শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন

কেমন কাটলো দৌলতদিয়া যৌনপল্লী বাসিন্দাদের ঈদ!

মো. সাজ্জাদ হোসেন, গোয়ারন্দ প্রতিনিধি॥
  • Update Time : রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৫৬ Time View

দেশের বৃহত্তম রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলাধীন দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর অসহায় নারীদের কাছে আনন্দের পরিবর্তে ঈদ এসেছে কষ্টের কারণ হয়ে। অর্থকষ্টে তাদের বেশিরভাগই নিজেরা এবং সন্তানদের জন্য কিনতে পারেননি নতুন পোশাক। জুটছে না একটু ভালোমানের খাবার। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের অনুদানে কোনমতে পার করতে হয়েছে ঈদ।

যৌনপল্লীর বাসিন্দারা জানান, রোজা পালন উপলক্ষে যৌনপল্লীতে কমেছে লোকজনের সমাগম। আয় রোজগার নেই বললেই চলে। ঈদ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি সামান্য অনুদান মিললেও হাসি নেই যৌনজীবীদের মুখে। পুরো একমাস রমজান থাকায় যৌনপল্লীতে খদ্দের নেই। অতি কষ্টে জীবন পার করছেন তারা। বিগত দেড় বছর আগে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বেশিরভাগ যানবাহন পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার হয়। ফলে দৌলতদিয়া ঘাটে আগের মতো যাত্রীর সমাগম নেই। সেই সাথে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত ট্রেনের পরিমানও কমে যাওয়ায় দৌলতদিয়া ঘাটে দূরদুরান্ত থেকে পল্লীতে আসা লোকজনের সংখ্যা কমে গেছে আশংকাজনক ভাবে।

সরেজমিনে আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন যৌনকর্মী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে আমাদের আয়-রোজগার ছিলো অনেক। আবার রেলগাড়ি কমিয়ে দেওয়ায় খদ্দেরও অনেক কমে গেছে। পুরো রোজার মাসে যৌনপল্লীতে লোক নেই। অতি কষ্টে কাটছে আমাদের জীবন। ছেলেমেয়েদের পোশাক কিনে দেয়ার সামর্থ্য নেই আমাদের অনেকের।

এদিকে গত ৬ এপ্রিল বেসরকারি সংগঠন উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে যৌনপল্লীর ১৭’শ নারীকে একটি করে শাড়ী এবং ঈদের দিন রান্না করে খাওয়ার জন্য ঈদ উপহার সামগ্রী প্রদান করে। এছাড়া পরদিন ৭ এপ্রিল রবিবার সরকারিভাবে পল্লীর ৫’শ জন নারীকে ভিজিএফের ২০ কেজি করে চাউল বিতরণ করেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক ।

পল্লীর কয়েকটি সূত্র জানায়, এ সকল সহযোগীতা পল্লীর অসহায় নারীদের অনেক উপকারে আসবে। তবে এখানকার মাদকাসক্ত কোন কোন মহিলা এ সকল অনুদান হাতে পেয়ে বিক্রি করে দিয়ে মাদক সেবন করেছে।
সূত্র জানায়, অনুদানের সহায়তায় অসহায় নারীদের কোনরকম খাবারের ব্যবস্থা হলেও হাতে নগদ টাকা না থাকায় সন্তানদের জন্য অধিকাংশই তেমন কিছু কিনে দিতে পারেননি।

যৌনপল্লীর নারীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন অসহায় নারী-ঐক্য সংগঠনের সভানেত্রী ও উত্তরন ফাউন্ডেশনের সদস্য ঝুমুর বেগম বলেন, রোজার মাসে যৌনপল্লীতে তেমন খদ্দের আসে না। ফলে পল্লীর মেয়েদের আয়-রোজগারও তেমন থাকে না। এই মাসটা অনেকটা খেয়ে না খেয়েই তাদের কাটছে। তাদের অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান স্যার তার উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে এখানে ১৭’শ যোনকর্মী ও অসহায় নারীর মাঝে নতুন শাড়ী ও ঈদ উপহার হিসাবে সেমাই, চিনি, তেল, ডাউল, চাউল, গুড়া দুধ ইত্যাদি উপহার হিসেবে প্রদান করেছেন। ডিসি স্যারও ৫’শ জনকে চাল দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তবে হাতে নগদ টাকা না থাকায় অনেকে ছেলে-মেয়েদের নতুন পোশাক কিনতে পারেনি।

এ সম্পর্কে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, যৌনপল্লীর বাসিন্দারাও দেশের নাগরিক। অন্য সাধারণ মানুষের মতো তাদেরও ঈদের আনন্দ উপভোগ করার অধিকার রয়েছে। এ বিবেচনায় সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে ডিসি স্যার নিজে উপস্থিত থেকে পল্লীর বাছাইকৃত ৫’শ জন দুঃস্থ নারীকে ২০ কেজি করে চাউল বিতরন করেন। আশা করি এই অনুদান তাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com