জন্ম দৌলতদিয়া পূর্বপাড়া (যৌনপল্লী)। বাবার নাম ঠিকানা না জানায় জন্ম নিবন্ধন করতে পারছেন না পূর্বপাড়ার ৫শতাধিক শিশু। জন্ম নিবন্ধন না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে যাচ্ছে এসকল শিক্ষার্থী। এভাবে ঝরে যাওয়ার কারণে যৌনপেশায় লিপ্ত হচ্ছে অনেক মেয়ে। ছেলেরা পা দিচ্ছে কিশোর অপরাধে ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দৌলতদিয়া পূর্বপাড়া ঘিরে যৌনকর্মীদের নিজস্ব সামাজিক সংগঠন মুক্তি মহিলা সমিতি (এমএমএস), অবহেলিত মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা এবং অসহায় নারী ঐক্য সংগঠন নামের তিনটি সামাজিক সংগঠন কাজ করছে। এই তিনটি সংগঠনের বাইরে কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা (কেকেএস), শাপলা মহিলা সংস্থা, গণস্বাস্থ্য, পায়াক্ট বাংলাদেশ। সংগঠন গুলো স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মানবধিকার নিয়ে কাজ করছে দীর্ঘদিন যাবৎ।
কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা (কেকেএস) এর নির্বাহী পরিচালক ও রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুর জব্বার জানান, দৌলতদিয়া যৌনকর্মীরা এক সময় জুতা পায়ে বাইরে যেতে পারতো না। মৌলিক অধিকার থেকে ছিল বঞ্চিত। আমি দীর্ঘদিন যাবৎ দৌলতদিয়া যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করেছি। ওরা এখন জুতা পায়ে বাইরে যেতে পারে। জমি ক্রয় করে বাইরে বাড়ী করতে পারে। তাদের সন্তানদের জন্য আমি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করে দিয়েছি। এই স্কুল এখন সরকারী হয়েছে। এই স্কুলের ৭০শতাংশ দৌলতদিয়া যৌনকর্মীদের সন্তান। অনেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে আমার তৈরি স্কুল ও সামাজিক সংগঠন সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে চাকরী করছেন। তবে এখন জন্ম নিবন্ধন নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছে এসকল শিক্ষার্থীরা। কারণ এখন জই¥ নিবন্ধন ছাড়া কোন শিক্ষার্থী স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না।
১৩ বয়সী রুহুল (ছন্দ নাম) জানায়, আমার জই¥ দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে। আমার মা একজন যৌনকর্মী। যে কারণে আমার বাবার নাম আমি জানি না। এদিকে বাবার নাম না থাকায় জই¥ নিবন্ধন করতে পারছি না। আর জই¥ নিবন্ধন না থাকায় স্কুল থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমি স্কুলে গিয়ে স্যারের কাছে অনেক অনুরোধ করেছি। স্যার আমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। আমার জীবন রক্ষার্থে স্কুলের ভর্তি করেন। তিনি আরও বলেন, স্কুলে ভর্তি হতে না পেরে সারাদিন যৌনপল্লীর ভিতরে ঘুরে ঘুরে সময় কাঁটে।
১১ বছর বয়সী এক মেয়ে শিশু দৌলতদিয়া কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা (কেকেএস) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। তবে জই¥ নিবন্ধন দিতে না পারলে সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না এমন নির্দেশ দিয়েছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এই চিন্তায় এখন সময় কাটে ঝর্নার(ছদ্মনাম)। অনেক চেষ্টা চালিয়েও বাবার নাম না থাকায় জন্ম নিবন্ধন করতে পারছে না। ঝর্না আরও বলেন, আমার শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে গেলে বাধ্য হয়ে যৌনপেশায় যেতে হবে। সুতরাং আমার জীবন রক্ষার্থে জন্ম নিবন্ধন করার ব্যবস্থা এবং পড়া লেখা চালিয়ে যেতে পারি সেই ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
পায়াক্ট বাংলাদেশ এর দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ম্যানেজার মজিবুর রহমান জুয়েল জানান, দৌলতদিয়া পূর্বপাড়া (যৌনকর্মী) অনেক মায়ের নিজের জন্ম নিবন্ধন নেই। সেখানে সন্তানের জই¥ নিবন্ধন করবে কিভাবে। তিনি আরও বলেন, এখানে মায়েরা সন্তান জই¥ দিচ্ছে। কিন্ত কে বাবা নির্বাচিত করতে পারছে না মায়েরা। নির্বাচিত করতে পারলেও সেই বাবার জন্ম নিবন্ধন না থাকায় বিপদে রয়েছে দৌলতদিয়া পূর্বপাড়া শতশত শিশু। অনেকের শিক্ষা জীবন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আগে জন্ম নিবন্ধন করতে সহজ হওয়ায় অনেকে করতে পেরেছেন। তবে এখন করতে পারছেন না।
অসহায় নারী ঐক্য সংগঠন এর সভাপতি ঝুমুর বেগম জানান, জন্ম নিবন্ধন না থাকায় পূর্বপাড়ার শতশত শিশু বিপদে রয়েছে। কারণ এই সকল শিশুদের বাবা থেকেও নেই। এদিকে জন্ম নিবন্ধন না থাকায় ঝুঁকিতে এই এলাকায় জন্ম নেওয়া ছেলে-মেয়ের। কারণ পড়া লেখা করতে না পাড়ায় ছেলেগুলো বখে যাচ্ছে এবং মেয়েরা মায়ের পেশায় লিপ্ত হচ্ছে। সুতরাং সহজ শর্তে জন্ম নিবন্ধন করার জন্য অনুরোধ করছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুল হক খান মামুন জানান, দৌলতদিয়া পূর্বপাড়া (যৌনপল্লী) এলাকায় জন্ম নেওয়া শিশুদের মায়েরা অনেকের জন্ম নিবন্ধন নেই। তবুও সকলের জন্ম নিববন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তবে এনআইডি কার্ড করতে পারছে না। এনআইডি কার্ড করতে আইন সংশোধন করতে হবে।