অতি খড়া ও অনাবৃষ্টিতে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মৃধাডাঙ্গা এলাকার কমপক্ষে ২০ টি পুকুর পানিশূন্য হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছে ওই এলাকার মৎসচাষীরা। বৃষ্টি না হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান জেলেরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরগুলো পানি শূন্য। কিছু পুকুরে মেশিনের মাধ্যমে পানি দিয়ে মাছ চাষ করতে হচ্ছে। এতে খরচ অনুযায়ী লাভের মুখ দেখছে না মাছ চাষীরা। কিছু দিনের মধ্যে অতি বৃষ্টি না হলে এবছর মাছ চাষীরা তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী মাছ চাষ করতে ব্যর্থ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এলাকার কয়েকজন মাছ চাষীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর বৃষ্টির মৌসুমে পুকুরে জমা পানিতে আমরা মাছ চাষ করে থাকি। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া পুকুরে মেশিন দিয়ে পানি দিতে হয় না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আমাদের এলাকায় বর্ষা বন্যার পানি ঢোকে না এজন্য প্রতিবছর বৃষ্টির পানিতেই আমরা মাছ চাষ করে থাকি। এবার এলাকায় বৃষ্টি নেই বললেই চলে। প্রতিবছর আমরা বৈশাখ মাসের শুরু থেকেই বৃষ্টির পানিতে মাছ ছাড়ার প্রস্তুতি নেই। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় এবং প্রচন্ড তাপদাহ থাকায় পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। এজন্য মাছ চাষ করতে ব্যর্থ হচ্ছি আমরা। এবার মাছ চাষ না করতে পারলে অনেকেই মহাজনের কাছ থেকে নেয়া দাদনের টাকা পরিশোধ করতে পারবে না ভুক্তভোগী মাছ চাষীরা।
তরুণ খামারি ও পুরস্কারপ্রাপ্ত মৎস চাষী, উজানচর মৃধাডাঙ্গা নিবাসী শাখাওয়াত হোসেন জানান, আমি গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস অফিসের পরামর্শে প্রতিবছর মাছ চাষ করে সফল মাছ চাষী হিসাবে পুরস্কার গ্রহণ করেছি। মাছ চাষ করে আমি প্রতিবছর লাভের পাশাপাশি কিছু শ্রমিক রেখে তাদের পরিবারের উপকার করে থাকি। তবে এবার অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড খড়ার কারণে আমার আয়ত্বে চাষকৃত ৭ টি পুকুর পানি শূন্য হয়ে পরেছে। তবে এর মধ্যে ৩ টি পুকুরে পোনা উৎপাদনের জন্য মেশিনের সাহায্যে পানি দিতে হচ্ছে। ফলে মাছ চাষে এবার লোকসানে পড়তে হবে। এসব পুকুরে পানির ব্যবস্থা না করলে এবছর আর মাছ চাষ করা সম্ভব হবে না।
মৃধাডাঙ্গা এলাকার আর একজন মৎস চাষী ও স্কুল শিক্ষক জহির রায়হান বলেন, আমাদের এলাকাটি বেরিবাঁধের অপর পাশে হওয়ায় বর্ষার পানি এখানে ঢোকেনা ফলে বৃষ্টি ও সেচের পানিতে মাছ চাষ করতে হয়। এবং আমাদের এরাকার প্রতিটা পুকুর বৃষ্টির পানির উপর নির্ভরশীল। আবার বৃষ্টির পানিতে মাটি ধুয়ে পুকুরে পড়ায় প্রতিটি পুকুরের গভীরতাও কমে গেছে। এজন্য পানি দ্রুত শুকিয়ে যায়। প্রতিটি পুকুরে গভীরতা বাড়ানোর জন্য খনন কাজ অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজীব বলেন, বিগত বছরগুলোতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এমন সমস্যা হয়নি। এবার বৃষ্টি একেবারে নাই বললেই চলে। অনাবৃষ্টি ও খড়া হওয়ায় এবার এ উপজেলার অনেক পুকুর ও খাল-বিলে পানি নেই। এমন সমস্যায় যেসকল মাছ চাষীরা পরেছে তারা মৎস অফিসে আসলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রানে সহযোগিতা করা হবে।