বৃহস্পতিবার ৮০ বছরে পা রেখে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করেন বিজ্ঞানমনস্ক কবি ও লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ এসএম কায়কোবাদ। তার মায়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘মা বলতেন দুর্ভিক্ষের সময়, বৈশাখ মাসের বৃহস্পতিবার ভোরে তোর জন্ম’ তাই বৈশাখ মাসের বৃহস্পতিবার ধরে এ বছর পহেলা বৈশাখ বৃহস্পতিবার জন্ম দিন পড়েছে উল্লেখ করেন তিনি। বৈশাখ মাসের বৃহস্পতিবার দিন তার জন্য স্মরণীয়। এদিন অনেকেই মোবাইল ফোনে, আবার কেউ ফেসবুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ এসএম কায়কোবাদের জন্ম বাংলা ১৩৫০ সালের বৈশাখ মাসে। ইংরেজি ১৯৪৩ সালে। তার প্রকৃত নাম শরীফ মোহাম্মদ কায়কোবাদ। জন্ম পাংশার কশবামাজাইল ইউপির সলুয়া গ্রামে। বিজ্ঞানমনস্ক লোক পেলেই তিনি আড্ডায় মগ্ন হয়ে পড়েন। নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চার অনুপ্রেরণা দেন। কর্মব্যস্ততায় এ ভাবেই জীবনের ৭৯টি বছর পেরিয়ে ৮০ তে পা রাখার বিষয়ে কৌতহলী তিনি। বলেন, এতোদিন বেঁচে আছি। মানুষ এতো বছর পর্যন্ত বাঁচে!
অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম কায়কোবাদ ১৯৬৪ সালে কশবামাজাইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে লেটার মার্কসসহ বিশেষ কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। সরকারী রাজেন্দ্র কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ‘দেওয়াল পত্রিকা’ ও ‘প্রতিধ্বনি’ নামক পত্রিকার সহ-সম্পাদক থাকাসহ নিয়মিত লিখতেন। রাজেন্দ্র কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে বিএসসি পাস করেন। ১৯৭২ সালে সরকারীভাবে স্কলারশীপ নিয়ে পড়াশোনা করতে পূর্ব জার্মানীতে যান। সেখানে কৃষিতে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পশ্চিম জার্মানীর পশ্চিম বার্লিনের কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিজিটি/ এমফিল ও আন্তর্জাতিক কৃষি অর্থনীতিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তিনি লন্ডন থেকে ইংরেজি ভাষায় ও জার্মানীর লীপজিগ শহর থেকে ইংরেজি ও জার্মান ভাষায় ডিপ্লোমা করেন। প্রগতিশীল বস্তুবাদী দর্শনের উপরও ডিপ্লোমা করেন তিনি। সেখানে বন্ধুদের সাথে সাহিত্য চর্চা করতেন। যোগাযোগ, প্রেরণা ও শতফুল ফুটতে দাও নামক তিনটি পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। সে সময় ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্ডিয়া ও নেপালসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিক্ষা ও ভ্রমণ উপলক্ষে বারবার ভ্রমণ করেছিলেন।
দেশে ফিরে তিনি কলেজে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। ২০০৮ সালে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শোমসপুর আবু তালেব ডিগ্রী কলেজ থেকে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন। বর্তমানে ঢাকায় কলেজ অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি কলেজে অধ্যক্ষ পদে কর্মরত আছেন এবং নিয়মিত সাহিত্য চর্চা করছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের নির্বাচিত লেখক কবিদের সমন্বয়ে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি যৌথকাব্যগ্রন্থে তার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। পাংশার মুক্তকলম সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন পরিষদের উপদেষ্টা তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ কবিতা সংসদ ও এয়াকুব আলী চৌধুরী স্মৃতি পাঠাগারের সদস্য। ঢাকায় প্রগতিশীল চর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। তার লেখনীতে প্রগতিশীলতা, মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, মা-মাটি, বিজ্ঞান ও সাধরণ মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং মমত্ববোধ লক্ষণীয়। তিনি সাত রঙা ফুলসহ একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। আলাপচারিতায় বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে বিজ্ঞানমনস্কতা ও সচেতনতা সৃষ্টি এখন সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেন তিনি।