মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ অপরাহ্ন

সেই সব দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩
  • ৯৭ Time View

সেই সব দিন
নেহাল আহমেদ

ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো। এক বাংলাদেশী তরুণ সম্ভবত জার্মানের একটা রাস্তার বর্ণনা দিচ্ছেন খুব সুন্দর করে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছোট্ট ছোট্ট তাকে বই রাখা বিষয়টাকে খুব গুরত্ব দিচ্ছেন।ছিমছাম রাস্তার মোড় পেট্রল পাম্প কিংবা বাস দাড়াঁনোর জায়গায় ছোট্ট ছোট্ট লাইব্রেরী।জাতী হিসাবে তারা কতটা আধুনিক আর উন্নত যা যেন প্রতিটি মোড়ে মোড়ে চিহ্ন বহন করছে।

আমার মনে পড়লো আমাদের উঠোন আর বসার ঘরের কথা। এক সময় ওয়েটিং রুমে সাজানো থাকতো কত ম্যাগাজিন।ডাক্তারের চেম্বার কিংবা অফিসের সু সজ্জিত বসার ঘরে শোভা পেতো হরেক রকম বই।বিচিত্রা, ইদ সংখ্যা, পুজা সংখ্যা সহ বিনোদনের পাশাপাশি সিরিয়াস সাহিত্যের বই। সেই সময় সেই সব সময় পাল্টে গেছে। গেছে সংস্কৃতি।সময়ের মানদন্ডে উত্তীর্ণ চিন্তা-রুচি ও জীবনাচরণের পরিশীলিত রূপই সংস্কৃতি। সময়ের ক্ষারে টিকে থাকা রীতিনীতির রংই সংস্কৃতির রং। সংস্কৃতি জাতির স্বাতন্ত্র্য পরিচয় প্রকাশ করে। সংস্কৃতির দীপ্তি দেখা যত সহজ, অনুভব করা তত কঠিন। এর ভেতর দিয়ে বেড়ে না উঠলে একে ঠিক আত্মস্থ করা যায় না। রবীন্দ্রনাথের মতে সংস্কৃতি হলো, একটি হীরক খন্ড আর সভ্যতা তার দ্যুতি। নৃবিজ্ঞানী ই বি টাইলরের মতে, ‘জ্ঞান-বিজ্ঞান, আচার-বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতিবোধ, আইন-কানুন এবং অনুশীলন ও অভ্যাস, যা মানুষ সমাজের সদস্য হিসাবে অর্জন করে তাই সংস্কৃতি।আমাদের অভ্যাস পাল্টে যাচ্ছে।আমাদের ড্রয়িং রুমের সৌন্দর্য বেড়েছে। দামি দামি আসবাস পত্র থাকলেও কোথাও প্রাণ খুজেঁ পাওয়া যায়না।মেহমান আসলে এক কাপ চায়ের সাথে একটা পত্রিকা, কেহ এগিয়ে দেয়না।বই কেনা হয়তো হয় সেগুলো সাজানো থাকে কাঁচের শো রুমে। আগে বসার ঘরে পত্রিকা রাখা অভিজাত মনে করা হলেও এখন বসার ঘরে জন্তু জানোয়ার রাখা হয় অভিজাতের প্রতিক হিসাবে।মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি বই থেকে।

অথচ বই মানব সভ্যতার বিকাশে অন্যতম উপাদান। যুগে যুগে বই মানব জীবনের মানকে উন্নত করছে, বুদ্ধিমত্তাকে শানিত করেছে,ধারণাকে গভীর করেছে এবং এভাবে এগিয়ে নিয়েছে মানব সভ্যতাকে। বই সত্যের পথে,ন্যায়ের পথে পরিচালিত করে মানুষকে বিশুদ্ধ করে তোলে। বই ছাড়া মানব সভ্যতার বিকাশ সম্ভব নয়। আমরা পাল্টাচ্ছি দ্রুত পাল্টাচ্ছি।যদিও মানুষ প্রকৃতির সামাজিক জীব। কিন্তু জন্মের পর কাদামাটির মতোই থাকে। সে যে সামাজিক মূল্যবোধ, ধ্যানধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠে, বিদগ্ধ রুচির মানুষে পরিণত হয়, তাই সংস্কৃতি। আমরা কি তবে রুচিহীন দুভিক্ষের মধ্যে বসবাস করছি।

আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতির শিকড় কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ জীবনে প্রোথিত। আমাদের কৃষ্টির মূল ক্ষেত্র কৃষকের আঙিনা বা উঠান। এর মৌলিক বিকাশ-মঞ্চ গ্রামীণ বাংলা ঘর। বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে লোকজ ঐতিহ্যে লালিত ও পুষ্ট বললেও ভুল বলা হবে না। এক সময় আমাদের উঠোন গুলোতে শলাপরামর্শ, বিয়েশাদী উপলক্ষে ভোজ সবকিছুই উঠোনে হতো’। গ্রামীণ সামাজিক কর্মকান্ডের অনুষ্ঠান স্থল হিসাবে উঠোন ব্যবহার সুপ্রাচীন। উঠোনেই পূজামন্ডপ, কবিগান, পুঁথি পাঠের আসর জমতো।উঠোনগুলো এখন হারিয়ে যাচ্ছে।

এখন আমাদের মাঝে বোঝাপড়া ভাবের আদান প্রদান।সমস্যা সম্ভবনা নিয়ে আর উঠোন গুলো চোখে পড়ে না।একান্নবতী পরিবার এখন আর চোখে পড়েনা।বিছিন্ন হতে হতে এখন আমরা প্রত্যেকেই আলাদা। স্বামী সন্তান ছেলে মেয়ে এখন পার্সোনালির নামে আলাদা বসবাস করে। আহারে সেই উঠোন, সেই বসার ঘর থাকলে আমি ও একটা লাইফ ভিডিও দিতে পারতাম।বলতে পারতাম আমাদের প্রতিটি ঘর প্রতিটি উঠোন মানব সভ্যতার উপকরণে সাজানো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com