রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদীতে প্রকাশ্যে দিবালোকে ট্রলারে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ৭ ডাকাতকে আটক করেছে নৌ-পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর মুন্সীগঞ্জ জেলার মাঝির ঘাটসহ পদ্মা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন শরিয়তপুর জেলার আব্দুর রহমান, নড়িয়া উপজেলার ইবাদত আলী, চাদপুর জেলার তাজুল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জ জেলার মহসিন, মেহেদী ও শিহাব এবং নারায়নগঞ্জ জেলার শাহিন। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৩৪ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা, ৪ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১১ রাউন্ড গুলি, ৯ টি মোবাইল ফোন এবং ডাকাতির কাজে ব্যাবহৃত একটি স্পীড বোট উদ্ধার করা হয়। নৌ পুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. আশিক সাইদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মঙ্গলবার বিকেল ৩ টার দিকে দৌলতদিয়ার ৫ নং ফেরি ঘাট এলাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হন বেশ কয়েকজন ব্যাবসায়ী।
ডাকাতির শিকার গরু ব্যবসায়ীরা হলেন হেলাল উদ্দিন, মোস্তাক বেপারী, মোশারফ হোসেন, দুলাল খান, ইউসুফ বেপারী, জিন্না খান, লোকমান বেপারী, ইমতাজ শেখ, শাহজাহান বিশ্বাস, লিয়াকত বিশ্বাস, আলিমসহ ৬৫ থেকে ৭০ জন।
এ প্রসঙ্গে নৌ-পুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. আশিক সাইদ বলেন, ঘটনা ঘটার সাথে সাথে দৌলতদিয়া নৌ-ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জেএম সিরাজুল কবির নদী পথে উক্ত সংবাদ পাওয়া মাত্র দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সঙ্গীয় ফোর্সসহ স্পীডবোট যোগে ডাকাতদের গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির অভিযানিক দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ডাকাত দল পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে শরীয়তপুরের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। তখন দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সঙ্গীয় ফোর্সসহ ডাকাতদের পিছু ধাওয়া করে এবং তাৎক্ষনিক নৌ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কন্ট্রোল রুমকে অবহিত করে। নৌ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মহোদয়ের নির্দেশ মোতাবেক কন্ট্রোল রুম তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত সংবাদটি নৌ পুলিশ ফরিদপুর, নারায়নগঞ্জ এবং চাঁদপুর অঞ্চলের বিভিন্ন নৌ থানা/ফাঁড়িকে অবহিত করে। উক্ত সংবাদ পেয়ে ফরিদপুর অঞ্চলাধীন কোতোয়ালী নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ও চরজানাজাত নৌ পুলিশ ফাঁড়ি যৌথভাবে স্পীডবোট নিয়ে ডাকাতদের ধাওয়া করে। ডাকাতদের স্পীডবোটের গতি বেশি হওয়ায় কোতোয়ালী নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ও চরজানাজাত নৌ পুলিশ ফাঁড়িকে পিছনে ফেলে ফরিদপুর অঞ্চলের পদ্মা সেতু অতিক্রমকালে ২০০ হর্স পাওয়ারের স্পীডবোট নিয়ে মাঝিরঘাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ও মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ডাকাতদের পিছু নিলে ডাকাতরা মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানাধীন ডহুরীর খাল দিয়ে দিঘীরপাড় হয়ে চাঁদপুর অঞ্চলের মেঘনা নদীতে প্রবেশ করে।
তখন মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ও চর আব্দুল্লাহপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ি সঙ্গীয় ফোর্সসহ মাঝিরঘাট ফাঁড়ির সাথে সম্মিলিতভাবে ডাকাতদের পিছু ধাওয়া করতে থাকে। ডাকাত দল নিরুপায় হয়ে পথ পরিবর্তন করে মুন্সীগঞ্জ সদর থানাধীন বাঘাইকান্দি গ্রামের খালে ঢুকতে ঢুকতে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকলে পুলিশও ডাকাতদের লক্ষ্য করে পাল্টা ৩৬ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। একপর্যায়ে নৌ পুলিশের চতুর্মুখী আক্রমণে টিকতে না পেরে ডাকাতদল মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন বাঘাইকান্দি গ্রামের খালের পাড়ে স্পীডবোটটি রেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে নৌ পুলিশও তাদের পিছু পিছু ধাওয়া করতে থাকে।
নৌ পুলিশের চৌকস দল স্থানীয় গ্রামবাসী ও জেলা পুলিশের সহায়তায় আটক নৌ ডাকাতদের আটক করতে সক্ষম হয় ।