গুণী সাংবাদিক হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন রাজবাড়ীর প্রবীণ সাংবাদিক রাজবাড়ী জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। গত ৩০ মে সোমবার বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যেগে তাই এ সমম্মাননা প্রদান করা হয়।
তৃণমূল সাংবাদিকতায় অবদান রাখায় বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ৬৪ জন গুনী সাংবাদিক কে সম্মাননা প্রদান করছে দেশের বূহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।
ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) থেকে তিনি এই সম্মাননা গ্রহণ করেন। এ সাথে তিনি পেয়েছেন পঞ্চাশ হাজার টাকা, ক্রেস্ট, সনদপত্র। অনুষ্ঠানে তাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রবীন সাংবাদিক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃক এই সম্মাননা পাওয়ায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুণীজন ও সাংবাদিকরা বসুন্ধরা গ্রুপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তৃণমূল পর্যায়ে সাংবাদিকদের এই গুণীজন সংবর্ধনার ধারাকে অব্যাহত রাখতেও বসুন্ধরা গ্রুপের সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
রাজবাড়ীতে সংবাদপত্রসেবী বা সাংবাদিকের নাম শোনা যায় তাদের মধ্যে অন্যতম প্রবীণ সাংবাদিক মো. সানাউল্লাহ। গুণী এই ব্যক্তিত্ব শুধু সাংবাদিকতাই নয়, তার সুদীর্ঘ অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে অসংখ্য কলাম ও ফিচার লিখেছেন তিনি। তুলে ধরেছেন জনপদের খবর। সংবাদপত্রের পাতায় ষাটের দশকের থেকেই রাজবাড়ী জেলা বাসীর মুখে মুখে ছিল সাংবাদিক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ নাম। কিংবদন্তী এই সাংবাদিক আজ অবধি তাঁর কলম থামিয়ে রাখেননি।
সাংবাদিক মো. সানাউল্লাহ পাকিস্তান আমলে ‘পাক যমহুরিয়াত’ সাপ্তাহিক পত্রিকায় লেখালেখির মধ্যে দিয়ে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে তিনি “দৈনিক পূর্বপাকিস্তান পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলে তিনি বাংলার বাণী পত্রিকায় মফস্বল সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন।
এরপর একাধারে দৈনিক বাংলা, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক সমকাল, বিডি নিউজ ২৪ এবং সুদীর্ঘ সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও তিনি রাজবাড়ী জেলার রেড ক্রিসেন্ট, শিল্পকলা একাডেমী সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।
উল্লেখ্য মোহাম্মদ সানাউল্লাহ ছাএজীবনে তৎকালীন সময়ে গণঅভ্যুত্থান, ছয় দফা ও অসহযোগ আন্দোলন সহ বিভিন্ন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের দিক নির্দেশনা নিয়ে দেশের প্রয়োজনে তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এছাড়াও তিনি স্বাধীনতা-উত্তর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও দেশের বিভিন্ন উন্নয়নে তাঁর সংস্পর্শে এসে বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ পান।
দুই সন্তানের জনক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় অবসর জীবন যাপন করছেন। মোহাম্মদ সানাউল্লাহ’র বড় ছেলে আহসান হাবীব টুটুল রাজবাড়ী জেলার এনটিভি ও ইউএনবি’র জেলা প্রতিনিধি। ছোট ছেলে কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক আহসান রাজীব বুলবুল “চ্যানেল আই” এর কানাডা প্রতিনিধি এবং কানাডার আলবার্টার প্রথম বাংলা অনলাইন পোর্টাল “প্রবাস বাংলা ভয়েস” এর প্রধান সম্পাদক।
এক সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ সানাউল্লাহ আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, জীবন সায়াহ্নে এসে বসুন্ধরা গ্রুপের এই সম্মাননা আমার জীবনের চলার গতি পথ কে আরও সমৃদ্ধ করবে। এই সম্মাননা পুরো রাজবাড়ী জেলাবাসীর। সেইসাথে এই সম্মাননা আমার সদ্য প্রয়াত সহধর্মিণী সেলিনা খাতুন কে উৎসর্গ করছি। যার অপরিসীম ধৈর্য আর সহযোগিতা আমার সাংবাদিকতা জীবনকে সহজ ও মসৃণ করেছে।
দেশের বূহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ’ এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সরকারকেও এ ধরনের প্রণোদনামূলক সম্মাননা প্রদানের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই তৃণমূল পর্যায়ে আরও মেধা সম্পন্ন সাংবাদিক বেরিয়ে আসবে। পরিশেষে তিনি তাঁর সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।