রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কলেজ পড়ুয়া দুই মেয়ে সন্তানকে নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন হারুন অর রশিদ নামের এক অসহায় বাবা। এ যেন পল্লীকবি জসিমউদ্দীনের আসমানী কবিতার আসমানীর বাবা হতদরিদ্র রহিমুদ্দিনের আরেক গল্প। তিনি উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের টেংরাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
হারুন অর রশিদ জানান, গোয়ালন্দ টেক্সটাইল মিলে চাকরী করতেন তিনি। ভালোই চলতো তাদের পাঁচ সদস্যের সংসার। প্রায় ২০ বছর আগে মিলটি বন্ধ হয়ে গেলে সংসার চালাতে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। কিছুদিন পর তিনি স্ট্রোক করে প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘরে পড়ে যান। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় কোন মতে সংসার চলতে থাকে। এ অবস্হার মধ্যে কয়েক বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। এতে করে তারা আরো অসহায় হয়ে পড়েন।
তিনি আরও বলেন, তার তিন মেয়ে। পড়ালেখার প্রতি ওদের খুব আগ্রহ। শত প্রতিকূলতার মধ্যে ওরা পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। বড় মেয়েটি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে পড়ে। ছোটটি উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে রাবেয়া ইদ্রিস মহিলা কলেজে। মেজটি কলেজে পড়ালেখা অবস্থাতেই কয়েকমাস আগে বিয়ে হয়ে গেছে। বর্তমানে কলেজ পড়ুয়া দুইটি কন্যা সন্তান নিয়ে তিনি জরাজীর্ণ একটি ঘরের মধ্যে তাদের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে। একটু বৃষ্টি হলে ঘরের ভাঙা চালা দিয়ে ভেতরে পানি পড়ে সব ভিজে যায় । তীব্র শীত-গরমে ঘরের মধ্যে থেকেও তারা দুর্ভোগ পোহান। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ঘরের দাবি জানাচ্ছি। ঘরটি পেলে শেষ বয়সে একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারতাম। মরার আগে মেয়েদের অন্তত একটা আশ্রয়স্থলে রেখে যেতে পারতাম।
প্রতিবেশী পান্নু বিশ্বাস ও নাজমা বেগম বলেন, হারুন অর রশিদ একজন চরম অসহায় মানুষ। তার মতো অসহায় লোক এই ইউনিয়নে আর আছে কিনা সন্দেহ। তিনি প্রায় ১০ বছর হলো প্যারালাইসিস হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন চলে। আমরা মাঝে মধ্যে মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা চেয়ে এনে তাদের দেই। তার একটু বসতভিটা থাকলেও সেখানে বসবাসের উপযোগী কোন ভালো ঘর নেই। জরাজীর্ণ ঘরে বিবাহযোগ্য তিনটি মেয়েকে নিয়ে তিনি মানবেতরভাবে বসবাস করেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি এই অসহায় পরিবারটিকে যেন একটি ঘর দেওয়া হয়।
ছোটভাকলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, নতুন করে ঘরের বরাদ্দ এলে তালিকায় হারুন অর রশিদের নাম দেয়া হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাকির হোসেন মুঠোফোনে বলেন , আমরা আগামিতে যাচাই-বাছাই করে চেষ্টা করবো ওই পরিবারটিকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে।