রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অবৈধ মাটি ব্যবসায়ী চক্র। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হলেও আবারও শুরু করে মাটি কাটা। স্থানীয়রা মনে করেন সামান্য জরিমানা করে চক্রকে আটকে রাখা সম্ভব নয়। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নতুন ব্রিজের ডানপাশে এক কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী হতে বালু তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে উজানচর ইউনিয়নের সদ্য বিলুপ্ত স্বেচ্ছাসেবকলীগ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন মনা সরদার ও ইসমাইল হোসেন একটি ও সাদ্দাম হোসেন একটি এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম অপর একটি ড্রেজার পরিচালনা করছেন। তারা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে দিনরাত দেদারছে মাটি তুলছেন। এ নিয়ে জমির মালিকরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও তাতে তোয়াক্কা করছেন না।
গত ঈদুল ফিতরের আগে মরা পদ্মা নদীর ফৈজদ্দিন মাতুব্বর পাড়ায় ড্রেজার দিয়ে মাটি তোলার অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মনোয়ার হোসেন মনা সরদারের দুইটি ড্রেজার মেশিন উপজেলা প্রশাসন ভেঙে দিয়ে তাকে জরিমানা করেছিল। তবে জরিমানার পরিমাণ ছিল মাত্র দুই হাজার টাকা।
যুবলীগ নেতা রবিউল ইসলাম দাবি করেন, তিনি স্থানীয় লিপু মেম্বারের তত্ত্ব¡াবধানে কাবিখা প্রকল্পের একটি সরকারী রাস্তা নির্মানের জন্য মাটি তুলছেন। এতে প্রশাসনের অনুমতি আছে।
ইসমাইল হোসেন ও মনোয়ার হোসেন মনা সরদার দাবি করেন, তারা জমির মালিকদের সাথে সমন্বয় করেই মাটি তুলছেন। তবে প্রশাসনের কোন অনুমতি নেই।
একইভাবে দেবগ্রাম পিয়ার আলীর মোড়ে লাল্টু, রফুর খেয়াঘাট এলাকায় শহীদসহ বিভিন্ন স্থানে নদী ও পুকুর খনন করে মাটি ব্যবসায়ীরা ড্রেজার ও ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি-বালু তুলছেন। উত্তোলিত বালি-মাটি বিভিন্ন ইটভাটা ও ব্যাক্তি-প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। তাছাড়া গ্রামীণ সড়কে এ সকল মাটি-বালু বহনকারী ট্রাক বেপরোয়া গতিতে চলায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।
জানা গেছে, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা-৪ এর (খ) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্য সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে কমপক্ষে ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, সরকারি বা বেসরকারি কোন কাজের জন্যই কাউকে নদী হতে বালু-মাটি উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ইতিপূর্বে এ ধরনের দুটি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করা হয়েছে। ভেক্ ুও ড্রাম ট্রাকের চালককে জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।