বাংলা সনের প্রথম মাসের নাম বৈশাখ। পয়লা বৈশাখে বাঙালির নববর্ষ উৎসব। নববর্ষ সকল দেশের, সকল জাতিরই আনন্দ উৎসবের দিন। শুধু আনন্দ উচ্ছ্বাসই না, সকল মানুষের জন্য কল্যাণ কামনারও দিন। আমরাও সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রত্যাশা নিয়েই মহা ধুমধামের সঙ্গে আমাদের নববর্ষ উৎসব উদযাপন করি। একে অন্যকে বলি, শুভ নববর্ষ। বাংলা নববর্ষ আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব। প্রতি বছরই এ উৎসব বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে বিশাল থেকে বিশালতর হয়ে উঠছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রাজবাড়ীতে নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ।
নববর্ষ উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল আটটায় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আ¤্রকানন থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরে বিভিন্ন বিষয়ের সমাহার ঘটে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল পালকি, মহিষের গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি ইত্যাদি। শোভাযাত্রাটি রাজবাড়ী শহর প্রদক্ষিণ করে রাজবাড়ী শহীদ খুশী রেলওয়ে ময়দানে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে জেলা প্রশাসনের নববর্ষ মঞ্চে শুরু হয় প্রভাতী সংগীত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জেলা শিল্পকলা একাডেমি ছাড়াও জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা সংগীত, নৃত্য পরিবেশন করে। সকাল সাড়ে ৯টায় একই স্থানে তিন দিন ব্যাপী লোকজ মেলার উদ্বোধন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে হাসপাতাল, কারাগার ও শিশু পরিবারে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হয়।
তিন দিনব্যাপী লোকজন মেলা:
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন শহীদ খুশী রেলওয়ে ময়দানে ৩ দিনব্যাপী লোকজ মেলার আয়োজন করেছে। নববর্ষের দিন সকাল সাড়ে ৯টায় রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার শুভ উদ্বোধন করেন। এসময় রাজবাড়ীর সিভিল সার্র্জন এসএম মাসুদ, রাজবাড়ীর স্থানীয় সরকার উপ পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমরুল হাসান, রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তারিফ উল হাসান, রাবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মেলায় নাগরদোলা, চড়কি, বিভিন্ন কারু পণ্য, ঘর সাজানোর তৈজষপত্রসহ নানান পণ্যের সমাহার রয়েছে। প্রথম দিনেই মেলা বেশ জমে উঠেছে। সোমবার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায়, পুরো রেলওয়ে ময়দান লোকে লোকারণ্য।
নববর্ষ নিয়ে বিশিষ্টজনরা বলেন, মুগল সম্রাট আকবর চান্দ্র হিজরি সনের সঙ্গে ভারতবর্ষের সৌর সনের সমন্বয় সাধন করে ১৫৫৬ সাল বা ৯৯২ হিজরিতে বাংলা সন চালু করেন। আধুনিক গবেষকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন মহামতি আকবর সর্বভারতীয় যে ইলাহি সন প্রবর্তন করেছিলেন তার ভিত্তিতেই বাংলায় আকবরের কোনো প্রতিনিধি বা মুসলমান সুলতান বা নবাব বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। সেজন্যই একে ‘সন’ বা ‘সাল’ বলে উল্লেখ করা হয়। ‘সন’ কথাটি আরবি, আর ‘সাল’ হলো ফারসি। এখনো সন বা সালই ব্যাপকভাবে চালু। তবে বঙ্গাব্দও বলেন কেউ কেউ ।