সনজিৎ কুমার দাস, বালিয়াকান্দি ॥
দেশে যখন স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী পালন চলছে তখন অযতœ আর অবহেলায় পড়ে আছে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের গণকবরগুলো। ফলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নের সাথে পরিচয় ঘটছেনা বর্তমান প্রজন্মের। জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৬ মে সকালে রাজবাড়ী থেকে স্কুটার নিয়ে অবাঙালি বিহারী রাজাকার সৈয়দ খামার, কালু বিহারি সহ বেশ কয়েকজন গোলা রামদিয়ায় আসে।আঞ্চলিক রাজাকার ও বিহারিদের সাথে নিয়ে নিত্য লাল , বিজয় লাল,রবি সাহার বাড়ি লুটপাট করে। রামদিয়া গ্রামে জল্লাদ বাহিনীর প্রথম শিকার অবিনাশ সাহা। তিনি বাড়ীতে চেয়ারে বসা থাকা অবস্থায় গুলি করে হত্যা করে। বেয়োনেটের খোচায় হত্যা করে মলয়, মনিন্দ্র ও বিনয় দত্তকে। এ সময় অবিনাশ সাহার পুত্রবধু, স্ত্রী ননীবালা বাড়ীর পাশে মাটিয়ালের জঙ্গলে লুকিয়ে হত্যা কান্ডের দৃশ্য দেখছিল। এদেরকে হত্যা করে সকলকে একই গর্তে পুতে রাখে।
৯ মে সকালে আর্মী স্পেশাল ট্রেন কালুখালী ষ্টেশন হতে রামদিয়ার অভিমুখে আসে। তাদের সাথে পথ প্রদর্শক হিসেবে ছিলেন রাজবাড়ীর কালু বিহারি,সৈয়দ খামার, বাচ্চু মাষ্ঠার প্রমুখ । ট্রেনটি ঠাকুর নওপাড়া পৌছালে একদল আর্মী ও বিহারি রাজাকার ট্রেন থেকে নেমে নওপাড়ায় প্রবেশ করলে স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্যরা অভ্যর্থনা জানায়। কাউন্নাইর মাঠের মধ্যে শিবপুরের চুনী হলদারকে গুলি করে হত্যা করে। গ্রামে প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জনকল্যানে নিবেদিত প্রান সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী ও নিতাই সরকারকে হত্যা করে। গঙ্গা কালীর ছেলে কালু দাসকে পেট ফেরে হত্যা করে। সতীশ দাসের ছেলে বীবেন দাসকে মহীন্দ্রী বাবুর পুকুর চালায় গুলি করেন হত্যা করে। ট্রেনে জল্লাদ বাহিনী আসছে সংবাদ পেয়ে চাঁদ খা, সবদাল, পীর মহম্মদ তাদের দলবল সহ ষ্টেশনে যায়। পাক আর্মী বাহিনীর সাথে পরামর্শ করে তারা কয়েক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হত্যা যজ্ঞে লিপ্ত হয়। রামদিয়া গ্রামে প্রবেশ করে চন্ডী সাহার বাড়ীতে নিত্য লাল সাহা, বিজয় লাল সাহা, রাধাবনিক দত্ত, বিনয় দত্ত, অবিনাস সাহা,মঙ্গল সাহা, বিশ্ব নাথ শীল, দেবব্রত সাহা, পরিমল সাহার মা ও স্ত্রীকে গুলি করে হত্যার পর একই গর্তে পুতে রাখা হয় ১০ জনকে। হরিদাস সাহা, উর্মী সাহা, প্রমথ সাহা, আরতী সাহা ও প্রমলা সাহাকে হত্যা করে ্একই গর্তে ৫ জনকে মাটি চাপা দেয়। অমানবিক নির্যাতনের পর হত্যা করে নির্মল শংকর রায় ও নৃপেন রায়কে একই গর্তে পুতে রাখে।গোলাপাড়ায় ষষ্ঠীচরন সাহার মা, অমল সাহা, নিরোদ সাহাকে গুলি করে হত্যার পর উঠানেই মাটি দেয়া হয়। নিবারন সাহা বাড়ীতে আসার পথে গুলি করে হত্যার পর বাড়ীর উঠানে চাপা দেয়া হয়। রামদিয়া গ্রামের বড়বাড়ীতে নিরাপদ ভেবে আশ্রয় নিয়েছিল পাশ্ববর্তী পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলার নিকট আত্মীয়রা। তাদের সবাইকে একটি ঘরে আটকে পুড়িয়ে হত্যা করে। পরে লাশ গুলো রামদিয়া স্কুলের পিছনে গর্তে ফেলে মাটি চাপা দেওয়া হয়। রামদিয়া হত্যাযজ্ঞ শেষ করে বিকেলে নারায়নপুর গ্রামে নেপাল বিশ্বাস, দেবেন্দ্র নাথ বিশ্বাস,নগেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, রবীন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, লালন প্রামানিক,অধর বিশ্বাস,রায়চরন,কিশোরী লাল, আনন্দ রাহা, ব্রজেন্দ্র নাথ সরকারকে সারিবদ্ধ হত্যা করে একই গর্তে চাপা দেয়। বর্তমানে র্গতর্টি নারায়নপুর সার্বজনীন মন্দিরের পাশ্বে অবস্থিত। এর আগে তারা সোনাপুরে অগ্নি সংযোগ সহ সুদন্য বর্মন,সতীষ বর্মন,অশ্বিনী বর্মনকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও নাম না জানা অনেক হত্যাযোগ্য চালায় জল্লাদ বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহয্য করার অপরাধে হানাদার বাহিনী জামালপুর বাজারের দু সহোদর যদু,মধূ,আক্তার সহ ৫ জনকে একই গর্তে পুতে রাখা হয়। বর্তমানে সে স্থানটি জামালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে। এখানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হারুনর রশিদের কবর রয়েছে। বুদ্ধিজীবি দিবসে কবরে শ্রদ্ধা জানানো হয়। অপর দিকে নওপাড়া খালের দক্ষিণ পাশে মানব দরদী দু আওয়ামী নেতা সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী ও নিতাই চন্দ্র সরকারের স্মৃতি রক্ষার্থে পাকা স্থাপনা নির্মান করলেও অযতœ আর অবহেলা জ্গংলে পড়ে আছে। হানাদার বহিনীর হাতে নিহত শহীদদের রক্তে রঞ্জিত নিভৃত পল্লীর স্বজন হারার কান্না আজও থামেনি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেড়িয়ে গেলেও গনকবরের স্মৃতি চিহ্ন নির্মিত হয়নি। সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ এ এম আব্দুল মতিন বলেন, বিভিন্ন সভা সমাবেশে গণকবরের রক্ষনাবেক্ষনের দাবী তুলেছি। কোন ফল হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) মোঃ হাসিবুল হাসান জানান, গণকবর গুলোর বিষয়ে আমার জানা ছিল না। দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।