রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চরাঞ্চলের একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ রাস্তার কাজ প্রায় এক বছর ধরে ফেলে রেখেছে ইমতিয়াজ আছিফ এম এ ইঞ্জিনিয়ারিং (জাভা) নামে ফরিদপুরের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এতে করে প্রচন্ড ধুলোবালি ও ইট-পাথরের ঝাঁকুনিতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও যানবাহন চালকসহ স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা।
গোয়ালন্দ উপজেলা শহর ও দৌলতদিয়া ঘাটের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী ৮ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘের রাস্তাটির কাজ শেষ করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে গত এক বছরে এলজিইডি হতে অন্তত ৬/৭ টি চিঠি দিয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনই গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় চরমভাবে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন এলাকার জনসাধারণ।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, উত্তর দৌলতদিয়া এন এইচ ডব্লিউ উজানচর জিসি ভায়া চর দৌলতদিয়া রাস্তাটির দৈর্ঘ ৮’৬৬ কিলোমিটার। ১৩ কোটি ৪৮ লক্ষ ৩৬ হাজার ৯৮৬ টাকা ব্যায়ে ১৮ ফুট চওড়া করে রাস্তাটি নির্মাণের জন্য নিযুক্ত হন ইমতিয়াজ আছিফ এম এ ইঞ্জিনিয়ারিং (জাভা) নামে ফরিদপুরের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর শুরু হওয়া কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ। ইতিমধ্যে রাস্তার বিভিন্ন স্হানে ৯ টি ছোট ব্রিজ ও কালভার্ট তৈরী করা হয়েছে। অধিকাংশ এলাকাজুড়ে ডব্লিউএমএম এর কাজ হয়েছে। তাবে দুই পাশে মাটির কাজ ও গাইডওয়ালের কাজ এখনো শেষ হয়নি। শুরু করা হয়নি কার্পেটিংয়ের কাজ। ভাঙ্গাই হয়নি রাস্তার অনেক জায়গার পুরোনো পিচ।
এমতাবস্থায় প্রচন্ড খড়া ও রোদে ওই রাস্তাজুড়ে প্রচন্ড ধুলোবালির সৃস্টি হয়ে রাস্তার দুইপাশের শতশত পরিবার, সাধারণ যাত্রী ও চালকরা স্বাভাবিকভ শ্বাস নিতে পারছে না। রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বড় বড় ইট ও পাথরের কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না যানবাহন। ঘনঘন নষ্ট হচ্ছে হালকা যানবাহনের যন্ত্রাংশ। উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য রাসেল আহমেদ জানান, প্রায় ১ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এতে করে চরের হাজার হাজার মানুষ দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রাস্তার ধুলোবালির মধ্য দিয়ে চলতে চলতে মানুষ অসুস্হ্য হয়ে পড়ছেন। আমরা বিভিন্ন স্থানে বহুবার সমস্যার কথা জানিয়ে আসছি। কিন্তু তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে আমরা এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের কথা ভাবছি। আ. মজিদ নামে গোয়ালন্দ শহরের এক ব্যাক্তি জানান, কিছুদিন আগে তার গর্ভবর্তী পুত্রবধু চর দৌলতদিয়া বাবার বাড়ি হতে এই রাস্তা দিয়ে অটোরিক্সায় চড়ে শহরে আসছিল। কিন্তু অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে তার গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে।
দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের শিক্ষক মোতালেব হোসেন বলেন, রাস্তার পাশে তার বাড়ি হওয়ায় ধুলোবালিতে ঘরবাড়ির উপর আস্তরন পড়ে গেছে। ধুলোয় বাড়ির খাবার-দাবার বিছানাপত্র নোংরা হয়ে যায়। একটা অসহনীয় অবস্থার মধ্যে আছি আমরা।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, রাস্তাটির কাজ গড়ে ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বিল পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। কার্পেটিংসহ অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে গত এক বছরে ৬/৭ টি চিঠি দিয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রতিবারই তারা কাজ শেষ করার কথা বলে। আশা করছি চলতি মাসেই তারা অবশিষ্ট কাজ শুরু করবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিকের মুঠোফেনে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। যে কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।