মুক্তচিন্তার অকুতোভয় দিক নির্দেশক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার সশ্রদ্ধ সালাম গ্রহণ করুন। একদিকে আত্মরক্ষার অপরিহার্য বাস্তবতা, আর একদিকে বিশ্ব একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার অপপ্রয়াস, অন্যদিকে নাট্যমঞ্চে কৌতুক অভিনেতা থেকে রাজনীতির দুর্লঙ্ঘ প্রাচীর অতিক্রমের কুঠিলতার খায়েশিচিন্তার নিষ্ঠুর আঘাতে ইউক্রেনের নিরপরাধ শিশু, বৃদ্ধ জনতার নির্মম মৃত্যু এবং ধ্বংসের হৃদয় বিদারক আত্মচিৎকারে বিশ্ব বিবেক আজ স্তম্ভিত। রাশিয়া-ইউক্রেনের অপ্রত্যাশিত যুদ্ধ বিশ্বজনজীবনকে করে তুলেছে সংকটাপন্ন। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের কাম্য এখনই এই যুদ্ধের অবসান হোক।
রক্তস্নাত বাংলার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজকের প্রশ্নভরা বিশ্ব পরিস্থিতিতে আপনার পক্ষপাতহীন রাজনৈতিক দৃঢ়তায় ২৩ মে’র আন্তর্জাতিক এসকাপ সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের কাছে আপনার উত্থাপিত রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তার আপনাকে দিয়েছে মাতৃত্বের সংবেদনশীল হৃদয় আসন, আর বাংলাকে বসিয়েছে বিশ্ব মানবতার উচ্চ আসনে। যুদ্ধবিরোধী বিশ্ব জনমতের কাছে আপনি হয়েছেন-মমতাময়ী আসনের প্রাপ্যদার। আমরা গোটা জাতি আজ গর্বিত।
শুধু তাই নয়, গত ৮ এপ্রিল টাস্কফোর্সের সভায় আপনার বক্তব্য “আমরা পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকব কেন। আমাদের মানুষের মেধা আছে। তাকে বিকাশের সুযোগ করে দিলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব।” আবার ৯ মে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় আপনার ৮ এপ্রিলের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম। মে দিবসের স্মরণসভায় আপনি বলেছেন, “বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবে।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার বীরোচিত বক্তব্যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পর অনুভব করলাম, আমি সার্বভৌম বাংলার একজন নাগরিক। জাতীয় বীরের আসনে আপনার এই পদার্পণকে স্বাগতম-স্বাগতম এবং স্বাগতম।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চলমান বাস্তবতায় যথার্থই বুঝিয়ে দিয়েছেন, আপনি ১২শ বছরের পরাধীন বাংলার শৃঙ্খল ভাঙ্গা হাজারো বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য সন্তান। বাংলার বাঙালির আজকের ঠিকানা, বাংলা মায়ের আদরিনী কন্যা শেখ হাসিনা আমার উপলব্ধি থেকেই আপনাকে জানাচ্ছি অভিবাদন। আমি আনন্দচিত্তে অভিনন্দন জানাচ্ছি, ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ভেঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়াবার ঐক্যবদ্ধ শক্তি সৃষ্টিতে মহান স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক শ্রদ্ধাভাজন নেতৃত্ব সর্বজনাব আমির হোসেন আমু, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেননসহ ১৪ দলীয় দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতৃবৃন্দকে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ৫ এপ্রিল দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকায় বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে বাংলার পানি সম্পদ সম্পর্কিত আপনার দিক নির্দেশনা আমাকে দারুনভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলার বহুগুণে গুণান্বিত পানি সম্পদ নিয়ে আমি জাতীয় সংসদ সদস্য থাককালীন ১৯৮০ সাল থেকে অদ্যবধি প্রায় ৪২ বছর গবেষণা করছি। আমার চিন্তা শুধু ফসল কেন্দ্রিক পানি শূন্যতা নিয়ে নয়। আমার গবেষণা বর্ষায় প্রাপ্ত বাংলার বিশাল বিস্তৃত পনিরাশিকে উৎপাদনশীল সম্পদে রূপান্তর করা। আমি ইতিমধ্যেই সেই প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছি। আমি পাংশার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে ১৯৮৯ সালে এই প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করবার প্রধান যন্ত্র নতুন পদ্ধতির জলকপাটও উদ্ভাবন করেছি। আমার উদ্ভাবিত জলকপাট বর্তমান আমদানি নির্ভর জলকপাট থেকে ৭-৮ ভাগ কম খরচে নির্মাণযোগ্য। যা হবে আপনার সাশ্রয়ী চিন্তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমার উদ্ভাবিত জলকপাটে একই সঙ্গে পানি এবং মাছ উভয়ই সংরক্ষণ করা যাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিনীতভাবে আপনাকে অবগত করছি, আমার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বাংলার সকল নদী-খালকে জীবন্ত করবে, ফসলের পানির যোগান দেবে, ভূগর্ভস্থ পানি সমস্যার সমাধান দেবে, বাংলাদেশকে একটা বিশাল মৎস্য খামার সাদৃশ্যে গড়ে তুলবে। খুলে দিবে অর্থনৈতিক নবদিগন্তের নবকপাট। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি এবং আশা করছি, আগামী ৩/৪ মাসের মধ্যে আমার প্রযুক্তি আপনার সমীপে উপস্থাপন করতে পারব।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি শুধু একজন রাষ্ট্র নায়কই নন, আমার ভাবতেও অবাক লাগে, বাংলা প্রকৃতি সম্পর্কে আপনার চিন্তা, বক্তব্য এবং কর্মপরিকল্পনাই প্রমাণ করছে-আপনি একজন বাংলা প্রকৃতির গবেষকও। সাগর নদীতে মৎস্য সংরক্ষণ কার্যক্রম বাংলা প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন আপনার সুদূরপ্রসারী চিন্তারই বহিরপ্রকাশ। আপনি বাংলা প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সম্মন্ধে উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলেই স্বনির্ভর বাংলা গড়ার দুঃসাহসিক কারিগরও হতে পরেছেন। এটাই ঐতিহাসিক সত্য যে জাতীয় সম্পদকে না বুঝলে কোন রাষ্ট্র নায়কই তার দেশকে স্বনির্ভর করতে পারেন না। আপনার মত একজন বিজ্ঞানমনষ্ক দেশপ্রেমিক, জাতীয় বীর, রাষ্ট্রনায়ককে পেয়েছে বলেই জাতি আজ স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখছে।
জাতির একান্ত চাওয়া- জমিনে জন্মানো আগাছা পরিষ্কার করেই কাঙ্খিত ফসল জন্মানো হোক। লাল সবুজের পতাকা তারই ইঙ্গিত বহন করছে। সবার প্রতি আমার সালাম-প্রণাম এবং শুভেচ্ছা রইল।
৩০ লাখ শহীদী জনতার রক্তস্নাত, ২ লাখ স্বাধীনতাপ্রিয় বীর বীরাঙ্গনার জ্যান্তজীবন জড়ানো প্রিয় বাংলাদেশ চিরজীবি হোক।
জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, জয় হোক বাংলার মেহনতি জনতার।
(বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন মিয়া, রাজবাড়ী-২ আসনের প্রাক্তন জাতীয় সংসদ সদস্য এবং পাংশা উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, লেখক ও গবেষক, মোবাইল নং ০১৭৭৪৭৩৮৫৯০)