বাংলাদেশে আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে বলে মনে হচ্ছে। যেভাবে বিরোধীদলেরকয়েকজন সদস্যরাজপথে এবং সংসদের বাইরেও সংসদের ভিতরে যে ধরনের কথাবার্তা বলছেন তাতে মনে হয় তারা সংঘাতের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। গত ১৪ বছর বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পরপর তিনবার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছেন। তিনি সুস্থভাবে দেশ পরিচালনা করে আসছেন এবং দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথেদ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। দেশ আজ অর্থনীতিতে প্রায় স্বয়ম্ভর, খাদ্যেও স্বয়ম্ভর, দেশের শতভাগ পরিবারের মাঝে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে সরকার, যোগাযোগ ব্যবস্থায় যথেষ্ট উন্নয়ন, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটেছে, করোনাকে যেভাবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করেছি এবং একই সঙ্গে অর্থনীতিকে সক্রিয় রেখেছি গোটা বিশ্বের জন্য এটা একটা বিরল দৃষ্টান্ত। আমাদের উন্নয়নের গতি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাতে ২০৪১ সালের ভিতর আমরা একটা উন্নয়নশীল ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবো।আমাদের অর্থনীতি বিশে^ ২৫তম অর্থনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, আমাদের পার ক্যাপিটাল ইনকাম ২৮৪০ ডলার, আমাদের জিডিপি ৭.২%, আমাদের মুদ্রাস্ফীতি মোটামুটি ৭ এর মধ্যে রয়েছে। আমরা ৪ কোটি ৬৫ লক্ষ টন খাদ্য উৎপাদন করছি। এখনো প্রচুর খাবার মজুদ রয়েছে, আমরা পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প-নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করেছি।
এই সবকিছু দেখা সত্বেও বিরোধী দলমাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জোর করে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। তিনি সর্বশেষ পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, প্রায় চার বছর শেষ আরও এক বছরের মতো সময় আছে। নির্ধারিত সময় শেষ হলে এমনিই নির্বাচন হবে, কিন্তুবিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি বলছে তারা কোনো অবস্থাতেই এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। আসলে নির্বাচন তো সরকারের অধীনে হয়না। নির্বাচনকালীন সময়ে যে সরকার থাকে অলমোস্ট তারা কেয়ারটেকারের মত কাজ করে, তারা কোন বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন না, শুধুমাত্র অফিস ওয়ার্ক করেন, পলিসি লেভেলের কোন কাজ করেন না। আর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব তো নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন কিভাবে দায়িত্ব পালন করবে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হবে কিনা এবং তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে কিনা এটা শুধু সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না। বিরোধী দলের সহযোগিতা না হলে সরকার একাই সবকিছু করতে পারেন না। বিরোধীদল বলছে দিনের ভোট রাতে হয়, যদি এরকম ভাবে ভোট হয় তাহলে তারা ভোটে অংশগ্রহণ করবেনা। হতে পারে দু-একটা স্টে কেস যেখানে চুরি করে ভোট গণনা হতে পারে, হবে না এ কথা বলা যাবে না কিন্তু বিগত নির্বাচনগুলোতে লক্ষ লক্ষ লোক লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছে। আওয়ামীলীগের নিজস্ব ভোট তো ৪০-৪৫%।
সেইভোটার যদি উপস্থিত হয় ওনিরপেক্ষ ভোটাররাও যদি ভোট দেয় তাহলেতো প্রায় ৫০-৫৫% এর মতো লোক নির্বাচনে ভোট দিয়েছে আর বিএনপি ৩০% লোক প্রায়অনুপস্থিত রয়েছে এবং ভোট তো কিছু কম হবেই, স্বাভাবিকভাবে তো ভোট দেওয়া হচ্ছে না। যেভাবে বিরোধী দল নির্বাচনের বিরোধিতা করছে, রাজপথের সহিংসতা করছে, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়নি, কখনও নির্বাচন বর্জন করেছে ও কখনো নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য এইসব কিন্তু তারপরও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জিততে পারেনি। তাদের বক্তব্য হচ্ছে নির্বাচনে তারা যদি জিতে তাহলে নির্বাচন ফেয়ার হয়েছে, আর যদি নির্বাচনে হেরে যায় তাহলে নির্বাচন কারচুপি হয়েছে। তাহলে এদেরকে জনগণ কিভাবে ক্ষমতায় বসাবে? আমাদের সিট ছেড়ে দিয়ে, আমাদের ভোট তাদের দিয়ে তাদেরকে নির্বাচিত করব তারা কি তাই মনে করছে? আর তাই যদি মনে করে থাকে তাহলে নির্বাচনে তারা বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করুক, জনসমর্থন আদায় করুক।
