সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪ অপরাহ্ন

পানি

সুলতান উদ্দিন আহ্‌মেদ
  • Update Time : বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২
  • ১১৮ Time View

পানি
সুলতান উদ্দিন আহ্‌মেদ

সৃষ্টির মূল উপাদান মাটি, আগুন, বাতাস, এর মধ্যে পানি ও একটি। আমি রসায়নবিদ নই বলে পানির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষনে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে সাধারণ একজন মানুষ হিসাবে জগৎ জুড়ে পানির বিচিত্র রূপে ও বৈচিত্রময় নানামূখী ব্যবহার ও কার্যকারিতা নিয়ে ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। পানি খাদ্যের মত প্রাণীকূলের জীবন ধারণের এক অপরীহার্য উপাদান। শুধু খাবার খেলেই চলে না। খাবারের সঙ্গে কিংবা খাবারের পরে নির্দিষ্ট পরিমান পানি পান করতে হয়। তৃষ্ণার্ত মানুষ এক গ্লাস ঠান্ডা পানি পেলে তা তার দেহে মনে আনে বেহেস্তের শান্তি। মানুষের খাদ্য প্রস্তুতের জন্য জানি প্রয়োজন। পানি ছাড়া কোন রান্নাই সম্ভব নয়।

এছাড়া মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পানির অপরীহার্যতা অনস্বীকার্য। সামান্য একটি ট্যাবলেট খেতে গেলেও পানির প্রয়োজন হয়। ঝাড়ফুকের জগতেও পানির এক বড় ভূমিকা। আদিকাল থেকেই মানুষ রোগ বালাই এ পানি পড়া খেয়ে আসছে। কখনও কখনও দেহের ভিতরে অস্থিরতা কাজ করলে কিংবা মাথা গরম হলে মাথায় জানি দিতে হয়। জ্বরের উত্তাপে মানুষ মাথায় পানি নেয়। গোছলে তো পানি লাগেউ। সকল ধর্মের লোকদেরই পানি ছাড়া পবিত্র হওয়ার কোন উপায় নেই। জামা কাপড় বাসন কোসন পানি ছাড়া ধোয়া সম্ভব নয়। সবরকম পরিচ্ছন্নতা, সবরকম অপবিত্রতা থেকে আমরা মুক্ত হই পানির ব্যবহার দ্বারা। বাড়ির উঠানে কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সামনে ধূলা প্রশমনে পানি ছিটানো হয়। দোকানে হালকা পানি ছিটিয়ে অনেকে পবিত্রতার সূচনা করেন। শিশু ভূমিষ্ঠ হলে তাকে পানি দ্বারা পবিত্র করা হয়।

আগুন নেভানোর জন্য জানির প্রয়োজন। পাকা বাড়িঘর শিল্প কল কারখানা নির্মানে পানির প্রয়োজন। মানুষ সামান্য মূর্ছা গেলে চোখে মুখে হালকা জানি ছিটিয়ে সুস্থ করে তোলা যায়। জ্বরের উত্তাপে মানুষ মাথায় পানি নেয়, ভিজা গামছা দিয়ে জ্বরাক্রান্ত রোগীর শরীর মুছে দেওয়া হয়।

বিশেষ প্রক্রিয়ায় পানি বরফে রূপান্তিত করে মানুষ তা নানা কাজে ব্যবহার করে। অনেক সময় পানির কারণেও মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লে কেউ কেউ জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়ে। বর্ষার পানি অথবা তোলা পানিতে বেশীক্ষণ গোছল করলে অনেক ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

এমন প্রয়োজনীয় যে পানি তা থেকে অনেক ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হয়। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে নানা ভাবে পানিতে ডুবে মরার মর্মান্তিক ঘটনা অনেক। পানির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ছোট খাটো বিপদ ঘটে। অসাবধানতা বশতঃ ঘরের মেঝেতে, উছানে কিংবা পথে পানি পরলে অনেকে পা পিছলে আছাড় খেয়ে অনেক বিপত্তির জন্ম দেয়। একে অপরের গায়ে পানি ছিটাছিটির কারণে অনেক সময় নিজেদের মধ্যে ভূল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এমনকি হাতা হাতি পর্যন্ত হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক নদীর পানি গতি রোধের কারণে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে মনোমালিন্য হতে দেখা গেছে। বর্ষাকালে পানি ভয়াবহ বন্যার রূপ নিলে মানুষ এবং  জন্তজানোয়ারের চরম দূর্ভোগের কথা আমাদের সকলেই জানা। গলায় পানি বেধে গেলে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। আবার এই পানির কারণেই নাব্যতা সৃষ্টি হয়ে নদী সাগর মহাসাগরে নৌযান চলাচল করে গোটা বিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গতিশীল রেখেছে। পাট কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় করি থেকে পাট ছাড়ানোর জন্য । আবার শুকনো পাটে পানি পড়লে পাট পচে যায়। ফসলের মাঠে পানি দিলে ফসল দ্বিগুন তিনগুন, চতুর্গুন হয়।

মুসলিম বিশ্বে রোজার ইফ্তারিতে প্রথমে পানি মুখে দিয়ে রোজা ভাঙ্গার নিয়ম প্রচলিত। মৃত্যু পথযাত্রী আপনজনের মুখে উপাদেয় কোন খাবার নয়, পানি দিয়ে অন্তরের শেষ ভালোবাসা জানানো হয়। অন্তিম শয়নের আগে পানি দ্বারাই শবদেহ পবিত্র কার হয়। পানি ছাড়া জীবনে অস্তিত্ব সম্ভর নয়। পানি নিয়ে ভাবুন। ‘পানি’ পানির মত কোন সহজ বিষয় নয়। পানি সৃষ্টি রহস্যের মধ্যে আর এক গভীর রহস্য।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com