দেশে চলমান দাপদাহ উপেক্ষা করে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় বোরো ধান কাটার ধুম লেগেছে। ধান কাটা ও মাড়াই চলছে পুরোদমে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বোরো ধানের ক্ষেত ফাঁকা হয়ে যাবে। মাড়াই শেষে ধান উঠবে কৃষকের গোলায়। সবমিলিয়ে বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় হাসি ফুটেছে এ উপজেলার কৃষকদের মুখে। তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান কাটা ও সংগ্রহের কাজে। অন্যদিকে অতিরিক্ত গরমে কৃষকদের কষ্ট হলেও ধান কেটে মাড়াই কাজ করছেন তারা। তাদের সঙ্গে কৃষাণীরাও একযোগে কাজ করছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিস্তীর্ণ জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগবালাই কম থাকায় ধানের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে এবার। গ্রামের যেদিকেই তাকানো যায়, শুধু ধান আর ধান। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই পুরোদমে বোরো ধান কাটার ধুম পড়ে গেছে। ধান কাটা, মাড়াই, সেদ্ধ, শুকানোসহ আনুষঙ্গিক কাজে কৃষাণ-কৃষাণীসহ দিনমজুররাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৪ হেক্টর জমিতে। ফলে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়েছে ৩৬০ হেক্টরের মতো। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর এক মণ ধানের দাম ছিল ৯’শ থেকে ১ হাজার টাকা। এবার সেখানে ১২’শ টাকা থেকে ১৫’শ হাজার টাকা। অর্থাৎ ধানের দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে কৃষকেরা ধানের এমন ন্যায্য দাম কখনো পাননি! ধানের এমন দাম অব্যাহত থাকলে ধানের আবাদ আরো বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড তোরাপ শেখের পাড়া এলাকার কৃষক ও তরুণ কৃষি উদ্যক্ততা হুমায়ন আহমেদ বলেন, ‘আমি উপজেলা কৃষি বিভাগ হতে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনায় চলতি বোরোর মৌসুমে ৬০ বিঘা অর্থাৎ ২০ একর জমিতে ৮ প্রজাতির ধান চাষ করেছি। জাতগুলো হলো- ব্রি বঙ্গবন্ধু -১০০, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৪, ব্রি-৮৮, ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২, ব্রি-৫৮ ও ব্রি-২৮। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু ১০০ জাতের ধানটি ৬ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। তার প্রতি বিঘা জমিতে ১৫-১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন প্রতি বিঘা জমিতে ২৫-৩০ মণ ধান পাবেন। তবে এবছর বীনা-২৫ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি এবার বিঘায় (৩৩ শতাংশ) ৩০ মন ধানের বেশি উৎপাদন হবে। তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমি শ্রমিক নিয়ে ধান কাটার কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমার ধানের ফলন ভালো হওয়ায় অন্যান্য কৃষকেরা আরও অনুপ্রাণিত হয়েছে। আমি আগামী বছরে ধানের চাষ আরও বাড়িয়ে দেব। এমনকি এ মৌসুমের ধানগুলো উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে বীজ হিসেবে বিক্রি করব।’
উজানচর ইউনিয়নের ফৈইজদ্দিন মাতব্বর পাড়া গ্রামের কৃষক নাসির সরদার বলেন, এবার ৫ একর জমিতে তিনি বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। বাজারে ন্যায্যমূল্য পেলে ধানের ভর্তুকি দিতে হবে না। চর কর্ণেশনা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী, নায়েব আলীসহ অনেকেই জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর তাদের বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকনউজ্জামান বলেন, মৌসুমের শুরুতে সরকারিভাবে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এ উপজেলায় কৃষকদের প্রায় পনেরো’শ কৃষকের মাঝে উফসি ধানের বীজ, ডিএমপি সার ও এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। ফলন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগের তদারকি মাঠপর্যায়ে থেকে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। তারপর এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও ফসলে পোকার আক্রমণ এবং রোগবালাইয়ের প্রকোপ না থাকায় বোরোর ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটার কাজ শুরু করেছেন কৃষকেরা। মে মাসের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছি।