অনিবন্ধন মটরসাইকেল চালাচ্ছে অপ্রাপ্ত একটি ছেলে। মাথায় হেলমেট মেই। তার পিছনে দুইজন আরোহী রয়েছে। তারাও অপ্রাপ্ত হেলমেট বিহীন। দ্রুতগতিতে হেলেদুলে চালাচ্ছে মটরসাইকেল। দেখে মনে হচ্ছে রাস্তায় অন্য কোন যানবাহন নেই। দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কে দৌলতদিয়া ট্রাফিক পুলিশ কন্টোল রুমের সামনে দিয়ে একাধিকবার যাওয়া আসা করছে ছেলেগুলো। কয়েকবার আসা-যাওয়ার পর রাস্তার পাশে দাঁড়ালো। এত দ্রুত মটরসাইকেল চালাচ্ছেন কেন জানতে চাই ছেলেগুলো একসাথে বলে উঠলো মটরসাইকেল আস্তে চালানোর জিনিস নাকি? আপনার মটরসাইকেলের নিবন্ধন নেই এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা জানায়, আমাদের মটরসাইকেলে নিবন্ধন লাগে না। কথাগুলো বলতে বলতে আবারও দ্রুতগতিতে চলে গেল।
মহাসড়কে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে দেখা যায়, এই ছেলেগুলোর মত অসংখ্য অপ্রাপ্ত ছেলেরা অনিবন্ধনকৃত মটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ মটরসাইকেলে ২/৩ আরোহী নিয়ে চালাচ্ছে। মাথায় হেলমেট বিহীন।
রাজবাড়ী জেলায় অনিবন্ধন মটরসাইকেলের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিবন্ধনের চেয়ে অনিবন্ধন মটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি বলেও দাবি করেন রাজবাড়ী বিআরটিএ সহকারী পরিদর্শক লিটন বিশ্বাস।
রাজবাড়ী বিআরটিএ দায়িত্বরত সহকারী পরিদর্শক আরও জানান, ২৫ হাজারের মত নিবন্ধনকৃত মটরসাইকেল রয়েছে এই জেলায়। কিন্ত এই জেলায় ২৫ হাজারের অধিক মটরসাইকেল অনিবন্ধনকৃত রয়েছে। অনিবন্ধকৃত মটরসাইকেল গুলো নিবন্ধন করলে সরকারের আরও অনেক টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হতো। মটরসাইকেলগুলো নিবন্ধন না হওয়ায় সরকার প্রতিবছর রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এদিকে অনিবন্ধনকৃত মটরসাইকেল এবং ড্রাইভিং লাইন্সেস ছাড়া মটরসাইকেল চালানোর কারণে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
এসময় রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বাসিন্দা শামীম নামের এক ব্যক্তি বলেন, প্রতিদিন মটরসাইকেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্ত দেখা যাচ্ছে মটরসাইকেলগুলো অনিবন্ধন এবং চালকের ড্রাইভিং লাইন্সেস নেই। তিনি আরও জানান, অপ্রাপ্ত মটরসাইকেলগুলো সড়কে বেপোরয়া ভাবে চালানোর কারণে প্রতিদিন অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে অকালে জীবন দিচ্ছে এবং পঙ্গু হচ্ছে অনেকে।
জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ব্যবসায়ী রাম ভৌমিক নামের এক ব্যক্তি জানান, সড়কে বেপোরোয়া মটরসাইকেল চালকদের কারণে বের হওয়া যায় না। কোন নিয়ম-নীতি না জেনে অপ্রাপ্ত বয়সে মটরসাইকেল চালাচ্ছে। দেখা যায় দুইজনের অধিক আরোহী নিয়েও অনেকে মটরসাইকেল চালাচ্ছে।
গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী সহসভাপতি নারায়ন চন্দ্র রাহা বলেন, একটি সড়ক দুর্ঘটনায় কারো জীবন যাচ্ছে, কেউ পঙ্গু হচ্ছে। তবুও অপ্রাপ্ত ছেলেরা অবাদে মটরসাইকেল চালাচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারী গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের এক শিক্ষক জানান, স্কুল-কলেজের সামনে দিয়ে দেখা যায়, ২/৩ জনের অধিক প্রতি মটরসাইকেলে অপ্রাপ্ত ছেলেরা দ্রুত গতিতে মটরসাইকেল চালাচ্ছে। এসকল মটরসাইকেলের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। বেপোরোয়া মটরসাইকেল চালানো নিয়ন্ত্রনে আসছে না বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
রাজবাড়ী ট্রাফিক পুলিশ ইন্সপেক্টর তারক পাল জানান, অনিবন্ধন মটরসাইকেল জব্দ করার জন্য প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হয়। এই অভিযান চলমান রয়েছে। শহরের মধ্যে প্রতিটি সময় টহল দেওয়া হয়।