গত বর্ষা মৌসুম থেকে টানা ভোগান্তির শিকার হয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচল করছে যানবাহন চালক ও যাত্রীরা। ঈদে ঘরমুখি ও কর্মমুখি মানুষের ভোগান্তির মাত্রা কয়েকগুণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাট সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভৌগোলিক কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট গুরুত্ব বহন করে। দক্ষিণ-পশ্চিঞ্চলের ২১ জেলার রাজধানীর সাথে যোগাযোগের প্রধান নৌরুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া। এই নৌরুটের লঞ্চ ঘাট ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে। বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশ (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট অফিস সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমান ১১টি রোরো (বড়), ৬টি ইউটিলিটি (ছোট), টানা ফেরি ২টি এবং কে-টাইপ (মাঝারী) ১টি সহ মোট ২০টি ফেরি চলাচল করে। ২০টি ফেরি স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করলে ২৪ ঘণ্টায় গড়ে যাত্রীবাহী বাস ৬৩৮, পন্যবাহী ট্রাক ১২৫৮ এবং প্রাইভেট-মাক্রোবাস এবং ছোট গাড়ী ১৮৭২ সহ মোট ৩৭৬৮ যানবাহন দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়া ঘাটে যায়। সেই হিসেবে পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে নদী পার হয়ে আসে ৩৭৬৮ শত বিভিন্ন প্রকার যানবাহন।
অনুসন্ধানে জানা, গত বর্ষায় দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের অর্ধেক অংশ পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। লঞ্চে উঠা-নামার কাঠের ব্রীজটি বিকল হয়ে পরে। বর্ষা মৌসুমে জরুরী ভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে কোন রকম লঞ্চ ঘাটটি সচল রাখে। বিকল থাকা লঞ্চ ঘাটের কাঠের ব্রীজ দুইটি দীর্ঘদিন যাবৎ বিকল রয়েছে। জোড়া তালি দিয়ে এই লঞ্চ ঘাট ব্যবহারকারী যাত্রীরা নানা প্রকার দুর্ভোগ শিকার করে চলাচল করছে সারা বছর। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় লঞ্চ ঘাট থেকে বছরের ২ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হলেও বিকল ঘাটটি অদৃশ্য কারণে মেরামত করছে না বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দৌলতদিয়া পারে ৭টি ফেরি ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে ১ ও ২নং ফেরি ঘাট উদ্বোধনের পর থেকে প্রায় ৫বছর যাবৎ বিকল রয়েছে। ২নং ফেরি ঘাট গত ৩ বছর যাবৎ বিকল রয়েছে। ৬নং ফেরি ঘাট বর্ষা মৌসুমের পর থেকে বিকল রয়েছে। ৩ ও ৪নং ফেরি ঘাট কোন রকম সচল রাখা হয়েছে। ৫ ও ৭নং ফেরি ঘাট সচল রয়েছে। তবে নদীর পানি গভীরতা অনেক নিচুতে যাওয়ায় ফেরি থেকে ভারি যানবাহন উঠা-নামা করতে সমস্যা হয়। মাঝে মধ্যে সংযোগ সড়কে অনেক যানবাহন বিকল হয়ে পরে। বিকল যানবাহনগুলো বিআইডব্লিউটিএ নিজস্ব রেকার দিয়ে সরানো হয়। যানবাহন চালককে র্রেকার বাবদ ঘণ্টায় ৩৪শত টাকা গুনতে হয়। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাটের ম্যানেজার নুরুল আনোয়ার মিলন জানান, বর্ষা মৌসুমে লঞ্চ ঘাটের কিছু অংশ ভেঙ্গে যায়। ঘাট ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। প্রতিনিয়ত এখান দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অনেকে পরে যায়। তিনি বলেন, লঞ্চ ঘাট থেকে বিআইডব্লিউটিএ প্রতি বছর রাজস্ব আদায় করলেও কি কারণে তারা নিরব রয়েছে বুঝতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমের পর থেকে টানা দুর্ভোগ শিকার করে যাত্রীরা চলাচল করছে। লঞ্চ ঘাটের সংযোগ সড়ক মেরামত না করলে ঈদে ঘর মুখি ও ঈদ শেষে কর্মমুখি যাত্রীদের কয়েক গুন দুর্ভোগ বেশি হবে।
দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট ইজারাদার বদিরুজ্জামান টোকন জানান, অনেক টাকা দিয়ে এই ঘাট ইজারা নিয়েছি। কিন্ত রাস্তা খারাপ থাকার কারণে যাত্রী অনেক কম চলাচল করে। যাত্রীরা বিকল্প পথে চলে যায়। এই ঘাট দিয়ে যাত্রী কম চলচল করার কারণে আমাদের অনেক লোকসান হবে। আরিচা নদী বন্দরের পোর্ট অফিসার শাহ আলম জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নেরুটের দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট ব্যবহার করে যাত্রীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঘাটটি মেরামত করার জন্য বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ইঞ্জিনিয়ার বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। খুব তারাতারি মেরামত করা হবে। বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম দৌলতদিয়া ঘাটের যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে অবশ্যই ঘাটটি মেরামত করা হবে। তবে পানি বৃদ্ধি না পাওয়া পর্যন্ত ঘাটি এভাবেই থাকবে। যাত্রীদের সাময়িক দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হবে। বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা বন্দরের উপসহকারী পরিচালক খালেদ নেওয়াজ জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের পদ্মা ও যমুনা নদীর পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় নৌযান স্বাভাবিক চলাচল করতে পারছে না। যে কারণে প্রতিনিয়ত উভয় ঘাটে কিছু যানবাহন ফেরি পারের অপেক্ষায় থাকছে। তবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে এই সমস্যা থাকবে না।