রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও পাংশা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জালাল বিশ্বাসের দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় পাংশা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম (৩৫) ও পাংশা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ নেতা ফজলুল হক ফরহাদ (৪০) কে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম পাংশা পৌরসভার কুড়াপাড়া গ্রামের রফিক খালাসীর পুত্র। যুবলীগ নেতা ফজলুল হক ফরহাদ পাংশা পৌরসভার নারায়নপুর গ্রামের মৃত তোফাজ্জেল হোসেনের পুত্র। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ অন্য মামলার আকাশ (১৮) নামের এক আসামীকেও গ্রেফতার করে।
জানা যায়, ফজলুল হক ফরহাদ পাংশা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক ছিলেন। এ বছর জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত পাংশা পৌরসভার নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন তিনি এবং যুবলীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের আগে ও পরবর্তি সময়ে ফজলুল হক ফরহাদ ও জালাল বিশ্বাস একই সাথে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে দুজনার মধ্যে মতবিরোধ এবং গত সোমবার পাংশা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরে ব্রীজ নির্মাণের সিডিউল ক্রয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান ভাইস চেয়ারম্যান জালাল বিশ্বাসের চাঁদাবাজির মামলা দায়ের এবং ওই মামলার ১নং আসামী তাজুল ইসলাম ও ২নং আসামী ফজলুল হক ফরহাদের গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করেন। মামলা নং ৫, তাং ১২/০৪/২০২২ ইং। ধারা ১৪৩/৩৮৫/৩৮৬/৪২৭/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০। মামলায় তাজুল ইসলাম, ফজলুল হক ফরহাদ, রুবেল, হৃদয় ঠাকুর, গৌতম কুমার, জিদান ও মুন্নুকে এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলায় জালাল বিশ্বাস অভিযোগ করেন- তিনি কলেজ মোড়ে অবস্থিত জেলা পরিষদের ৫শতাংশ জায়গা লিজ নিয়ে মাটি ভরাট করে দোকান ঘর করার জন্য প্রস্তুত করলে আসামী তাজুল ইসলাম ও ফজলুল হক ফরহাদ অন্যান্য আসামীদের নিয়ে গত ১০ এপ্রিল দুপুর আনুমানিক পৌনে দুইটার দিকে উক্ত জমিতে এসে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তখন তিনি আসামী তাজুল ইসলামের নিকট ২০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করেন। পরবর্তীতে বাকী টাকার জন্য বিভিন্ন সময়ে আসামীরা তাকে চাপ প্রয়োগ করে। গত ১১ এপ্রিল দুপুর পৌন ১টার দিকে আসামীগণ বে-আইনী জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রসহ পাংশা উপজেলা পরিষদে জালাল বিশ্বাসের কার্যালয়ে প্রবেশ করে তার নিকট বাকি চাঁদার টাকা দাবি করে। জালাল বিশ্বাস আর কোন চাঁদা দিতে পারবে না বললে আসামী তাজুল ইসলাম জালাল বিশ্বাসের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতিসহ খুন জখমের হুমকি দিয়ে চলে যায়। সর্বশেষ ১২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টার সময় আসামীরা পাংশা উপজেলা পরিষদে জালাল বিশ্বাসের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে না পেয়ে অফিসের দুটি থাইগ্লাস ভাংচুর করে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে চলে যায়।
এদিকে, মামলার বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামী পাংশা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম ও যুবলীগ নেতা ফজলুল হক ফরহাদের পরিবারের সমর্থকরা বলেন, তারা গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। হয়রানীর উদ্দেশ্যে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাজুল ইসলাম ও ফরহাদের পরিবারের লোকজন জানায়, ফজলুল হক ফরহাদ পাংশা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক ছিলেন। এ বছর জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত পাংশা পৌরসভার নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন তিনি এবং যুবলীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের আগে ও পরবর্তী সময়ে ফজলুল হক ফরহাদ ও জালাল বিশ্বাস একই সাথে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে দু’জনার মধ্যে মতবিরোধ এবং গত সোমবার পাংশা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরে ব্রীজ নির্মাণের সিডিউল ক্রয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। দ্বন্দ্বের জের ধরে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে তাদের হয়রানী করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তাজুল ও ফরহাদের পরিবারের লোকজন। তারা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। চাঁদাবাজির মামলা দায়ের ও গ্রেফতারের বিষয়ে পাংশার রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।