সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩২ অপরাহ্ন

একুশে ফেব্রুয়ারি ও ভাষা শহিদদের কথা – শাহ মুজতবা রশীদ আল কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৮৮ Time View

একুশে ফেব্রুয়ারি ও ভাষা শহিদদের কথা
ক্স শাহ মুজতবা রশীদ আল কামাল

কোন ভাষা মরমে পশি
আকুল করে তোলে প্রাণ?
কোথায় গেলে শুনতে পাব
বাউল সুরের মধুর গান?
সে আমাদের বাংলাদেশ
আমাদেরই বাংলা রে।

মায়ের মুখে ভাষা শুনে যে ভাষা শিখি সেই তো মাতৃভাষা। আমরা বাঙালি আমাদের মাতৃভাষা- বাংলা ভাষা। সেই বাংলা ভাষায় বর্ণমালার স্বরূপ ফুটে ওঠে পলি মাটির বুকে হাতের আঙুলের টানে কিংবা কলা পাতায় নল খাগড়ার কলমে সিম পাতায় কালির আঁচড়ে। সে ভাষায় রয়েছে সোঁদা মাটির গন্ধ। রয়েছে আবহমান বাংলার লালিত ঐতিহ্যের ছোঁয়া।

মাতৃভাষা যে কোন জাতির প্রাণ শক্তি। কারণ মাতৃভাষার মাধ্যমে একজন মানুষ স্বপ্ন দেখে, কল্পনার জাল বিস্তার করে, মাতৃভাষার মাধ্যমেই তার সব চিন্তা-ভাবনা, আশা-আকাঙ্খা, আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ পায়। মূলতঃ মাতৃভাষার মাধ্যমেই যে কোন জাতির শিক্ষা-সংস্কৃতি ও দেশপ্রেম গড়ে ওঠে।

আমাদের সংস্কৃতির মূল ভিত্তিই হচ্ছে মাতৃভাষা বাংলা। মাতৃভাষার প্রতি মানুষের টান, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা সর্বজনীন। তাই মাতৃভাষার প্রতি অমর্যাদা কোন জাতি সহ্য করতে পারে না। যেমন সহ্য করতে পারেনি বাঙালি জাতি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কেড়ে নিতে চেয়েছিল বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে। তারা আমাদের ধ্বংস করার জন্য আমাদের ঘাড়ে চেপে দিতে চেয়েছিল উর্দু ভাষা। কিন্তু বাংলার গর্বিত ছাত্রসমাজ তাদের কাছে মাথা নত করেনি। তাই একুশ মানে মাথা নত না করা।

সঙ্গত কারণেই তারা প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। শত অত্যাচার নির্যাতন-নিপীড়ন রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে এদেশের তরুণ ছাত্রসমাজ অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দেয়। ভাষা আন্দোলনের ৪৮ বছর পর বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ভাষা শহিদদের চরম আত্মত্যাগ ও তাঁদের সুমহান আদর্শ বাঙালির অমর একুশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে ভাষা শহিদদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করে বাঙালি জাতিকে ধন্য করেছেন।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেস্কোর ৩০তম অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি লাভ করে।

বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠায় কানাডা প্রবাসী দু’জন বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালামের অবদান অনস্বীকার্য। সেই সাথে “মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার অব দ্যা ওয়াল্ড” নামে বহুভাষিক ও বহুজাতিক মাতৃভাষা সংস্কার নামটিও চিরস্মরণীয়।

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দু’টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সাম্ন্যজ্যবাদী ইংরেজদের কূট চক্রান্তের জালে বাঙালি জাতি পূর্ণ অধিকার থেকে হয় বঞ্চিত। আবার শুরু হয় অধিকারের আন্দোলন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, দেশ বিভাগের পর থেকেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার যখন উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তখন পূর্ব বাংলার বাঙালিরা উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য গর্জে ওঠে। শুরু হয় প্রতিবাদ। কিন্তু তৎকালীন সরকার এ দাবি না মেনে নিয়ে নির্যাতন চালায়। ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালে ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যূত্থান ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এ সবই চেতনার মূলে ছিল ভাষা আন্দোলন।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা নূরুল আমিন সরকারের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার জন্য শপথ নেয় এবং একত্রিত হতে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবং ১০ জন করে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন। পুলিশ প্রথম অবস্থায় ছাত্রদের গ্রেফতার করে, পরে ছত্রভঙ্গ করার জন্য কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ওই দিন দুপুর ২টা পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকে। বিকেল ৩টার কিছুপর ছাত্রদের মিছিল প্রাদেশিক পরিষদে যাওয়ার পথে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আসতেই পুলিশ গুলি ছোড়ে।

মহান ভাষা আন্দোলনে কতজন শহিদ হয়েছিল তা সঠিকভাবে বলা যায় না। ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পত্রিকা “সৈনিক” এর প্রতিবেদনে জানা যায় পুলিশের গুলিবর্ষণে ওই দিন ৭জন নিহত ও ৩ শতাধিক আহত হয়।

