শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন

গোয়ালন্দে সম্মুখ যুদ্ধ ও প্রতিরোধ দিবস পালন গণহত্যার শিকার ২২ জনের শহিদী মর্যাদা ও দিবসটি সরকারিভাবে পালনের দাবি

মো. সাজ্জাদ হোসেন, গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥
  • Update Time : রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৬০ Time View

২১ এপ্রিল রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার সম্মুখ যুদ্ধ ও প্রতিরোধ দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল দিনটি ছিল বুধবার। ওই দিন কাক ডাকা ভোরে মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাট থেকে একটি গানবোট ও একটি কে-টাইপ ফেরি বোঝাই করে পাকবাহিনী প্রথম এসে নামে পদ্মা পারের গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর কামারডাঙ্গি এলাকায়। সেখান থেকে বাহাদুরপুর এলাকায় এগিয়ে আসলে স্থানীয় জনতার সহায়তায় ইপিআর, আনছার ও মুক্তি বাহিনী হালকা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। কিন্তু পাকবাহিনীর ভারি অস্ত্রের মুখে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায়। এ সময় হানাদারের বুলেটে প্রথম শহীদ হন আনছার কমান্ডার ফকীর মহিউদ্দিন। এছাড়াও শহীদ হন হাবিল শেখ ও ছবেদ আলী মন্ডল নামের আরো দুই ব্যাক্তি এবং গুলিবিদ্ধ হন বেশ কয়েকজন।

এরপর পাকবাহিনী পাশ্ববর্তী বালিয়াডাঙা গ্রামে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীর ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেখানে হানাদারের বুলেটে শহীদ হন ওই গ্রামের স্বাধীনতাকামী ২৪ জন নিরীহ নারী-পুরুষ। এদিন শহীদ হন মোকছেদ আলী শেখ, নিশিকান্ত রায়, মাছেম শেখ, জিন্দার আলী মৃধা, নায়েব আলী বেপারী, মতিয়ার বেগম, জয়নদ্দিন ফকির, কদর আলী মোল্লা, হামেদ আলী শেখ, কানাই শেখ, ফুলবড়ু বেগম, মোলায়েম সরদার, বুরুজান বিবি, কবি তোফাজ্জল হোসেন, আমজাদ হোসেন, মাধব বৈরাগী, আহাম্মদ আলী মন্ডল, খোদেজা বেগম, করিম মোল্লা, আমোদ আলী শেখ, কুরান শেখ, ধলাবড়ু বেগম, আলেয়া খাতুন ও বাহেজ পাগলা। পরবর্তিতে পাক বাহিনী গোয়ালন্দ বাজারে প্রবেশ করে বাজারে ব্যাপক অগ্নিকান্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ২১ এপ্রিল স্মরণে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে শহীদ পরিবারগুলোর উদ্যোগে শহীদদের নামফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তারা নিহত ২২ জনকে শহীদী মর্যাদা দেয়ার দাবি জানান।

এছাড়া বাহাদুরপুর গ্রামে স্থানীয়দের সহযোগিতায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, প্রতিরোধ যুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন গ্রামের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার জুয়েল বাহাদুর।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রতিরোধ যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার, রাজবাড়ীর যুদ্ধকালীন কমান্ডার বাকাউল আবুল হাসেম, যুদ্ধকালীন অপর কমান্ডার সিরাজ আহমেদ, গোয়ালন্দ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুস সামাদ মোল্লা, জেলা পরিষদ সদস্য মো. ইউনুছ মোল্লা, গোয়ালন্দ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের সভাপতি মো. ইসলাম মোল্লা, গোয়ালন্দ সম্মুখ যুদ্ধ ও প্রতিরোধ স্মৃতি মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য পরিষদের সভাপতি নাসির উদ্দিন রনি, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জুয়েল বাহাদুর প্রমূখ।

বক্তারা গোয়ালন্দের প্রতিরোধ যুদ্ধের এই গৌরবময় দিনটি নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে সরকারি-বেসরকারিভাবে আরো বৃহৎ পরিসরে উদযাপন করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। সেইসাথে এখানে নির্মানাধীন স্মৃতি ভাস্কর্যের অপূর্ণ কাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com