গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নে অতিদরিদ্রদের কর্মংস্থান কর্মসূচির আওতায় রাজবাড়ী জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে মাটির কাজ শেষ হয়েছে গত বুধবার ৭ জুন তারিখে। কিন্তু এ কর্মসূচির আওতায় রাজবাড়ী জেলা সদরের মূলঘর ও দাদশী ইউনিয়নের অতীত দরিদ্র কর্মসংস্থান কর্মসুচি প্রকল্পে তালিকার অর্ধেক জনবল দিয়ে কাজ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকারী হিসেব অনুযায়ী যে পরিমান জনবল থাকার কথা সেখানে নাম থাকা সত্বেও অধিকাংশ কর্মজিবী মানুষদের প্রকল্প স্থানে পাওয়া যায়নি। আর যারা প্রতিদিন কাজ করছেন সে কজন হাতেগোনা কর্মজীবি পাচ্ছেন টাকা। এদের মধ্যে যাদের তালিকায় নাম আছে কিন্তু কাজ করেন না তারাও ২০ দিন পর পর টাকা তুলতে পারছেন। ২০ দিন পর ৮ হাজার টাকা তাদের মোবাইল নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়। আর যাদের নামে বেনামে নাম দেওয়া হয়েছে তাদের বিকাশ নম্বরের সম পরিমান টাকা বিকাশের মাধ্যমে আসে। এভাবেই চলছে অতিদরিদ্রদের ৪০ দিনেরও কর্মসংস্থান কর্মসূচি। মূলঘর ইউনিয়নে দুটি প্রকল্পে মোট ৫৯ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও এর মধ্যে বাঘিয়া মোসলেমের বাড়ী হইতে পাথরগাড়া পর্যন্ত নারী পুরুষ মিলে ২৯ জন থাজার কথা থাকলেও সেখানে ১৬ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। এ স্থানে শ্রমিকের সংখ্যা নেই ১৩ জন। ২য় প্রকল্পের বাঘিয়া শিরাদহ মুন্নাফের বাড়ী থেকে বেজকোলা খাল পর্যন্ত মাটির রাস্তা সংস্কারে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলপও সেখান কাজ করছে মাত্র ১৩ জন।এ স্থানেও শ্রমিক নেই ১৭ জন।শুধু এ দুই প্রকল্পে শ্রমিক অনুপস্থিত ৩০ জন।এ ইউনিয়নে গত বছর কাজ করেও ২০ দিনের ৮ হাজার টাকা করে ৯ জন শ্রমিক এখনও তাদের কাজের টাকা পায়নি। এ স্থানের শ্রমিক অনিতা রানী সাহা বলেন, আমি গত বছর কাজ করে আজও ২০ দিনের ৮ হাজার টাকা পাইনি। আমরাতো গরিব মানুষ আমাদের টাকা না দিলে কি করে সংসার চলাবো,তার মত আরো বেশ কয়েকজন নুরজাহান, হাসিনা, আকবর,ময়না মরিয়ম হালমা,মনেরা রাবেয়া তারা টাকা না পাওয়ার আক্ষেপ করেন। বলেন আমরা সারাদিন কষ্ট করে কাজ করি অথচ কাজের টাকা পাইনা। আর যারা কাজ করেনা তালিকায় নাম আছে তাদের টাকাতো ঠিকই পাইছে।
এ বিষয়ে মূলঘর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শেখ মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, গত প্রকল্পে এ ইউনিয়নের ১৫ জন শ্রমিক ২০ দিনের ৮ হাজার করে টাকা আজও পায়নি। এটা উপজেলার গাফিলতির কারনে হয়েছে। এ কারনে ওই একই তালিকার শ্রমিকেরা নিয়মিত কাজ করেনি। চলতি প্রকল্পের ৫ জনের নাম কাটা হয়েছে অনুপস্থিতির কারনে।
এদিকে দাদশী ইউনিয়নেও অতিদরিদ্র কাজে একই অবস্থা। সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের তোফাজ্জেলের বাড়ি থেকে হামিদ ফকিরের বাড়ী পর্যন্ত নতুন মাটির রাস্তা নির্মান করার কাজ হয়েছে। সেখানে ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা অনুযায়ী ৩৩ জন শ্রমিক থাকার কথা থাকলেও সেখানে প্রথম থেকেই ১৯ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়। বাকিদের নাম শুধু তালিকায় রয়েছে বাস্তবে নেই। এ ইউনিয়নের দ্বিতীয় অন্য একটি প্রকল্পের একই অবস্থা দেখা যায়। এ ইউনিয়নের গত প্রকল্পের ১৩ জন শ্রমিকের ৪০ দিনের ১৬ হাজার টাকা করে পাওনা অর্থ আজও পানি তারা। এতে অসহায় এসব মানুষ কাজ করে টাকা না পেয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। এ স্থানে কাজ করা আনেয়ার সেখ জানান, এখানে নতুন যে রাস্তা তৈরী করছেন প্রথম থেকেই ১৯ জন কাজ করছে। বাড়তি কোন শ্রমিক একদিও কাজ করেনি। গত ৪০ দিন কাজ করেও ১৩ জন এখনও ১৬ হাজার টাকা করে বকেয়া টাকা না পািয়ার অভিযোগ করেন। তার মত আরো শ্রমিকরা একই অভযোগ করেন।
দাদশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার শেখের ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের সহকারী প্রকৌশলী বিজয় কুমার প্রামানিক বলেন, যে যে স্থানে শ্রমিকের সংখা কম রয়েছে সেখানে আমরা তালিকার থেকে অনুপস্থিতির নাম কেটে চাহিদা পাঠাবো। কাজ না করা শ্রমিকদের নাম বাদ পড়বে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মার্জিয়া সুলতানা বলেন, অভিযোগ পেয়ে চেয়ারম্যানদের বলা হলে তারা তা অস্বীকার করেন। তারপরও প্রকল্প স্থানে লোক পাঠিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।