‘দৈনিক আজকের খবর’ ওই সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি গুলিতে ৯ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল। বহু লাশ গুম করে ফেলা হয়েছিল। ভারতের কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল “বৃহস্পতি ও শুক্রবার মোট ৯ জন নিহত”।

হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত “একুশে ফেব্রুয়ারি” সংকলনে অন্তর্ভূক্ত কবির উদ্দিন আহমদ তার “একুশের ইতিহাস” নিবন্ধে লিখেছেন, ৮ জনের মৃত্যুর খবর সন্দেহাতীতভাবে জানা যায়। এই সূত্র ধরে এম.আর আখতার মুকুল ৮জন ভাষা শহিদের একটি তালিকা তৈরী করেছেন। তালিকাটিতে ২১ ফেব্রুয়ারি রফিক উদ্দিন আহমদ, আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার, আব্দুস সালাম এবং ২২ ফেব্রুয়ারি শফিকুর রহমান, আব্দুল আউয়াল, আহিউল্লাহ ও অজ্ঞাত বালককে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ভাষা শহিদ হিসাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন পাঁচ জন। আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার, রফিক উদ্দিন আহমদ, আব্দুস সালাম ও শফিউর রহমান। ২০০০ সালে তাঁদের রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

ভাষা শহিদ রফিক উদ্দিন আহমেদ :
ধলেশ্বরী, গাজিখালি, কালিগঙ্গা, বংশী আর নলগোরা নদীর পলি মাটিতে গড়া একটা জনপদ। তার নাম সিঙ্গাইর। নদীর উথাল-পাথাল ঢেউ উপচে এসে পড়ে এই পলি মাটির বুকে। নিত্য চলে ভাঙা-গড়ার খেলা। স্বভাবত এখানকার মানুষ সাহসী-সংগ্রামী। ভাষা শহিদ রফিক এই মাটিরই সাহসী সন্তান। তিনি ১৯২৬ সালের ৩০শে অক্টোবর শনিবার মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানাধীন পারিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল লতিফ মিয়া আর মাতার নাম রাফিজা খানম। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ১৯৫২ সালে শহিদ রফিকের বয়স হয়েছিল ২৬ বছর। মানিকগঞ্জের বায়রা স্কুল থেকে ১৯৪৯ সালে মেট্রিক পাশ করেন তিনি। তারপর মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে তিনি জগন্নাথ কলেজের ছাত্র ছিলেন। ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে রফিক ১৪৪ ধারা আইন ভঙ্গ করে মিছিলে অংশ নিয়ে রাজপথ প্রকম্পিত করে। পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের কারণে ছাত্ররা বিশ^বিদ্যালয় ছেড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মোড়ে গেলে পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় সংঘর্ষ। এ সময় পুলিশের গুলিতে রফিকের মাথার খুলি উড়ে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তখনই মারা যান তিনি। মেডিকেল হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের পূর্ব দিকে তার লাশ পড়েছিল। ৬/৭ জন ধরাধরি করে তার লাশ এনাটমি হলের পিছনের বারান্দায় এনে রাখে। এরপর ডাঃ মশাররফুর রহমান খান রফিকের ছিটকে পড়া মগজ হাতে করে নিয়ে যান। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ওবায়দুল্লাহ’র উপস্থিতিতে তার জানাজা পড়ান আজিমপুর মসজিদের ইমাম হাফেজ আব্দুল গফুর। সংগোপনে আত্মীয়-স্বজনের অজ্ঞাতে আজিমপুর কবরস্থানের অসংরক্ষিত এলাকায় দাফন করা হয় শহিদ রফিকের মরদেহ।

ভাষা শহিদ আবুল বরকত :
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার ভরতপুর থানার অন্তর্গত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নদী মেঘনা সুন্দর মনোরম পরিবেশে ১৯২৭ সালের ১৬ জুন বাবলা গ্রামে তাঁর জন্ম। সেখানকার তালিবপুর হাই স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে মেট্রিক এবং বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে আই.এ পাশ করেন তিনি।

আবুল বরকত পকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালে মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন। তারপর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখে রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ গুলি চালালে হোস্টেলে ১২ নম্বর সেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন আবুল বরকত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগে ভর্তি অবস্থায় রাত ৮টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বরকত যেখানে শহিদ হন ঠিক সেখানেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শহীদ মিনার। আবুল বরকত লাল রক্তেস্নাত হয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে গেলেন।

ভাষা শহিদ আব্দুস সালাম :
মাতৃভাষা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আব্দুস সালাম জীবন উৎসর্গ করে ইতিহাসের পাতায় ভাষা শহিদ হিসেবে অমর হয়ে রয়েছেন। ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে (বর্তমানে সালাম নগর) ১৯২৫ সালে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম মোঃ ফাজিল মিয়া ও মাতার নাম দৌলতন নেছা। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। কর্ম জীবনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাষ্ট্রিজ বিভাগে ইডেন বিল্ডিং-এ রেকর্ডকিপার ছিলেন তিনি।

