রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার পৌর ৩ নং ওয়ার্ড টেনু ফকিরের আঙ্গিনায় “নারায়ে তাকবির-নারায়ে রিসালাত, আল্লাহ্ আকবর, ইয়া রাসুলাল্লাহ্” ‘ফকির আল্লাহর ভেদ, আল্লাহ্ ফকিরের ভেদ” ধ্বনিতে পুরনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বুধবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে গোয়ালন্দের ঐতিহ্যবাহী ১৫৩তম ফকিরী মেলা। মেলায় হাজার হাজার দর্শকের ঢলছিলো লক্ষণীয়।
পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতীর জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী দিন। দিনটিকে বরণ করতে ও টেনু ফকিরের মাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ১৫৩ তম ফকিরী তত্ত্ব সংলাপ বার্ষিকী (ওরশ মোবারক) উপলক্ষে বৈশাখীর প্রথম দিন থেকে টানা তিনদিন কুমড়াকান্দি টেনু ফকিরের আঙ্গিনায় চলে নানা রকম অনুষ্ঠান মালা।
১২৭৯ বঙ্গাব্দ, ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের বাংলা বৈশাখ মাসের প্রথম দিন ফকির ওলিকুলের শিরোমনি হযরত শাহ্ লাল শাহ (সানাল ফকির) চিশতি (রঃ) এর নুরুল্লালাহ্ পুর পাক দরবার শরীফের নির্দেশক্রমে টেনু ফকির গোয়ালন্দ কুমড়াকান্দি তার বাড়ির আঙ্গিনায় এ মেলার শুভ সূচনা করেন।
টেনু ফকিরের মূত্যর পর তার দুই সন্তান মোহাম্মদ আলী ফকীর ও জোনাব আলী ফকির এবং তার ছোট ভাই আরশাদ আলী ফকির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাদের তিন জনের মৃত্যুর পর আরশাদ আলী ফকিরের ছেলে আদম আলী ফকির পরবর্তীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে মেলা চলার পরে তার মৃত্যুর পর মৃত জোনাব আলী ফকিরের ছেলে আব্দুর রশীদ ফকির এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে চলছেন। তবে তারও শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় বর্তমানে তার কনিষ্ঠ পুত্র ফকির পলাশ বাউলের তত্ত্বাবধায়নে চলছে টেনু ফকিরের মাজারের কার্যক্রম। এবছর ১৫৩ তম মেলার প্রথম দিন সকাল ৬ টায় তরীক্বতী নিশান উত্তোলন, সন্ধ্যা ৭ টায় তরীক্বতী আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় দিন বাদ ফজর মিলাদ মাহফিল ও তোবারক বিতরণ, দুপুর ২ টা হতে ধর্মীয় সংগীত (জারি গান) পরিবেশন করেন মানিকগঞ্জ জেলা হতে আগত শিল্পী আরফান আল-চিশ্তী ও গোয়ালন্দের শিল্পী শামীমা সরকার।
বৈশাখীর তৃতীয় অর্থাৎ শেষ দিন দুপুর ২ টা হতে মধ্যরাত পর্যন্ত ধর্মীয় সংগীত (বিচার গান) অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিচার গান পরিবেশন করেন ফরিদপুর জেলা হতে আগত শিল্পী ফকির আবুল সরকার ও গোয়ালন্দের শিল্পী ফকির পলাশ বাউল।
শেষ দিন ১৫৩ তম ফকিরী মেলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক সরদারের সঞ্চালনায় কমিটির সভাপতি মো. আলাউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান।
আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য ও টেনু ফকির মাজারের তত্ত্বাবধায়ক ফকির পলাশ বাউল বলেন, ফকির ওলিকুলের শিরোমনি হযরত শাহ্ লাল শাহ (সানাল ফকির) চিশতি (রঃ) এর নুরুল্লালাহ্ পুর পাক দরবার শরীফের নির্দেশক্রমে ১২৭৯ বঙ্গাব্দ হতে আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য হিসাবে টেনু ফকিরের আঙ্গিনায় এবারের আয়োজন দিয়ে ১৫৩ তম মেলা অনুষ্ঠিত হলো। আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছর এমন আয়োজন করা হয়। এখন এ মাজারের দায়িত্বে রয়েছেন আমার পিতা আব্দুর রশিদ ফকির।