রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউপির হোসেনডাঙ্গা গ্রামের গোপাল বিশ্বাস (৪৪) হত্যাকান্ডের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ক্লু উদঘাটনসহ মামলার এজাহারনামীয় ২জন আসামি বিজন সরকার (২৪) ও চায়না সরকার (৩৫) কে আটক করেছে থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসামি বিজন সরকার ও চায়না সরকার সম্পর্কে ভাইবোন এবং নিহত গোপাল বিশ্বাসের স্ত্রী ও শ্যালক। তারা রবিবার রাজবাড়ীর বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, পাংশা মডেল থানার এসআই মো. মিজানুর রহমান তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, নিহত গোপাল বিশ্বাসের ভাই পরিমল বিশ্বাস বাদি হয়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলি করে হত্যাসহ আলমত বিনষ্ট করার অপরাধে বিজন সরকার ও চায়না সরকারের বিরুদ্ধে পাংশা মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। মামলা নং ২, তারিখ ৭/৫/২০২২, ধারা ৩০২/২০১ পেনাল কোড ১৮৬০ তৎসহ ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন ১৯(এফ)।
মামলার বিবরণে বাদি পরিমল বিশ্বাস জানান, গোপাল বিশ্বাস গাছের ব্যবসা করে। প্রায় ১৫ বছর আগে চায়না সরকারের সাথে গোপাল বিশ্বাসের হিন্দু রীতি অনুযায়ী বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ছেলে দ্বীপ (১৩) ও মেয়ে স্বতী (১০) নামে দু’টি সন্তান আছে। গত ৫ মে সকাল অনুমান সাড়ে ১১টার সময় গোপাল বিশ্বাসের শ্যালক বিজন সরকার তাদের সরিষা ইউপির নাওড়া বনগ্রাম (ভূমিহীন পাড়া) গ্রামে চৈত্র পূজা মন্দিরে হরিব্বল অনুষ্ঠানের কথা বলে ভাই গোপাল বিশ্বাস ও তার স্ত্রী চায়না সরকারকে তাদের বাড়িতে যাওয়ার দাওয়াত দেয়। এরই প্রেক্ষিতে ৫ মে দুপুর আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে আমার ভাইয়ের স্ত্রী এবং আমার ভাইরার মেয়ে এবং একই তারিখ আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে আমার ভাই গোপাল বিশ্বাস নাওড়াবনগ্রাম বিজন সরকারের বাড়ীতে যায়। সেখানে যাওয়ার পর গোপাল বিশ্বাস এবং তার শ্যালক বিজন সরকার খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ৫ মে রাত আনুমানিক সোয়া ৭টার দিকে সরিষা ইউনিয়নের নাওড়াবনগ্রাম বিজন সরকারের পূর্ব দুয়ারী টিনের বসত ঘরের উত্তর পাশের কক্ষে চৗকির উপর বিশ্রামের জন্য বসে এবং একই ঘরের দক্ষিণ পাশে বিজন সরকারের শয়ন কক্ষের চৌকির উপর চায়না সরকার, আমার ভাইরার মেয়ে রিতু বিশ্বাস এবং বিজন সরকারের স্ত্রী সুষ্মিতা সরকার বসা ছিল। তখন আমার ভাইয়ের বসার স্থানে শক্ত কিছুর অবস্থান বুঝতে পেরে আমার ভাই গোপাল বিশ্বাস তার শ্যালক বিজন সরকারকে সেখানে কি আছে জিজ্ঞাসা করলে তখন সে আমার ভাই গোপাল বিশ্বাসকে সেখান থেকে উঠিয়ে উক্ত স্থান হতে ১টি অবৈধ পিস্তল বের করে আমার ভাইকে দেখায়। সেই অবেধ পিস্তল বিজন সরকার কোথা হতে পেয়েছে সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তাকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে বললে উক্ত বিষয় নিয়ে তার সাথে গোপাল বিশ্বাসের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আসামী বিজন সরকার তার হাতে থাকা অবৈধ পিস্তল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ভাই গোপাল বিশ্বাসের বুকের নিচে পেটের উপর বাম পাশে গুলি করে। উক্ত গুলি আমার ভাইয়ের শরীর ভেদ করে পিছন দিয়ে বের হয়ে যায়। আমার ভাই গোপাল বিশ্বাস গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তখন আমার ভাইয়ের স্ত্রী চায়না সরকার আমার ভাইকে উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক হাসপাতালে না নিয়ে স্থানীয় নার্স রুবি এবং স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক প্রদীপ কুমার প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে কালক্ষেপণ করতে থাকে। আসামী বিজন সরকারকে অপরাধের দায় থেকে বাচানোর জন্য আমার ভাই গোপাল বিশ্বাসের পরনে থাকা রক্তমাখা শার্ট তার শরীর হতে খুলে ১টি সাদা পলিথিনে ভরে চৌকির নিচে লুকিয়ে রাখে এবং মাটিতে লেগে থাকা রক্ত মুছে আলামত বিনষ্ট করে।
আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় গোপাল বিশ্বাসকে উদ্ধার করে ৫ মে রাত আনুমানিক সোয়া ৯টার দিকে এ্যাম্বুলেন্সযোগে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। ফরিদপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে রেফার করে। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোপাল বিশ্বাস ৭ মে ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে মৃত্যুবরণ করে।