মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

পদ্মার বুকে চরে ॥ মাছ সংকটে জেলেদের দুর্দিন ইলিশের ঐতিহ্য হারাচ্ছে গোয়ালন্দ

মো. সাজ্জাদ হোসেন, গোয়ালন্দ ॥
  • Update Time : রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩
  • ১১৭ Time View

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা-যমুনায় ইলিশের আকাল। নদীতে ডুবো চরের কারণে নাব্যতা সৃষ্টি হয়েছে। মাছ না থাকায় অনেক জেলে জাল গুটিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এমন আকালের সময় সরকারি ভাবে জেলে নিবন্ধন তালিকা থেকে প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধন বাদ পড়ার অভিযোগ করেছে অনেক জেলে। তবে মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধন তালিকা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

মাছের রাজা ইলিশ। পদ্মা নদীর মিঠা পানির সুস্বাদু ইলিশ মানে জিভের ডগায় জল আসা। গোয়ালন্দের পদ্মার ইলিশের ইতিহাস দেশজুড়ে সমাহিত। এক সময় যেখানে পদ্মা নদীতে জাল ফেললে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়তো, এমনকি রূপালী ইলিশ দেশের গন্ডি পেরিয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থেকে ট্রেন যোগে যেতো ভারতের কোলকাতাসহ অন্যান্য দেশে। লাফিয়ে বেড়াতো পুরা ভারত বর্ষ জুড়ে।

নদীতে নাব্যতা সংকটের পরিকল্পনা না থাকায় কালের প্ররিক্রমায় প্রবাহমান উত্তাল পদ্মা নদীর সীমানা যেমন ছোট হয়ে আসছে, তেমনি নদীতে ধীরে ধীরে ইলিশ মাছও কমে যাচ্ছে। এক সময় উত্তাল ঢেউয়ের দোলায় দুলতো পদ্মা নদী। পানিতে থৈ থৈ করতো এপার থেকে ওপার পর্যন্ত। আর এখন সেই নদীর মাঝে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। গভীরতা নেই বললেই চলে। পদ্মা নদীতে গভীরতা না থাকার কারণে আগের মতো ইলিশ ধরা পড়ছে না বলে জানিয়েছেন এখানকার জেলেরা।

সরজমিনে দৌলতদিয়া ঘাটের ছাত্তার মেম্বার পাড়া ও কয়েকটি ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর জেলেরা মাছ ধরে একে একে নৌকা নিয়ে ঘাটে ফিরছেন। রাতের ধরা মাছ তারা বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। সারারাত জাল টেনে ধরা মাছ দেখে জেলেরাই হতাশ। কারণ এ মাছ বিক্রি করে তাদের হাজিরাই উঠছে না। অনেকে ট্রলারের ওপরে কেউ খাবারের জন্য রান্না করছেন আবার কেউ পরস্পরের সঙ্গে গল্প করে অলস সময় পার করছেন।

ঘাটে থাকা জেলে কালিদাস হালদার বলেন, সারাদিন নদীতে জাল ফেললেও কোনো ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আড়ৎদারদের কাছ থেকে নেওয়া দাদন পরিশোধ করতে না পেরে ঋণের বোঝা আরো বেড়ে যাচ্ছে, তাই অনেক জেলে জাল গুটিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার জেলে শিব প্রসাদ হালদার বলেন, আমি এই পদ্মা নদীতে মাছ ধরি ২৫ বছর। এ বছর দেখছি নদীতে ইলিশ মাছের খুবই আকাল। তার পর নদীতে গভীরতা নেই। সারা দিন নদীতে জাল বেয়ে ১ থেকে ২ কেজি জাটকা ইলিশ পাওয়া যায়। বড় কোন ইলিশ নদীতে পাওয়া যায় না। মনের দুঃখে অনেকেই নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না। বেকার ও অলস সময় কাটাচ্ছেন।

পাবনা জেলার ঢালার চর এলাকার আরেক জেলে কোরবান শেখ বলেন, সরকারি ভাবে জেলে নিবন্ধন তালিকা হলেও প্রকৃত অনেক জেলে নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। মাছ না পাওয়াতে তাদের সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাটের মাছ ব্যবসায়ী চাঁদনী -আরিফা মৎস ভান্ডারের স্বত্বাধীকারি মো. চান্দু মোল্লা বলেন, ‘আমরা জেলেদের ওপর নির্ভরশীল। তাঁরা যদি মাছ না পায় তাহলে আমরা কীভাবে মাছ কিনব, আর কীভাবে এই মাছ অন্যত্র বিক্রি করে ব্যবসা করব? তাঁরা যেমন মাছ না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হন, ঠিক তেমনি আমরাও একই ভুক্তভোগী।

গোয়ালন্দ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার জামান সাবু বলেন, পদ্মায় ইলিশসহ অন্যান্য মাছের আকাল চলছে। পানির গভীরতা নেই। নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি ও স্রোত নেই। ইলিশ মাছ গভীর পানির মাছ। বড় ইলিশ, রুই পাঙ্গাশ মাছসহ বড় মাছের চলাচলের জন্য নদীর গভীরতা প্রয়োজন।

প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো জেলে নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়লে তারা নতুন করে আবেদন করলে তাদের কে নিবন্ধন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com