মৌমাছি সংকট। পরাগায়ন পর্যাপ্ত হচ্ছে না। যে কারণে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনও ভাল হচ্ছে না। পরাগায়নের অভাবে ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে হয়ে পড়ছেন চাষীরা। সরেজমিন রাজবাড়ী জেলার পাংশা-কালুখালী-বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দ উপজেলার ফসলি মাঠ জুড়ে চোখে পড়বে সাদা ফুলের সমারোহ। কৃষকদের স্থানীয় ভাষায় এটাকে বলে দানা। আবার কেউ বলে থাকেন পিঁয়াজের ফুল। অনেকে বলে কালো সোনা। আসলে পেঁয়াজ বীজ। এই পেঁয়াজ ফুলের আবাদে কেউ কেউ ওষুধ স্প্রে করছে, কেউ আগাছা তোলার কাজ করছে। এই ফসল অনেক লাভবান জনক। এটা থেকে পেঁয়াজের পাশাপাশি পিঁয়াজের বীজ পাওয়া যায়। কৃষক অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভজনক। অল্প ব্যয়ের এই ফসল ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এই রাজবাড়ী জেলার কৃষকদের মাঝে। প্রতিবছর কৃষক পিঁয়াজের পাশাপাশি বীজ উৎপাদনেও আগ্রহী হয়। কিন্তু এ বছর মৌমাছি সংকটে পেঁয়াজ বীজে পরাগায়ণ না ঘটায় হতাশ বীজ উৎপাদনকারী চাষীরা। শুকিয়ে যাচ্ছে কদম গুলো।
পাংশা উপজেলার চাষী আহম্মদ আলী জানান, এবছর প্রচুর খরচ হয়েছে। এক কেজি বীজ কিনতে খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা। এবছর পেঁয়াজ বীজের ফুল ভালো হলেও বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে সেই সাথে বাগানে মৌমাছি না আসায় পরাগায়ন হচ্ছে না। ফলে পেঁয়াজ ফুল শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। যে কারণে ফুল থেকে বীজ তৈরি হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় কৃষি অফিসের কোনো সহযোগিতা ও পরামর্শ পাচ্ছেন না।
কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের চাষী শহিদুল ইসলাম জানান, এবছর প্রায় ৩বিঘা জমিতে পিঁয়াজ বীজের আবাদ করা হয়েছে। বীজ ভাল দেখা গেলেও অনেক শুকিয়ে যাচ্ছে। এবছর ঘন বৃষ্টির কারণে ভালো ফলনের আশা নাই, মৌমাছি নাই, ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে। এবছর লোকসান গুনতে হবে। এখন পর্যন্ত কোন কৃষি কর্মকর্তারা আসেন নাই।
আরেক কৃষক আলতাব প্রামানিক জানায়, বৃষ্টিতে এবার খুব ক্ষতি হয়েগেছে। মৌমাছি না থাকায় বীজ হচ্ছে না। ফলে ফুল শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। গত বছর এক বিঘায় যে বীজ হয়েছিলো এবার চার বিঘা জমিতেও সেই বীজ হবে না।
শাবানা বেগম বলেন, খরচের কথা তো কয়াই যাবে না। এক কেজি দানার দাম পাঁচ হাজার টাকা। সেই দানাডা এবার হতেইছেনা মাইর চলে গেলো। এই দানা হবি কি সুম্বাগত বৃষ্টি হলি আর হনি নে এ দাদা শ্যাষ। তালি কৃষক কিভাবে বাঁচপি।যারা কেনেচে এক কেজি দানা পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে চারা দিছে সেই জিনিস যদি মাইর যায় তাহলি কৃষক বাঁচে থাকপি ক্যাম্মা। তিনি আরও জানায়,মাছি নাই বলেই তো হবি নে। মাছি থাকলি তো তাও কিছু হতে নে। বৃষ্টিতে মধু ঝরে গেছে তাই মাছি নাই। এখন ধরেন এটা নিয়ে কষ্টই। কৃষক মরবি,কৃষকের কিছুই নাই। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে,এবছর জেলায় ১৯৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়েছে। গত বছর ছিলো ১৭৭ হেক্টর। পেঁয়াজ বীজ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে এর আবাদ। এবছর জেলায় ৯৫ মেট্রিকটণ পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর জানান, পেঁয়াজের পরাগায়নের ক্ষেত্রে মৌমাছি উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রাখে না। কারণ পেঁয়াজের ফুল সাদা হয় এবং রেনু শুষ্ক হওয়ায় মৌমাছির আকর্ষন কম থাকে। কৃষকদের পরামর্শের জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় কৃষকদের পাশে থাকে। এবং ডাল,তেল,মসলা, পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে কৃষকদের এসএমই প্রকল্পের মাধ্যেমে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করছে।