প্রাক্তন সেনা সদস্য রাজবাড়ী জেলার সন্তান নজরুল ইসলাম (৪৭) রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে নিহত হয়েছেন। দীর্ঘ সাত মাস নিখোঁজ থাকার পর সম্প্রতি তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে পরিবারকে।
নিহত নজরুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চর রামকান্তপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে। নজরুল বাংলাদেশ সেনা বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত একজন ল্যান্স কর্পোরাল ছিলেন। অবসরে যাওয়ার আগে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে (কঙ্গো) ১৮ মাস দায়িত্ব পালন করেন। নজরুল ইসলামের চার জন কন্যা সন্তান রয়েছে। নজরুলের মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, সেনাবাহিনী থেকে ২০২০ সালে অবসরে যাওয়ার পর নজরুল ইসলাম ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তবে ব্যবসায় লোকসান গুনে আর্থিক সংকটে পড়ে যান তিনি। এক পর্যায়ে সময় স্থানীয় এক দালাল ফরিদ হোসেনের মাধ্যমে রাশিয়ায় নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির প্রলোভনে তিনি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর চাকরির বদলে তাকে সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে পাঠানো হয়। এপ্রিলের শেষদিকে পরিবারের সঙ্গে সর্বশেষ ফোনে কথা হয় তার। এরপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে খোঁজ নেওয়া হলেও কোনো তথ্য মেলেনি। অবশেষে গত বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নজরুলের পরিবারকে জানানো হয়, নজরুল ইসলাম ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
নিহতের স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন, “আমার স্বামী অবসরের পর বিদেশ যেতে চেয়েছিলেন। আমি নিষেধ করেছিলাম। বলেছিলাম, আমরা একসাথে থাকব। কিন্তু সে বলল রাশিয়ায় ভালো চাকরি দিয়েছে। এখন সে নেই, আমি চার মেয়েকে নিয়ে কিভাবে বাঁচব?
নজরুলের বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট রহিম বলেন, “দালাল ফরিদ আমার ভাইকে প্রলুব্ধ করে রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। সরকার যেন অন্তত লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করে।”
অভিযুক্ত দালাল ফরিদ হোসেন দাবি করেন তিনি নজরুলকে রাশিয়া পাঠান নি। তিনি জানান ” বিকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে সে গেছে। আমি শুধু যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া হক জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।