প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাগর সেন স্মরণে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে রাজবাড়ীতে। বুধবার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান। রাজবাড়ী লেখক পাঠক কেন্দ্রের আয়োজনে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাগর সেন জন্মোৎসব পরিষদের আহ্বায়ক রণজিৎ সরকার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট দেবাহুতি চক্রবর্তী, কবি নেহাল আহম্মেদ, সংগীত শিল্পী স্বপন দত্ত।
বক্তারা বলেন, সাগর সেন ছিলেন একজন প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী। সাগর সেন ১৯৩২ সালের ১৫ মে বাংলাদেশের রাজবাড়ীর বানিবহে জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে রাজবাড়ীতে। একজন আদর্শ সঙ্গীতশিল্পীর সমস্ত গুণ ছিল তার মধ্যে। তার সময়জ্ঞানও ছিল অত্যন্ত প্রখর। তাকে দিয়ে ঘড়ির সময় মেলানো যেত। তার বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন ধরনের গান শোনার শখ ছিল। ইংরেজি, গ্রিক, জার্মান ইত্যাদি ভাষার গানও শুনতেন। চিন্তা করতেন কীভাবে সেই সঙ্গীত শৈলী সুচিন্তিত, সাবলীল এবং মার্জিতভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবকে অক্ষুন্ন রেখে প্রয়োগ করা যায়।
তিনি শুধুমাত্র একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রতিভাই নন, তিনি ছিলেন একাধারে সঙ্গীত-পরামর্শদাতা, আয়োজক, সঙ্গীত পরিচালক এবং সর্বোপরি একজন মানবদরদী মানুষ। নিজের আয়োজিত বহু চ্যারিটেবল পাবলিক ফাংশনের মাধ্যমে তিনি অক্লান্তভাবে জনহিতকর কাজের প্রেক্ষিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। কত মানুষকে নিঃশব্দে কত দান করেছেন তিনি, পরিবারের কাউকে কখনও জানতে দেননি। তার বহু ছাত্র ও অসংখ্য অনুরাগীদের কাছে তিনি ছিলেন ঈশ্বর তুল্য মানুষ, একজন পথ-প্রদর্শক, একজন অভিভাবক, একজন পরহিতবর্তী ব্যক্তিত্ব।
খ্যাতির মধ্যগগনে থাকাকালীনই তিনি ভয়াবহ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যেও অদম্য উদ্যমে বিভিন্ন ফাংশন ও গানের রেকর্ডিং করেছেন তিনি। কিন্তু এক সময় মরণব্যাধি তাকে গ্রাস করে। প্রায় দেড় বছর লড়াইয়ের পর এক বিস্ময়কর সঙ্গীতজীবন হঠাৎ করেই স্তব্ধ হয়ে যায়। মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে ১৯৮৩ সালের ৪ জানুয়ারি এই অসামান্য সঙ্গীত প্রতিভা মারা যান।
আলোচনা শেষে রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন অমিতা চক্রবর্তী, স্বপন কুমার দত্ত, তাপস কর্মকার, রণজিৎ সরকার, সুশীল কুমার রায় প্রমুখ।