আব্দুস সালাম ছাত্র জীবনে স্বদেশী আন্দোলনের সভা-সমাবেশে বিভিন্ন সময় যোগদান করেছেন। সেই পূর্বধারায় তিনি ভাষা আন্দোলনের সভা-সমাবেশে যোগদান করতে লাগলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নিলে ছাত্র-জনতার উপর পুলিশের এলোপাথারি গুলিতে আব্দুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত আবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭ এপ্রিল ১৯৫২ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ভাষা শহিদ আব্দুল জব্বার :
আব্দুল জব্বার ১৯১৯ সালের ১১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার গফর গাঁও থানার রাওনা ইউনিয়ন এর পাঁচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হোসেন আলী শেখ আর মাতার নাম সাফাতুন নেসা। পাঁচ ভাই দু’বোনের মধ্যে আব্দুল জব্বার ছিলেন সবার বড়। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যান্সারে আক্রান্ত শ্বাশুড়িকে নিয়ে ঢাকায় আসেন আব্দুল জব্বার।

২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশের গুলিতে তিনি আহত হন। ছাত্ররা ধরাধরি করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎকরা মৃত ঘোষণা করেন।

আব্দুল জব্বার বুকের তাজা লাল রক্তের আলপনা এঁকে বর্ণমালাকে বর্ণিল করে ইতিহাসের পাতায় তিনি অমর।

ভাষা শহিদ শফিউর রহমান :
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাহবুবুর রহমান আর মাতার নাম কানেওতুননেসা। তিনি ছিলেন পিতা-মাতার সাত সন্তানের মধ্যে প্রথম। ১৯৫২’র ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটার দিকে ঢাকার রঘুনাথ দাস লেনে বাসা থেকে সাইকেল চড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হন। নবাবপুর রোডে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্বদিনের পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ পুনরায় গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলি শফিউরের পিঠে এসে লাগে। আহত অবস্থায় তাঁকে শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার সফল না হওয়ায় ঐদিন সন্ধ্যা সাতটায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলার বীর শফিউর রহমান
ভাষার মান রাখিতে যে দিল প্রাণ।
যাঁর শোনিতে রাঙানো সরণি ধরণী হইল লাল,
বাঙলা বাঙালি স্মরিবে তাঁহারে চিরদিন, চিরকাল।

১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রাণ হারানোর তালিকায় আরো দু’টি নাম পাওয়া যায়- অহিউল্লাহ ও আব্দুল আউয়াল। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউটের ওয়েব সাইটে ভাষা শহিদ হিসেবে এই দু’জনের নাম-পরিচয় উল্লেখ আছে।

ভাষা শহিদদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শহিদের নাম অহিউল্লাহ। পিতার নাম হাবিবুর রহমান। ভাষা শহিদ অহিউল্লাহ পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি। ২২ ফেব্রুয়ারি নবাবপুর রোডের মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরবর্তীতে মারা যান তিনি। তাঁর লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও সালাউদ্দিন নামেও একজন ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহিদ হন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

একুশের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হলেও একুশের মূল চেতনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে এখনো অর্জিত হয়নি। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ও বিভাগ বাংলায় চলবে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এখনও সর্বস্তরে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চালু হয়নি। এখনো অন্যায়-অবিচার ও শোষন-বঞ্চনামুক্ত, কু-সংস্কারমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। ভাষা শহিদদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা পূরণে যা অতিব জরুরী।

একুশের চেতনা আমাদের বর্তমানের শক্তি ও ভবিষ্যতের পাথেয়। আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে হবে। ভাষা শহিদদের আত্মদানের চেতনাকে লালন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই তাঁদের প্রতি গভীর ভালবাসা জানানো সম্ভব হবে।

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি…”

তথ্য সূত্র :
এম.আর আখতার মুকুল, বই- সোনালী আকাশ, রূপালী বাতাস।
বশীর আল হেলাল, বই- ভাষা আন্দলোনের ইতিহাস।
আবুল মুনছুর আহম্মেদ, বই- আমার দেখা রাজনীতির ৫০ বছর।
ড. আব্দুল হান্নান, বই- ভাষা আন্দোলন।

মোঃ নজাবত আলী, প্রবন্ধ- ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ভাষা শহীদদের পরিচিতি ও মাতৃভাষার গুরুত্ব, দৈনিক যায় যায় দিন।

হাসান হামিদ, প্রবন্ধ- ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, আমাদের ভাষা শহীদ আসলে কতজন? দৈনিক প্রথম আলো।

লেখক : – সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান
ডা. আবুল হোসেন কলেজ, রাজবাড়ী।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com