রাজবাড়ী জেলার পদ্মা নদীর ভাঙ্গন ঝুঁকিতে কবরস্থান, ঈদগাহ, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি, একটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজারসহ অনেক স্থাপনা। বাজারের পাশেই রয়েছে চরবাসীর একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র দেবগ্রাম কমিউনিটি ক্লিনিক। ভাঙন দুশ্চিন্তায় রয়েছে পদ্মা তীরবর্তী বাসিন্দারা।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম কাউয়ালজানী, মুন্সিবাজার এলাকা ঘুরে জানা গেছে, পদ্মার ভয়াল থাবায় আবারও ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে চরবাসীর একমাত্র কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠ, ফসলি জমি, বসতবাড়ি। প্রতি বছর বর্ষা এলেই পদ্মার পেটে চলে যায় তিন ফসলী জমিসহ বসতবাড়ী। প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে অনাবাদি জমি, ফসলী জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শতশত পরিবারের বসতভিটা। নদী ভাঙ্গন শুরু হলে ভাঙন প্রতিরোধে তড়িঘড়ি করে কিছু বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তাতে তেমন কাজে আসে না। প্রতিবছরই একই চিত্র দেখছে চরের মানুষ। ইতিমধ্যে যে সকল জমির মৌজা নদী গর্ভে চলে গেছে সেগুলো হলো ছোট গোয়ালন্দ, বড় গোয়ালন্দ, বড় সিঙ্গা, বড় বিল, কুশাহাটা আংশিক, বিশ্বনাথপুর, বন বাউল, পানুর, ধোপাগাতি, দক্ষিণ ধোপাগাতি, উত্তর ধোপাগাতি, ইসলাম সিজমপুর, বেথুরী, ঢল্লা পাড়া, ডাকাত পাড়া, বেপারী পাড়া, জয়পুর, দেউলি, কাউয়ালজানী।
খবির সরদার নামে একজন অসহায় বাবা তার একমাত্র ছেলে নবীন সরদারের কবরটি নদীতে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় দিনরাতের অধিকাংশ সময় কবরের আশপাশ দিয়েই অতিবাহিত করেন। প্রায় নদীর কিনারেই চলে এসেছে কবরটি।
মুন্সি বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. জামাল মুন্সি জানান, এর আগে আমাদের শত একর জমিসহ চর অঞ্চলের শত শত মানুষের জমি ও বসতভিটা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীতে ভাঙ্গন শুরু হয়। এবছর বর্ষা আসার আগেই ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে এবার আর নিজ এলাকার কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠ এবং নিকটবর্তী কুশাহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিজ পরিবারের নামে মুন্সি বাজার ও পাশে থাকা দেবগ্রাম কমিউনিটি সেন্টার রক্ষা করা সম্ভব হবে না। যদি স্থায়ীভাবে নদী শাসন করা হতো তাহলে আমাদের ঘর ও ফসলি জমি নদী গর্ভে যেত না।
কাউয়ালজানী এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম মোল্লা জানান, দুইদিনের নদী ভাঙনে আমার প্রায় ১০ বিঘা ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। যখন পদ্মা নদীর ভাঙ্গন শুরু হয় তখনই দেখি কিছু জিও ব্যাগে বালি ফেলে পদ্মা নদীর পাড় দিয়ে। এতে নদী ভাঙ্গন ঠেকে না। নদীর পাড়ে জিও ব্যাগ থাকে নিচ দিয়ে স্রোতে মাটি ভেঙে গিয়ে ভাঙ্গন চলতেই থাকে। আমরা চাই স্থায়ীভাবে নদী শাসন হোক। তা না হলে আমাদের মত অনেক পরিবারকে দুঃখ দুর্দশায় দিন কাটাতে হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান জানান, নদী ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করার তেমন বরাদ্দ নেই। আমরা নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে চাহিদা দিয়ে থাকি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে। নদী ভাঙ্গন রোধে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। তারা খুব শীঘ্রই নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ শুরু করবে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে দ্রুত কাজ করা হবে।