ষাটোর্ধ্ব ফটিক মোল্লা। রাজবাড়ী জেলা পদ্মা নদীর পারে আদি বসত বাড়ী ছিল। একাধিকবার ভাঙনের কারণে জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্থায়ী-অস্থায়ী ভাবে বসবাস করতে হয়েছে। সর্বশেষ ভাঙনের কারণে জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইদ্রিস পাড়া অন্যের জমিতে আশ্রয় মেলে। আশ্রয় পাওয়া জমিতে কোন রকম একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস ফটিক মোল্লার।
কিন্ত এরই মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ফটিক মোল্লা হারিয়েছেন বাপ-দাদার আদি বসতি, এলাকার পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, আতœীয়-স্বজন। হারিয়েছেন আবাদি জমি। গোয়াল ভরা গরু ছিল, গোলা ভরা ধান ছিল। সংসারে ছিল না কোন অভাব-অনাটন। তবে একাধিকবার ভাঙনের কারণে অভাব এসেছে পরিবারে। অভাবের সাথে যোগ হয়েছে একাকী জীবন। পাশে নেই আপন কেউ। পাড়া-প্রতিবেশী। বন্ধু-বান্ধব, আতœীয়-স্বজন। এমনি ভাবে জীবন কাঁটতে ছিল ফটিক মোল্লার।
ফটিক মোল্লার মত অভাব অনাটনের মধ্যে জীবন চালাচ্ছে মোজাহার মোল্লা ও হারু মোল্লা। তাদের বয়সও ফটিক মোল্লার মত। সংসারে কোন অভাব না থাকলেও একাধিকবার নদী ভাঙনের কারণে আশ্রয় নিতে হয়েছে অন্যের জায়গায়। বৃদ্ধ বয়সে অন্যের বাড়ী কাজ করে সংসার চালাতে হয়। অন্যের বাড়ী কাজ করে কোন রকম জীবন যাপন করতে পারলেও থাকার মত নেই কোন উপযুক্ত ব্যবস্থা। কোন রকম ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস।
এমনি দূরদিনে পাশে এসে দাঁড়ায় মুজিব বর্ষের আশ্রয় প্রকল্পের পাকা ঘর। এই তিন ষাটোর্ধ্ব অসহায় ব্যক্তিরা মুজিব বর্ষের আশ্রয় প্রকল্পের পাকা ঘর পেয়ে শেষ বয়সে সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন। কাজের পাশাপাশি গল্প করে অবসর সময় কাটান।
এসময় কথা হয় ষাটোর্ধ্ব ফটিক মোল্লার সাথে। তিন বলেন, অভাবে সাথে একাকী জীবন নিয়ে ঝুঁপড়ি ঘরে সময় কাঁটাতে হতো। কিন্ত মুজিব কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া পাকা ঘর পেয়েছি। এখানে এসে পেয়েছি আমার মত আরও অসহায় ৬০টি পরিবার। এখানে এসে পেয়েছি অসংখ্য বন্ধু-বান্ধব। পেয়েছি পাড়া-প্রতিবেশী। আতœীয়-স্বজন। এখন এখানে বসবাস করা কালীন মরে গিয়েও শান্তি পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, অবসর সময় আমরা যারা বয়স্ক ব্যক্তিগুলো আছি তারা পাকা ঘরের বাড়ান্দায় বসে সময় কাঁটায়। বসে বসে গল্প করি। স্নৃতি চারন করি ফেলে আসা দিনগুলি নিয়ে।
এসময় পাশে বসে থাকা অসুস্থ্য মোজাহার মোল্লা বলেন, অসুস্থ্য, তবুও এখানে এসে অসংখ্য আপন ব্যক্তি পেয়েছি। পেয়েছি অনেক বন্ধু। পেয়েছি আমার মত অনেক বয়স্ক ব্যক্তি। তিনি আরও বলেন, গ্রামে এক সময় নিজের বাড়ীর বারান্দায় বসে পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে বসে অনেক সময় কাঁটিয়েছি। কিন্ত নদী ভাঙনে সব হারিয়ে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে দীর্ঘ বছর কাঁটিয়েছি। সেই ঝুঁপড়ি ঘরে অসুস্থ্য শরীর নিয়ে কখনও ভাবিনি আবারও পাকা ঘরের বারান্দায় বসে সময় কাঁটাতে পারবো। তবে শেখ হাসিনার কল্যাণে সেটা সম্ভব হয়েছে। আল্লাহর কাছে শেখ হাসিনার দীর্ঘ আয়ু কামনা করি। তিনি যেন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুল হক খান মামুন জানান, গোয়ালন্দ উপজেলা মুজিব বর্ষের ঘরগুলো সুন্দর ভাবে নির্মিত হয়েছে। এবং জায়গা নির্ধারন করা হয়ে ভেবে চিন্তে। যেন সুবিধাভুগীরা সুন্দর পরিবেশে বসবাস করতে পারেন।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে মুজিব বর্ষের একাধিক ঘর পরিদর্শন শেষে কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ঘরটি দেখে আমি খুব আনন্দিত যে সরকারি এই ঘর গুলো নিয়ে নানা ধরনের কথা-বার্তা কানে গেছে। এই ঘরটি দেখে আমি বুঝে গেলাম অনেক অপপ্রচার এর মধ্যে ছিল। এই ঘরটি একেবারে খুব সুন্দর ভাবে নির্মিত হয়েছে। আমি যেটুকু বুঝলাম খুব সলিট ভাবে ঘরটি তৈরি হয়েছে। যারা এই ঘরটিতে থাকবেন তারা অবশ্যই ভাল থাকবেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ যেন দেশের কোন মানুষ গৃহহীন না থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় রাজবাড়ী জেলায় ২য় পর্যায়ে গৃহহীনদের মাঝে পাকা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকলের দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আমি মুজিব বর্ষের ঘরগুলো দেখেছি। রাজবাড়ী জেলার সকল ঘরগুলো সুন্দর ভাবে নির্মিত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোন সুবিধাভোগী অভিযোগ করেনি। আমি বিশ্বাস করি কেউ কোন প্রকার অভিযোগ করতেও পারবে না।