বিরল এক অসুখে আক্রান্ত মেধাবী শিক্ষক উৎপল সরকার (৩২)। তাঁর হাত-পা ক্রমশ বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। অন্যের সাহায্য ছাড়া এখন আর চলতে পারেন না। মাত্র ১২ লাখ টাকা হলেই তার এই অসুখ নিরাময় সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। দারিদ্রের কষাঘাতে ১২ লাখ টাকা যেন তার কাছে পাহাড়সম। তিনি ভালো কবিতাও লেখেন। কিশোর বয়সে তার দুটি কাব্যগ্রস্থ প্রকাশিত হয়। উৎপল সরকার রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের উত্তম সরকারের ছেলে। বর্তমানে পাংশার একটি ভাড়া বাড়িতে ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়ে জীবীকা নির্বাহ করেন।
জানা গেছে, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে বড় উৎপল সরকার। ছোট ভাই একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চাকরি করেন। ছোট বোন পড়েন ইডেন মহিলা কলেজে। বৃদ্ধ বাবা উত্তম সরকার আগে কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতেন। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন আর তেমন কাজ করতে পারেন না। উৎপল সরকার এবং তার ছোট ভাইয়ের আয় দিয়ে কোনো মতে চলে সরকার আর ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ। উৎপল সরকারের যখন ১২ বছর বয়স, তখন তার এ রোগ দেখা দেয়। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান তার বাবা। বাতজ¦র মনে করে ওষুধ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। ব্যথা সারলেও বাঁকানো সারাতে পারেন নি। তার হতদরিদ্র বাবা হাল ছাড়েননি। বাড়ির বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র বিক্রি করে চিকিৎসা করান। কিন্তু ভালো হয়নি তার অসুখ। গত ২০ বছরে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে তার চিকিৎসার পেছনে। রাজবাড়ী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েছেন। শারীরিক ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে উৎপল সরকার পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে ¯œাতক করেছেন। কিন্তু মাস্টার্স সম্পন্ন করা আর হয়ে ওঠেনি। এর মাঝেও তিনি কবিতা লেখেন। পান্থপিদিম নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতায় কিশোর বয়সে ‘প্রদীপ রাজি’ ও ‘সত্যের ডাক’ নামে তার দুটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়। এছাড়া অধ্যাপক মুন্সি আকবর আলীর সম্পাদনায় যৌথ কাব্যগ্রন্থ কবিতা মঞ্জুরীতে তার কবিতা স্থান পায়। সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা উৎপল পাংশা শহরে নিজ উদ্যোগে তরুণদের নিয়ে ‘বহুবচন’ নামে থিয়েটারও প্রতিষ্ঠা করেছেন।
উৎপল সরকার জানান, অবস্থা এখন এতটাই খারাপ যে, নিজে চলাফেরা করতে পারেন না। পায়ের নখের উপর ভর করে হাঁটতে হয়। এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে যেতে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। হাতে লেখা ছাড়া আর কিছু করতে পারেন না। ভারি কোনো কাজ তো সম্ভব নয়ই। চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে দোতলা তিনতলায় উঠতে হয় অন্যের সাহায্য নিয়ে। তবু তিনি হাঁপিয়ে পড়েন। লেখার সক্ষমতা তখন আর থাকেনা। পরীক্ষার জানা প্রশ্নও ভুলে যান। একারণে আর চাকরির চেষ্টা করেননি। বাড়িতে ১২/১৩ জন ছাত্র-ছাত্রী পড়ান। এ দিয়ে কোনো মতে চলে সংসার আর চিকিৎসার খরচ। গ্রামের বাড়িতে থাকলে ছাত্র-ছাত্রী পড়ানো যায়না। একারণে পাংশা শহরে একটি ভাড়া বাসায় বাবা-মাকে নিয়ে থাকেন। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার বারী-ইলিজারভ অর্থোপেডিক সেন্টারে ডা. মো. মোফাখখারুল বারীর অধীনে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সার্জারীর মাধ্যমে এ রোগ নিরাময় সম্ভব। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন ১২ লাখ টাকা। এত টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য আমার বা আমার পরিবারের নেই। যদি কেউ তাকে আর্থিক সাহায্য করত তাহলে তিনি একটি সুস্থ জীবন পেতেন।
উৎপল সরকারের বাবা উত্তম সরকার জানান, ছোটবেলায় তার ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর ডাক্তারের কাছে নিয়েছিলেন। অনেক চেষ্টা করেছেন তাকে সুস্থ করে তোলার। অনেক কিছু বিক্রি করেও চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু তার ছেলে সুস্থ হয়নি। তার ছেলের চিকিৎসায় কেউ এগিয়ে এলে তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকতেন। তিনি সমাজের বিত্তবান হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে তার ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।
উৎপল সরকারকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: সোনালী ব্যাংক পাংশা শাখা, হিসাব নং: ২২১০৩০১০১১৪৩৯।