দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তর রাজবাড়ী জেলা। এই জেলায় মুড়িকাঁটা ও হালি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে অধিক পরিমাণে। তবে এবার মুড়িকাঁটা ও হালি পেঁয়াজের পাশাপাশি কৃষক হুমায়নের জমিতে আরোও একটি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। গ্রীস্মকালীন এই পেঁয়াজের নাম হচ্ছে ‘বিপ্লব’ পেঁয়াজ। গ্রীস্ম ও বর্ষা মৌসুম উপযোগি জাত ইষ্ট-ওয়েষ্ট সীড বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড আমদানিকৃত বীজে বিপ্লব পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ বেড়েছে রাজবাড়ী জেলার চাষীদের।
মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার সফল কৃষক হুমায়ন আহমেদ স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ৩৩ শতক জমিতে গ্রীস্মকালীন পেঁয়াজ “বিপ্লব পেঁয়াজ” চাষ করেছেন। আগাম ফসল হিসাবে পেঁয়াজ চাষ করায় জেলার অনেক কৃষক উৎসাহ পাচ্ছে। অনেকে হুমায়নের আবাদকৃত পেঁয়াজ দেখতে আসছেন। পরামর্শ চাচ্ছে কিভাবে কখন চাষ করতে হয়? উপজেলা ও জেলার একাধিক বারের সেরা কৃষক হুমায়ন আহমেদ বলেন, আমি একজন কৃষক। পেঁয়াজ, রসুন, ধান-পাটসহ সকল প্রকার সবজি চাষ করি। প্রতি বছর ১৫ বিঘার অধিক মুড়িকাঁটা এবং হালি পেঁয়াজ চাষ করি। এবার মুড়িকাঁটা এবং হালি পেঁয়াজের পাশাপাশি গোয়ালন্দ কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান এর পরামর্শে “বিপ্লব পেঁয়াজ” চাষ করেছি ৩৩শতাংশ জমিতে। গ্রীস্ম ও বর্ষা মৌসুমে চাষ উপযোগি ইষ্ট-ওয়েষ্ট সীড বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড এর এই পেঁয়াজ মুড়িকাঁটার বিকল্প। পেঁয়াজ গুলো আকারে অনেক বড় হয়েছে। আমরা ভাল দামও পাচ্ছি। চাষ করতেও তেমন ব্যয় হচ্ছে না। প্রতিদিন অনেকে দেখতে আসে। হয়ত আগামীতে অনেকে মুড়িকাঁটা পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে “গ্রীস্মকালীন পেঁয়াজ বিপ্লব” চাষ করবে।
কৃষক রেজাউল বলেন, পদ্মা নদীর পারে অবস্থিত রাজবাড়ী জেলা। এই জেলার মাটি উর্বরতা বেশি। প্রতিটি ফসল ভাল হয়। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে হুমায়ন আহমেদ ৩৩ শতাংশ জমিতে “বিপ্লব পেঁয়াজ” লাগিয়েছে। আমরা দেখতে আসছি। আগামীতে মুড়িকাঁটা পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে “বিপ্লব পেঁয়াজ” চাষ করবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ‘বিপ্লব পেঁয়াজ’ গ্রীষ্মকালীন উচ্চ তাপমাত্রা ও অধিক বৃষ্টি সহনশীল জাত। এই পেঁয়াজ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। রোপণের ৩ মাসের মধ্যে পেঁয়াজ ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টর জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ মেট্রিক টন পেয়াঁজ উৎপাদন হয়। পেঁয়াজের সাইজ ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ওজন পর্যন্ত হয়।
ইষ্ট-ওয়েষ্ট সীড বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড এর মাকেটিং অফিসার অপূর্ব কুমার বলেন, কৃষকের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে এই বীজ বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। এবার রাজবাড়ী সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় কিছু চাষী “বিপ্লব পেঁয়াজ” লাগিয়েছে। এই পেঁয়াজে অনেকেই লাভবান হওয়ার আশা করছেন। হয়ত আগামীতে অনেকে বিপ্লব পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ পাবে।
গোয়ালন্দ কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, দেশের পেঁয়াজের চাহিদার মেটানো এবং কৃষকের লাভবানের জন্য মুড়িকাঁটা পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে ‘বিল্পব পেঁয়াজ’ আবাদ করতে কৃষকের উৎসাহ তৈরি করা হয়েছে। আগামীতে হয়ত অনেকে “বিপ্লব পেঁয়াজ” চাষে আগ্রহ পাবে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে এবার রাজবাড়ীতে ২০/২৫ দিন পেঁয়াজ লাগানো পিছিয়ে পরেছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা কমবে না বরং বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এবার জেলার ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর লক্ষমাত্রা রয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৫/৬শত হেক্টর বেশি হবে। গ্রীস্ম ও বর্ষা মৌসুম চাষ উপযোগি জাত “বিপ্লব পেঁয়াজ”। এবার অতি বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ লাগানো পিছিয়ে গেছে কিন্ত বিপ্লব পেঁয়াজ বপনে কোন সমস্যা হয়নি।