রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত ইয়ার আলী প্রামাণিক (৫৫) ৮ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত আড়াইটার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন।
জানা যায়, ইয়ার আলী প্রামাণিক চরমপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিন এ রাজনীতি করতে গিয়ে কখনো জেলে থেকেছেন আবার কখনো পালিয়ে পালিয়ে আত্মগোপনে থেকেছেন। জেলে থাকাকালীন সময় একপর্যায়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ইচ্ছা পোষণ করেন।
এরই মাঝে সরকার এধরণের রাজনীতিবিদদের ২০১৯ সালে সরকার আর্থিক সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করে চরমপন্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ দেয়। এ সুযোগে ইয়ার আলী প্রামাণিক জেলে থাকা অবস্থায় আত্মসমর্পন করার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং অবশেষে আত্মসমর্পণ করেন।
এরপর তিনি জেল থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করার জন্য রাজবাড়ী গোয়ালন্দ উপজেলার অন্তারমোড় এলাকায় একটি চায়ের দোকান করে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-যাপন শুরু করেন।
ইয়ার আলী প্রামাণিক গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নে অবস্থিত ১ নং ওয়ার্ড চর বরাট গ্রামের মৃত ফেরদৌস প্রামাণিকের ছেলে। তার ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত ১০টার দিকে প্রতিদিনের মতো চায়ের দোকান বন্ধ করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে নিশানা করে হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এসময় তার পেট ও হাতে গুলি বিদ্ধ হয়। তিনি তখন জীবন রক্ষায় পাশে হারু সরদার নামক একজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। দুর্বৃত্তরা আরও কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পদ্মা নদীর দিকে চলে যায়।
ঘটনাটির খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে তার মৃত্যু হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, আত্মসমর্পণের সময় সরকার তাদের দেড় লাখ টাকা অনুদান দেয়। সে টাকা তার জামিন করাতেই তখন খরচ হয়ে যায়। এরপর একটি চায়ের দোকান দিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছিলেন। তারা আরও জানান আত্মসমর্পণের পর তার সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না। আগের কোনো শত্রুতার জেরে হয়ত তাকে গুলি করা হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
ইয়ার আলীর সঙ্গে আত্মসমর্পণ করা সাবেক কয়েকজন নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক চরমপন্থী সদস্য জানান, ইয়ার আলী হত্যার ঘটনায় তারা সবাই চরম আতঙ্কের মধ্যে আছেন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরাই যেহেতু ইয়ার আলীর কাল হলো, এতে তারাও চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানান, ইয়ার আলীকে গুলি করে আহত করার ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী ৯ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে মতিন শেখ (৩৫) ও মাজেদ শেখ (৩৫) নামের দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। আগের মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হবে বলে জানান ওসি।