একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক মনসুল উল করিমের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজবাড়ীতে।
রাজবাড়ী মনসুর উল করিম স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে বুধবার রাতে স্থানীয় দৈনিক জনতার আদালত পত্রিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজবাড়ী জেলা পরিষদের প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার।
মনসুর উল করিমের ভ্রাতৃবধূ রাজবাড়ীর সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজ খানমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে স্মরণসভায় বক্তৃতা করেন রাজবাড়ী একাডেমির সভাপতি সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান, রাজবাড়ী থিয়েটারের সভাপতি আসাদুজ্জামান চৌধুরী বাবলা, শিশু রাজ্যের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, বিশ^ ভরা প্রাণের সভাপতি আতাউর রহমান, রাজবাড়ী সুহৃদ সমাবেশের সভাপতি আহসান হাবীব, ডা. আবুল হোসেন কলেজের প্রভাষক মীরুনা বানু মুন, অংকুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক গোলাম সারোয়ার, দৈনিক সমকালের রাজবাড়ী প্রতিনিধি ও জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র শীল চন্দন, চিত্রশিল্পী রাজকুমার পাল প্রমুখ।
বক্তারা মনসুর উলম করিমের কর্মময় জীবনের উপর আলোচনা করেন এবং তার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সবাইকে উদ্যোগি হওয়ার আহ্বান জানান। স্মরণসভার আগে তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মনসুর উল করিম স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক কবি খোকন মাহমুদ।
চিত্রশিল্পী মনসুর উল করিম ১৯৫০ সালে রাজবাড়ী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে চারুকলায় স্নাতক এবং ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করার পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে অধ্যাপনা শুরু করেন। ২০০৯ সালে তিনি চিত্রকলায় বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হন। দীর্ঘ ৪০ বছর অধ্যাপনা শেষে অবসর গ্রহণ করে তৃণমূল পর্যায়ে চিত্রশিল্পী গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিজ জেলা রাজবাড়ীর রামকান্তপুর স্বর্ণশিমুল তলায় গড়ে তোলেন বুনন আর্ট স্পেস।
একুশে পদক ছাড়াও তিনি দেশে বিদেশে বিভিন্ন পুরষ্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। চিত্রকলায় সামগ্রিকভাবে অবদানের জন্য ২০১৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে তাকে সুলতান পদক দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরষ্কার এবং ষষ্ঠ এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল পদক লাভ করেন। ১৯৯৪ সালে ভারতীয় ললিতকলা একাডেমি আয়োজিত অষ্টম ভারতীয় ত্রিবার্ষিক আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনী থেকে তিনি পুরষ্কার লাভ করেন।
১৯৭২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁর ২৬টি একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের চিত্রশিল্পকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল তার। ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।