রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ২১এপ্রিল গোয়ালন্দ প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে।
১৯৭১ সালের এই দিন ভোর সাড়ে ৫টায় পাকিস্তানের সু-সজ্জিত বাহিনী গান বোট, যুদ্ধ জাহাজ ও হেলিকপ্টার যোগে আরিচা ঘাট হতে এসে গোয়ালন্দ ঘাটে আক্রমণ করে।
তাদের প্রতিরোধ করতে পদ্মা নদীর উজানচর বাহাদুরপুর ঘাটে প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়। কিন্তু পাকিস্তানের সুসজ্জিত বাহিনীর সম্মুখে যুদ্ধ বেশি সময় স্হায়ী হয়নি। যুদ্ধে আনছার কমান্ডার ফকীর মহিউদ্দিন, ছবেদ আলী, হাবিল মন্ডল, কবি তোফাজ্জলসহ কয়েকজন শহীদ হন। আহত হন অনেকে। পরে পাক বাহিনী ঘাটের অদূরে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে হামলা চালিয়ে সারা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় এবং গ্রামের ২৬ জন নিরীহ নর-নারীকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তারা গোয়ালন্দ বাজার জ্বালিয়ে দেয়।
ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণে রাখতে শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় উজানচর বাহাদুরপুর গ্রামে আলোচনা সভা, দোয়া ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন প্রতিরোধ যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার।
ইঞ্জিনিয়ার জুয়েল বাহাদুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উজানচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা, মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার, ইঞ্জিনিয়ার ফকীর আব্দুল মান্নান, যুগান্তর পত্রিকার গোয়ালন্দ প্রতিনিধি শামীম শেখ প্রমূখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিটিআই’র প্রাক্তন ইন্সট্রাক্টর মফিজুল ইসলাম তানসেন।
বক্তারা গোয়ালন্দের প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গনহত্যাকে সরকারীভাবে স্বীকৃতির দাবি, যুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে ভাস্কর্য নির্মাণ এবং আনছার-ইপিআরসহ সশস্ত্র যোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত ও যুদ্ধের স্মৃতি তুলে ধরে একটি ম্যাগাজিন তৈরী এবং প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সরকারীভাবে গেজেটভুক্ত করার দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার জুয়েল বাহাদুর বলেন, গোয়ালন্দের সম্মুখ প্রতিরোধ যুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় এবং ভাস্কর্য নির্মাণেরর জন্য তার বাবা ইউসুফ আলী আলী শেখ তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় দুই শতাংশ জমি দান করেছেন।
রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার চেয়ারম্যান থাকাকালীন ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ২ লক্ষ টাকা অনুদান দেন। তা দিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে অদ্যাবধি নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।
যুগান্তর পত্রিকার গোয়ালন্দ প্রতিনিধি সাংবাদিক শামীম শেখ বলেন, তার বাবা ইয়াজদ্দিন শেখ আনছার বাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত সদস্য হিসেবে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। কিন্তু তিনি সহ আরো অনেক আনছার সদস্য পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। অথচ বিতর্কিত ব্যাক্তিরাও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় গেজেটভুক্ত হন।
উজানচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, তার পিতা জিন্দার আলী মৃধাসহ পরিবারের আরো কয়েকজন প্রতিরোধ যুদ্ধ পরবর্তী বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে গনহত্যার শিকার হন। এখানে একটা স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা ২১ এপ্রিলকে প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গনহত্যা দিবস এবং গনহত্যায় শিকারদের শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দাবি করছি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রতিরোধ যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার বলেন, আমরা জীবন বাঁজি রেখে সেদিন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আমার চাচা আনছার কমান্ডার ফকীর মহিউদ্দিন যুদ্ধে শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। যুদ্ধের সেই স্মৃতি ধরে রাখতে ভাস্কর্য নির্মাণ, সশস্ত্র প্রতিরোধ যোদ্ধা ও যুদ্ধের স্মৃতি তুলে ধরে ম্যাগাজিন তৈরী সহ নানা পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এর জন্য সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করি।