকায় মাসগুলো আর্বাদিন, কার্দিন, বিসুয়া, তীর এমন নামে। তবে ঠিক কখন যে এই নাম পরিবর্তন হয়ে বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ হলো তা নিশ্চিত করে বলতে না পারা গেলেও ধারণা করা হয় যে, বাংলা বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্র থেকে। যেমন-বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জায়ীস্থা থেকে জৈষ্ঠ্য, শার থেকে আষাঢ়, শ্রাবণী থেকে শ্রাবণ এমন করেই বাংলায় নক্ষত্রের নামে মাসের নামকরণ হয়। অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাঁদের পুরানো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তাঁরা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও পালিত হয়।

নববর্ষের উৎসব বাংলার গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণত নববর্ষে তারা বাড়িঘর পরিষ্কার রাখে, ব্যবহার্য সামগ্রী ধোয়ামোছা করে এবং সকালে স্নানাদি সেরে পূত-পবিত্র হয়। এ দিনটিতে ভালো খাওয়া, ভালো থাকা এবং ভালো পরতে পারাকে তারা ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক বলে মনে করে। নববর্ষে ঘরে ঘরে আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের আগমন ঘটে। মিষ্টি-পিঠা-পায়েসসহ নানা রকম লোকজ খাবার তৈরির ধুম পড়ে যায়। একে অপরের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় চলে। প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার মাধ্যমেও নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়, যা শহরাঞ্চলেও এখন বহুল প্রচলিত। পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উদযাপনের কথাটি মাথায় এলেই মুখ দিয়ে অকপটে বেরিয়ে আসে পান্তা-ইলিশের আহারবিলাস। প্রভাতে ইলিশ ভাজা, মরিচ পোড়া, বেগুন ভাজা, আলুভর্তা আর পান্তা ইলিশের ভোজ না হলে যেন বৈশাখের উদযাপনই ফিঁকে হয়ে আসে। যদিও বৈশাখের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের প্রচলনের ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়।
ধারনা করা হয়, পান্তা-ইলিশের সূচনা হয় ১৯৮৩ সালে রমনার বটমূলে। রমনার বর্ষবরণ উৎসব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার সুবাদে প্রতিবারই ব্যাপক লোক সমাগম হয়। আবহমানকাল থেকেই পহেলা বৈশাখ বাঙালি উদযাপন করে আসছে মেলা, হালখাতাসহ নানাভাবে। দিনটিতে ঘরে ঘরে ভালো খাবারের আয়োজনও নিয়মিত অনুষঙ্গ। তবে পান্তা কিংবা ইলিশ কখনোই পহেলা বৈশাখের অনুষঙ্গ ছিল না। এর প্রচলন নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে। দ্রুতই পান্তা-ইলিশ পহেলা বৈশাখের সমার্থক হয়ে ওঠে। কিন্তু, বৈশাখ অর্থাৎ এপ্রিল মাস জাটকা ইলিশের নদী থেকে সাগরে ফিরে যাওয়ার সময়। তাই জাটকা নিধন রোধে এসময় সরকারিভাবে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ। তাই পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়ার ব্যাপারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করার পক্ষে মৎসবিদসহ সংশ্লিষ্টরা।

নববর্ষের সময় বাংলাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ২০১৬ সালে, ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এই উৎসব শোভাযাত্রাকে “মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে ঘোষণা করে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com