বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
সকল প্রশংসা মহান রব্বুল আলামীনের জন্য যিনি বিশ্বজগতের একমাত্র প্রতিপালক। দরুদ, সালাত ও সালাম তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এঁর প্রতি। প্রত্যকটি ইবাদত বিধিবদ্ধ করার পেছনে মহান আল্লাহ্ তায়ালার কোন না কোন উদ্দেশ্য রয়েছে। এ হিসেবে সাওম তথা রোযার বিধানের দ্বারাও বান্দার আতœাকে পরিশুদ্ধ করা মহান আল্লাহ্ তায়ালার প্রধান উদ্দেশ্য। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
সাওম আতœশুদ্ধির বড় মাধ্যমঃ সাওম আতœশুদ্ধির একটি অন্যতম মাধ্যম। আতœাকে সাওমের ন্যায় অন্য কোনো আমল বা ইবাদত দ্বারা পরিশুদ্ধি করা যায় না। এর বিশ্লেষণ নিম্নরূপ :
১। সিয়াম সাধনার মূল লক্ষ তাকওয়া অর্জনঃ সিয়াম সাধনার মূল লক্ষ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। যেমন মহান আলাহ পাকের বাণীঃ অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য সাওম বা রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতগণের উপর। আশা করা যায় তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণ ও বৈশিষ্ট্য জাগ্রত হবে। সূরা বাকারা ১৮৩।
২। রিপু দমন করার মাধ্যমঃ সিয়াম সাধনার ফলে ব্যক্তির কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ও রিপুসমূহ দমন হয়। এতে তার আতœা পরিশুদ্ধি হয়। সিয়াম সাধনার ফলে তার সব কাজ নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট বিধানের ভিত্তিতে চলার কারণে তার আতœার কোনো প্রকার ক্ষমতা চলে না। ফলে আতœা নত হয়ে বশ্যতা স্বীকার করে।
৩। অন্তরে আলো বা নূর পয়দা হয়ঃ সিয়াম সাধনার দ্বারা আতœা পবিত্র হয়। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ যখন নিজের কলব বা আতœাকে পবিত্র করে, তখনই মহান আল্লাহ পাকের নূর তার অন্তরে স্থান পায়।
৪। পাশবিক শক্তিকে জ্বালিয়ে দেয়ঃ রমজানের অর্থই হলো অন্তরে বিদ্যমান সকল পাশবিক শক্তিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে মানবিক শক্তিকে প্রবল ও সুদৃঢ় করা।
৫। অন্তরকে পবিত্র করেঃ শায়েখ আব্দুল কাদের জিলানী আল-হাসানি ওয়াল-হুসাইনি বলেছেন যে, রমজানকে রমজান এজন্য নাম রাখা হয়েছে যে, লিআন্নাহু ইয়াগসিলুল আবদানা মিনাল আছামি গাসলান ওয়া ইউতহিরুল কুলুবি তাতহিরান।
অর্থাৎ, কেননা এ মাস মানুষের শরীরকে গুনাহ থেকে বিধৌত করে এবং অন্তরসমূহকে পবিত্র করে।
৬। ফেরেশতা শক্তিকে প্রবল এবং পশু শক্তিকে দুর্বল করেঃ হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দেস দেহলবী (রহঃ) বলেন, সাওম শ্রেষ্ঠ পুণ্যের কাজ। কেননা সাওম ফেরেশতা শক্তিকে প্রবল ও পশু শক্তিকে দুর্বল করে দেয়।
৭। দেহ ও আতœার প্রধান দাবিগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ দেহ ও আতœার তিনটি দাবি হচ্ছে মূল। বস্তুত এ তিনটিই অধিকতর শক্তিসম্পন্ন দাবি। এ তিনটি হলোঃ ক। ক্ষুন্নিবৃত্তির দাবি। জীবন রক্ষা একমাত্র এরই উপর নির্ভর করে। খ। যৌন আবেগের দাবি। মানুষের বংশ তথা মানব জাতির স্থিতির এটাই একমাত্র উপায়।
গ। শান্তি ও বিশ্রাম গ্রহণের দাবি। কর্ম শক্তিকে নতুন করে জাগ্রত এবং বলিষ্ঠ করে তোলার জন্য এটা অপরিহার্য।
সাওম তথা রোযা এ তিনটি দাবিকে সীমার মধ্যে রাখে। যেমন হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ কুল্লু আমালি-বনি আদামা ইউদাআফুল হাসানাতা বিআশারি আমছালিহা ইলা সাব্যয়ী মিয়াতি দি’ফি কালা-ল্লালাহু তায়ালা ইল্লা-সাওমা ফাইন্নাহু লি ওয়া আনা আজ্ঝি বিহি। অর্থাৎ, মানুষের প্রত্যেকটি কাজের ফল মহান আল্লাহ পাকের দরবারে কিছু না কিছু বৃদ্ধি পায়, একটি নেক কাজের ফল দশ গুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বেশী হয়; কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোযাকে এর মধ্যে গণ্য করা হবে না । কারণ রোযা খাস করে আমারই জন্য রাখা হয় আর আমিই এর প্রতিদান দান করব।
মানবের আতœার পরিশুদ্ধি এবং কুপ্রবৃত্তিকে দমন করে রাখার জন্য সাওমের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ আমল আর কিছুই নেই। আতœার পরিশুদ্ধি ও কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং রিপুসমূহকে অবদমন করার জন্য সাওমের বিকল্প নেই।