তারা বলছে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ না, তা আপনারা এসে নিরপেক্ষ করুন, সহযোগিতা করেন। সরকার গণতান্ত্রিকভাবে ও সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছেন এরপরেও যদি আপনাদের কোন কিছু বলার থাকে তো সে সময় বলতেন, তখন তো কিছু বলেননি, আর এখন বলছেন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ না। তাদের অধীনে আমরা নির্বাচন করব না। আপনারা বলছেন জোরপূর্বক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। আবার মাঝে মাঝে বলেন এই দুইদিন পরেই, সাতদিন পর সরকার বিদায় নেবে, এত দুর্বল সরকার শেখ হাসিনা নয়। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারকে যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি তারা সকলেই সমর্থন করে। তারা নৈতিক কারণে এ সরকারকে সমর্থন করে। আর আপনারা কাদের নিয়ে করছেন? জামাতকে নিয়ে, ১৯৭১ সালের আর্চ রাইভাল বামপন্থী, যারা মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুকুরের লড়াই বলে অভিহিত করে তারা আপনাদের সাথে এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি মৌলবাদী শক্তি তারা আপনাদের সাথে।যারা বাংলাদেশে বিশ্বাস করেনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না তারা ক্ষমতায় গেলে আজ হোক, কাল হোক এই বাংলাদেশে জামাত-ই ইসলাম কায়েম করবে।এই বাংলাদেশে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বেঁচে থাকতে এটা হতে দেওয়া হবে না। শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক তিনি সরকারপ্রধান এবং তিনি প্রয়োজনবোধে আবারও জনগণকে সাথে নিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হবেন। তিনি যে অগ্রগতি করেছেন তা গরীব দুঃখী মানুষের জন্য। তারা যদি ভোট দেয় তাহলে কমপক্ষে শতকরা ৭৫% ভোট নৌকায় পড়বে এবং শেখ হাসিনার পক্ষে পড়বে। সুতরাং আপনারা জোরপূর্বক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাবেন আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ও মুক্তিযোদ্ধারা তা বসে বসে দেখবে এটা যেন চিন্তা করা ঠিকহবে না।
সংঘাতের পথে যাবেন না, রাজপথে সন্ত্রাসী কায়দায় নামবেন না, আসুন নির্বাচনে আপনারা সাজেস্ট করুন নির্বাচনকে কি করে আরও নিরপেক্ষ করা যায়, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত করা যায়, আপনারা নির্বাচনে আসুন,এদেশে আরবিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না। আপনার নির্বাচনে এসে যদি বিজয়ী হন, জনগণ যদি আপনাদের ভোট দেয় আপনার সরকার গঠন করবেন। শেখ হাসিনা হাসিমুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন। তিনি তো বলেছেন জনগণ না চাইলে তিনি কখনোই ক্ষমতায় থাকবেন না। তিনি রাজনীতি করেন এদেশের গরীব-দুঃখী মানুষের জন্য, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করার জন্য, ক্ষমতা তাঁর লক্ষ্য নয়। কিন্তু প্রয়োজন এ কারণেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আপনারা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। এমতাবস্থায় শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে সরে যেতে পারেন না।তবে নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি সেই কাজটি করবেন। জোর করে, ষড়যন্ত্র করে, অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার বাসনা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেই।
এসএ মালেক, কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