শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১২ পূর্বাহ্ন

পাংশা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের চাঁদাবাজি মামলার আসামি পৌর কাউন্সিলর তাজুল ১দিনের রিমান্ডে

মোক্তার হোসেন, পাংশা ॥
  • Update Time : সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২
  • ১০৪৭ Time View

রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন বিশ্বাসের পাংশা মডেল থানায় দায়েরকৃত চাঁদাবাজির মামলার ১নং আসামী পাংশা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর তাজুল ইসলামকে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার ১দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন রাজবাড়ীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। বুধবার আদালতে ৫দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. শহিদুল ইসলাম। আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়।

সোমবার আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তার বক্তব্যে বলেন, আসামী মো. তাজুল ইসলাম এজাহারনামীয় ১নং আসামী। আসামী পাংশা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। এই আসামী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এবং তাজুল বাহিনীর প্রধান। আসামীর বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলা আছে। আসামীকে চাঁদা আদায় পূর্বক অফিস ভাংচুর করে ক্ষতিসাধন করার অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামী মো. তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, অজ্ঞাতনামা আসামী শনাক্তপূর্বক গ্রেফতার, চাঁদা নেয়ার টাকা এবং চাঁদা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের স্বার্থে আসামীকে ৫দিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। আদালত সার্বিক পর্যালোচনায় আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে মামলার মূল রহস্য উদঘাটিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে মর্মে প্রতিয়মান হওয়ায় আসামী মো. তাজুল ইসলামের ১ (এক) দিন পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সোমবার আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অনুমতি প্রদান করা হয়। আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদকালে রিমান্ড বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের সর্বশেষ নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সতর্কতার সাথে নির্দিষ্ট চারটি শর্তাবলী পালন পূর্বক আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

সোমবার বিকেল ৫টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাংশা মডেল থানার এসআই মো. শহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ১দিনের রিমান্ডে আসামী তাজুল ইসলামকে পাংশা মডেল থানায় নেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক সোমবার আসামী তাজুল ইসলামকে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক দ্বারা ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়।

সূত্রমতে, পাংশা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও পাংশা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জালাল বিশ্বাসের দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় পাংশা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম (৩৫) ও পাংশা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ নেতা ফজলুল হক ফরহাদ (৪০) কে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করে পাংশা মডেল থানা পুলিশ। কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম পাংশা পৌরসভার কুড়াপাড়া গ্রামের রফিক খালাসীর পুত্র। যুবলীগ নেতা ফজলুল হক ফরহাদ পাংশা পৌরসভার নারায়নপুর গ্রামের মৃত তোফাজ্জেল হোসেনের পুত্র। বুধবার (১৩ এপ্রিল) পাংশা মডেল থানা থেকে আসামীদের রাজবাড়ী জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। মামলা নং ৫, তাং ১২/০৪/২০২২ ইং। ধারা ১৪৩/৩৮৫/৩৮৬/৪২৭/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০। মামলায় তাজুল ইসলাম, ফজলুল হক ফরহাদ, রুবেল, হৃদয় ঠাকুর, গৌতম কুমার, জিদান ও মুন্নুকে এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়।

সোমবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে পাংশা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও অত্র মামলার ১নং আসামী তাজুল ইসলামের বড় ভাই মো. জহির উদ্দিন বলেন, আমার ভাই তাজুল ইসলাম গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তিনি বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রতিপক্ষের লোকজন দুর্বৃত্তদের সংগঠিত করে তাজুল ও আমাদের পরিবারের লোকজনকে নানাভাবে ক্ষতিসাধনের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাজুল ইসলাম অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পাংশা পৌরসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়। তিনি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী সবার সুদৃষ্টি কামনা করেন।

যুবলীগ নেতা ফজলুল হক ফরহাদের ভগ্নিপতি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ফজলুল হক ফরহাদ পাংশা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক ছিলেন। এ বছর জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত পাংশা পৌরসভার নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয় এবং তাকে যুবলীগ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। ফরহাদ কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতৃবৃন্দের কাছে তার সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান জালাল বিশ্বাসের দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। গত সোমবার পাংশা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরে ব্রীজ নির্মাণের সিডিউল ক্রয় করতে গেলে ভাইস চেয়ারম্যান জালাল বিশ্বাস সিডিউল ক্রয়ে বাধা দেয় এবং ফরহাদকে হুমকি দেয়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান। তিনি বলেন, কোন প্রভাবে প্রভাবিত না হয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হলে চাঁদাবাজির মামলা মিথ্যা প্রমাণ হবে। মো. নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, জালাল বিশ্বাস তার মামলায় অভিযোগ করেছেন, গত ১০ এপ্রিল দুপুর আনুমানিক পৌনে দুইটার দিকে পাংশা কলেজ মোড়ে জেলা পরিষদের লিজ নেওয়া তার জমিতে এসে আসামীরা ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনা সত্য নয়। ১০ এপ্রিল জালাল বিশ্বাস কখনই কলেজ মোড়ে যায় নি। জালাল বিশ্বাস ওই দিন সকালে পাংশা মডেল থানায় একটি অনুষ্ঠানে এবং দুপুরে পাংশা উপজেলা পরিষদ হলরুমে অপর একটি মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com