রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে সৌদিআরব ফেরত সবুজ শেখের (৩৫) ‘হত্যা’কারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা। এসময় তারা এ ঘটনায় থানায় মামলা গ্রহণ, মূলহোতা স্ত্রী রোকসান (২৫) ও তার পরকীয়া প্রেমিককে গ্রেফতারের দাবি জানান। মৃত সবুজ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নবুওছিমদ্দিন পাড়ার মো. আইনদ্দিন শেখের ছেলে। সবুজ-রোকসানার সংসারে ১০ ও ৩ বছর বয়সী দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ উপজেলার মকবুলের দোকান এলাকায় শান্তিপূর্ণ ভাবে এ কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচি চলাকালে মহাসড়কের উভয় পাশে দুই কিলোমিটার করে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে কয়েকশ বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে।
পরে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে থানার মামলা নেয়া এবং দুই দিনের মধ্যে আসামি গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধরা মহাসড়কের অবরোধ তুলে নেন।
স্বজনরা জানান, টানা ৮ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১ অক্টোবর মঙ্গলবার দিনগত রাত এগারোটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবুজের মৃত্যু হয়। মৃত্যু সনদে সবুজের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিষক্রিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
মানববন্ধনে নিহত সবুজের মা অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলের বৌ রোকসানার সাথে রাসেল নামে এক যুবকের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। সবুজের বিদেশ থেকে পাঠানো সকল টাকা-পয়সা রোকসানা কৌশলে নিজের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে নিয়েছে। ওরা পরিকল্পিত ভাবে আমার ছেলেকে ঘাস মারার ওষুধ খাইয়ে হত্যা করেছে। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। রোকসানা ও রাসেলের ফাঁসি চাই।
সবুজের চাচা কোব্বাত শেখ, চাচাতো বোন হাসিনা বেগম, চাচাতো ভাই হাসেম মিয়া, মো. রাশেদ শেখসহ স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা সবুজের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় কয়েকবার মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মামলা না নিয়ে আমাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
এদিকে আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে অভিযুক্ত স্ত্রী রোকসানা তার শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, স্বামীর সম্পত্তি হতে তাকে এবং তার দুই শিশু সন্তানকে বঞ্চিত করার জন্য তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। তার স্বামী ডায়রিয়া-বমির কারণে মারা গেছেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন তার উপর চড়াও হলে পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন তাকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, সবুজের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা ইতিপূর্বে দায়ের করা হয়েছে। যে কারণে আর কোন অভিযোগ নেয়া হয়নি। তবে স্বজনরা নতুন করে অভিযোগ দিতে চাচ্ছেন। অভিযোগটি আমলে নেয়া এবং ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আসামি গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। বর্তমানে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।