বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন

শিশুদের যে বইগুলো পড়া উচিৎ -জাকিয়া জিতু

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫
  • ৪৯ Time View

বর্তমানে, টিভি, কার্টুন, ট্যাবের বাইরে শিশুদের হাতে গল্পের বই দেখতে পারা যেন এক বিরল দৃশ্য! এজন্যই শিশুদের বই পড়ার অভ্যেস তৈরি করতে হয় ছোট থেকেই। হোক পৌরাণিক কাহিনী, জীবনী, প্রকৃতি, ভ্রমণ, রূপকথা কিংবা বিজ্ঞান বিষয়ক আপনার শিশুর জাগতিক গন্ডি বড় হবেই! গল্পের ভেতরে এমন জাদু থাকে যা মনের মধ্যে অভিন্ন জগত তৈরি করতে সহযোগিতা করে। তাই গল্প-উপন্যাসের মধ্য দিয়ে কোনো কিছু শিখলে সেটা মনে থাকে এবং শিশুরা সহজেই সেই জিনিসটা বুঝতে পারে।

ডেভেলপমেন্টাল অ্যান্ড বিহেভিওরাল পেডিয়াট্রিক্স জার্নালে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে শিশুরা প্রতিদিন গল্প বা অন্য বই পড়ে তারা প্রতি বছর প্রায় ৭৮ হাজার শব্দের দেখা পায়। এর মানে হলো, শিশুরা জন্ম থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন শব্দের সংস্পর্শে আসে। এটি ভবিষ্যতে তাদের ভাষা দক্ষতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

পাশাপাশি, বাচ্চাদের একাডেমিক সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করতে বাবা-মায়ের জন্য সবচেয়ে সহজ উপায়গুলোর একটি হলো বই পড়া!

প্রতিবছর বিশ্ব বই দিবস উৎসব ২ এপ্রিল পালন করা হয়। সেই উপলক্ষে শিশুদের জন্য লেখা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বইগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করে দ্যা টেলিগ্রাফ!

চলুন আজকে এমন সব শিশুতোষ বইগুলোর সঙ্গে আপনার শিশুকে পরিচয় করিয়ে দেই:-

১. ওয়াটারশিপ ডাউন
লেখক রিচার্ড অ্যাডামসের লেখা ‘ওয়াটারশিপ ডাউন’ একটি অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস। বইটি ১৯৭২ সালে লন্ডনের ‘রেক্স কলিংস লিমিটেড’ দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটিতে দেখা যায়, এক দল খরগোশ বাহিনী বনে গর্ত করে বসবাস করে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা, প্রবাদ, কবিতা এবং পৌরাণিক কাহিনীর মধ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। মূলত, গল্পটি একটি মহাকাব্যিক বিষয়বস্তুর মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে।

২. দ্য হবিট-অর দিয়ার অ্যান্ড ব্যাক অ্যাগেইন
লেখক জে.আর.আর টোলকিনের লেখা এটি একটি শিশুতোষ উপন্যাস। ১৯৩৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয় এবং ব্যাপক সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে। ‘কার্নেগি পদকের’ জন্যেও মনোনীত হয় এবং ‘নিউ ইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন’ থেকে সেরা শিশুকিশোর কথাসাহিত্যের জন্য পুরষ্কার লাভ করে। বইটি শিশুসাহিত্যে একটি ক্লাসিক হিসেবে স্বীকৃত এবং সর্বকালের সেরা বিক্রিত বইগুলির মধ্যে একটি। যার ১০০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল।

বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি কুড়ানো কল্পকাহিনি ‘দ্য হবিট’ এক অনবদ্য সৃষ্টি!

