রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের সাতোটা গ্রামে প্রায় ত্রিশটি পরিবারের সুপেয় পানির জন্য ভরসা ইদারাযুক্ত নলকূপে বিষ দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। যেকারণে ওই এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে মানুষ দূর দূরান্ত থেকে সংগ্রহ করছে খাবার পানি। রোববার গভীর রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা টিউবয়েলের ভেতরে বিষ দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সাতোটা গ্রামে যেসব নলকূপ রয়েছে প্রায় সবগুলোতেই হয় আর্সেনিক না হয় আয়রন। যা খাবার উপযোগী নয়। সুপেয় পানির জন্য কালুখালী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে পাঁচটি ইদারাযুক্ত নলকূপ স্থাপন করা হয়। প্রতিটি নলকূপের পানি ব্যবহার করে ৩০ থেকে ৪০টি পরিবার। রোববার গভীর রাতের কোনো এক সময় সাতোটা গ্রামের আজাহার উদ্দিনের বাড়ি সংলগ্ন ইদারাযুক্ত নলকূপটির ভেতরে দুর্বৃত্তরা বিষ প্রয়োগ করে।
আজহার উদ্দিন জানান, এই নলকূপটি থেকে এলাকার অন্ততঃ ৩০টি পরিবারের মানুষ পানি সংগ্রহ করে। বিষ দেওয়ার কারণে পরিবারগুলো পানির সংকটে ভুগছে। দুর্ভোগে পড়েছে এলাকার মানুষ। তিনি এর প্রতিকার দাবি করেন। সাতোটা গ্রামের রহিম মোল্লার স্ত্রী হীরা আক্তার জানান, তাদের বাড়ির পাশে ইদারা (কূপ) যুক্ত কল আছে। কলের ভেতরে কে বা কারা বিষ দিয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোয়ার জন্য পানি তুলে মুখে দিতেই গন্ধ পান। পানিতে বিষের গন্ধ পেয়ে কেউ আর পানি খায়নি। পরে নলকূপের হ্যান্ডেল খুলে দেন। বিষয়টি মেম্বারকে জানিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যানকে এখনও জানাননি। কমপক্ষে ২৫টি পরিবার এই নলকূপের পানি ব্যবহার করে। তাদের গ্রামের সবগুলো নলকূপের পানিতেই আর্সেনিক। যেকারণে কেউ সেগুলো ব্যবহার করেনা। এমতাবস্থায় বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে তাদেরকে পানি আনতে হচ্ছে।
একই গ্রামের ফজলু মোল্লার স্ত্রী আয়েশা আক্তার জানান, সকার বেলা তার চাচা শ^শুর মুখ ধুয়ে বাজারে যান। তিনি টের পাননি। এরপর রান্না করার চাল ও তরকারি ধৌত করেন। তার ননদ রনিতা তাকে বলেন, পানিতে কোনো গন্ধ পাচ্ছে কীনা। তিনি তরকারি শুঁকে বিষের গন্ধ পান। তিনি চাল ও তকরারি অন্য পানি দিয়ে ধুয়ে রান্না করেন। টিউবয়েলের কাছে গিয়ে দেখেন টিউবয়েলের উপরে যে পলিথিন ছিল সেটি খুলে ভেতরে বিষ ঢেলে দিয়ে বালতি দিয়ে ঢেকে রেখেছে দুর্বৃত্তরা।
কলেজছাত্রী পপি খাতুন জানান, তাদের গ্রামে খাবার পানির জন্য একটিমাত্র নলকূপে বিষ ঢেলে দেওয়ায় তারা প্রচন্ড সমস্যায় পড়েছেন। কালিকাপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার গোলাম মোস্তফা বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। ওই এলাকায় খাবার পানির জন্য একটিই মাত্র টিউবয়েল। ওই টিউবয়েলসহ পাশের পুকুরেও বিষ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অনেক ঘটনাই ঘটছে তাদের এলাকায়। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। প্রতিকারের জন্য কার কাছে যাবেন তাও বুঝতে পারছেন না। কালিকাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমান নবাব জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। কেউ তাকে কিছু বলেনি। কালুখালী উপজেলা গণস্বাস্থ্য প্রকৌশলের উপ সহকারী প্রকৌশলী রিপন চন্দ্র শীল বলেন, ওই এলাকায় প্রতিটি নলকূপেই আর্সেনিক ও আয়রন। যা খাবার উপযোগী নয়। যেকারণে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে রিওয়েল স্থাপন করা হয়। সেটিতে বিষ প্রয়োগের বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। বিষয়টি নিয়ে করণীয় সম্পর্কে তিনি জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন।