রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন

রাজবাড়ীর বাড়িগ্রাম মুখরিত বাবুই পাখির কিচিরমিচিরে

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
  • Update Time : শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২
  • ১৬৪ Time View

বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই! আমি থাকি মহা সুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে। বাবুই হাসিয়া কয়; সন্দেহ কি তায় ! কষ্ট পাইতবু থাকি নিজেরই বাসায়। পাকা হোক তবু ভাই পরের বাসা, নিচ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা।

মানুষকে মানবিকভাবে জাগ্রত করার জন্য কবি রজনীকান্ত সেন এ কবিতাটি রচনা করেন। বাবুই পাখি সত্যিকার অর্থে শিল্পী পাখি। তাল বা খেজুড় গাছে নিপুণভাবে বাসা তৈরি করতে তাদের জুড়ি নেই। এ পাখির রয়েছে অসাধারণ বৈজ্ঞানিক ক্ষমতাও। নির্বিচারে পাখি শিকার আর বৃক্ষ নিধনের ফলে ধীরে ধীরে পাখি হারাচ্ছে তাদের নিবাস। প্রায় বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখির বাসা। রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের বাড়িগ্রামে কয়েকটি তালগাছে দেখা মিলল বাবুই পাখির বাসা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িগ্রাম-বানিবহ আঞ্চলিক সড়কটির পাশে তালগাছে শৈল্পিক দক্ষতায় বাসা বেঁধেছে বাবুই পাখি। সেই সাথে পাখির কিচির মিচির শব্দে জুড়িয়ে যায় মন। স্থানীয়রা জানিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে বাবুই পাখি বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে হওয়ায় তারা এখানে বাসা বাঁধছে বলে জানান তারা। বাবুই পাখির বাসা বাঁধার কারণে পাখিরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে এজন্য তারা তালগাছ থেকে রসও সংগ্রহ করেন না। বাবুই পাখির বাসা দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসে। তারা চেষ্টা করেন পাখিরা যেন নিরাপদে থাকে। পাখিরা ক্ষেত থেকে বিভিন্ন পোকা মাকড় খায় এটাও তাদের জন্য আর্শীবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাড়িগ্রামের বাসিন্দা পেশায় কৃষক ফজলুর রহমান জানান, যখন তিনি স্কুলে পড়তেন তখন প্রচুর বাবুই পাখির বাসা দেখেছেন। ইদানিংকালে বাবুই পাখির বাসা দেখাই যায়না। গত দুই তিন বছর ধরে তাদের গ্রামের কয়েকটি তালগাছে বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে। বাবুই পাখির বাসা যাতে কেউ নষ্ট না করে এজন্য তারা সজাগ। এছাড়া বাবুই পাখি ক্ষেতের পোকামাড় খেয়ে সাবাড় করে। এটাও তাদের জন্য বেশ উপকারী।

কলেজছাত্রী হ্যাপী আক্তার জানান, বাবুই পাখি সম্পর্কে তিনি পড়াশোনা করেছেন। এ পাখি দুটি বাচ্চা উৎপাদন করে। ডিম ফোটানোর পরম া পাখি অন্য পাখির সাথে বাসা বাঁধে। তাদের বাড়ির পাশে তালগাছে বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে। এটা দেখতে খুব ভালো লাগে। শিশুরাও বাবুই পাখির কিচির মিচির শব্দে আনন্দ পায়। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ দেখতে আসে বাবুই পাখির বাসা।

রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. নুরুজ্জামান বলেন, বাবুই পাখি জন্মগতভাবেই শৈল্পিক দক্ষতা থাকে। কীভাবে বাসা বাঁধবে এটা তারা তাদের মায়ের কাছ থেকেই শিখে নেয়। এই গুণ আর অন্য পাখিদের মধ্যে নেই। এটি অতি পরিচিত একটি পাখি। কেউ একে শিল্পী পাখি বলে। আবার সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে বলে তাদের সামাজিক পাখিও বলা হয়। বাবুই পাখি সাধারণতঃ তাল অথবা খেজুর গাছে বাসা বাঁধে। কখনও কখনও তারা আখ ক্ষেতেও রাত্রিযাপন করে। এরা শস্য দানা, ধান, গম ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ করে। এ পাখির মধ্যে একটি বৈজ্ঞানিক গুণও আছে। পুরুষ পাখিরা বিশ্রামের জন্য বাসা বাঁধে আর নারী পাখিরা বাসা বাঁধে ডিম ফুটানো ও বাচ্চা সংরক্ষণের জন্য। যখন বাচ্চা ফোটার সময় হয় তখন মা পাখিরা এক টুকরা গোবর নিয়ে বাসায় রাখে। যাতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে বাচ্চাদের ক্ষতি করতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, কিছু মানুষ বুঝে না বুঝে তাদের শিকার করে। তাল গাছ ও খেজুর গাছের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। যেকারণে বাবুই পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। বৃক্ষ নিধন ও নির্বিচারে পাখি শিকারের কারণে বাবুই পাখির বাসা এখন খুব একটা দেখা যায়না। পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র রক্ষার স্বার্থে পাখি নিধন বন্ধ করার পাশাপাশি পাখিদের অভয়ারণ্য সৃষ্টি করতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com