৩. দ্যা লায়ন- দ্যা উইচ অ্যান্ড দ্যা ওয়ারড্রোব
লেখক সি এস লুইসের লেখা বই এটি।
১৯৪০ সালে পৃথিবী জুড়ে বেজে উঠেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। এমন সময় প্রফেসর ক্রাইকের আপাত নিরাপদ বাড়িতে আগমন ঘটে চার ভাইবোনের। একদিন লুকোচুরি খেলতে খেলতে চারজনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট লুসি খোঁজ পায় এক অদ্ভূত ওয়ারড্রোবে! যার ভেতরে রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগত নার্নিয়া। সেখানকার সময়, এমনকি অধিবাসীরাও সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের। আর সেখানে রাজত্ব করছে এক মায়াবিনী জাদুকর, যার জাদুবলে পুরো নার্নিয়া জুড়ে নেমে এসেছে চির তুষারের যুগ! আর সেখানকার অধিবাসীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে একদল দেবদূতের যারা তাদেরকে মুক্ত করবে এই অভিশাপের হাত থেকে!

৪. শার্লট’স ওয়েব
ইবি হোয়াইটের লেখা বই ‘শার্লট’স ওয়েব
বইটি শার্লট নামের মাকড়শার সঙ্গে উইলবার নামের একটি শূকরের বন্ধুত্ব নিয়ে লেখা। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫২ সালে। লেখক ইবি হোয়াইট, একজন হাস্যরসাত্মক এবং পরিশীলিত প্রাবন্ধিক যিনি নিউ ইয়র্কার এবং এস্কোয়ারের জন্য লিখেছিলেন এবং দ্য এলিমেন্টস অফ স্টাইল সম্পাদনা করেছিলেন। আমেরিকান শিশুসাহিত্যে জগতে শার্লট’স ওয়েব একটি শ্রেষ্ঠ রচনা!

৫. দ্যা লিটল প্রিন্স
এ বইয়ের লেখক-অ্যান্টনি ডি সেইন্ট এক্সুপেরি, বইয়ের কাহিনীতে এক ছোট্ট রাজার কুমার যে কিনা অন্য এক গ্রহ থেকে এসেছিল পৃথিবীতে, তার মুখে বিভিন্ন গ্রহের বাসিন্দাদের গল্প শোনেন এক লেখক। দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব! ১৯৪৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল বইটি। দ্য লিটল প্রিন্স- প্রায় ৫০০ ভাষায় অনূদিত এবং ২২০ মিলিয়ন কপি বিক্রিত। যা কেবল শিশুদের নয়, বড়দেরও একই রকম মুগ্ধ করে আসছে প্রকাশের পর থেকে!

৬. পিপি লংস্টকিং
অ্যাস্ট্রিড লিন্ডগ্রেনের লেখা বই ‘পিপি লংস্টকিং’ বাবা-মা হারা একটি মেয়ের গল্প এটি। মেয়েটির বন্ধু শুধু একটি বানর ও একটি ঘোড়া। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৫ সালে।
পিপ্পি সত্যিকার অর্থেই একটি মৌলিক চরিত্র!
৯ বছর বয়সী একটি শিশু ছোটবেলায় তার মা মারা যায়। পাপা সমুদ্রযাত্রায় হারিয়ে যায়।
তারপর থেকে পিপ্পি বানর মিস্টার নিলসন আর ঘোড়ার সাথে একটি পুরনো বাড়িতে ভিলা ভিলেকুল্লাতে একা থাকে।
পিপ্পি দিনের পর দিন তার পাপার জন্য অপেক্ষায় থাকে! এই বুঝি পাপা চলে এলো!
১৯৪৫ সালে সুইডিশ ভাষায় পিপি ল্যাংস্ট্রাম্প নামে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম ইংরেজি ভাষার সংস্করণ হয় ১৯৫০ সালে।

পরিশেষে, যে পরিবারে নিয়মিত বই পড়ার চর্চা হয় সেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহানুভূতি, বন্ধন সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি, পারস্পরিক সংযুক্তি ও আলোচনার সুযোগও বৃদ্ধি পাবে। এমনকি, যে শিশুরা আনন্দের জন্য বই পড়ে তারা একাডেমিক লাইফে বিভিন্ন বিষয়ে আরো বেটার এক্সপার্টিস হিসেবে তৈরি হয়!

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com