সনজিৎ কুমার দাস, বালিয়াকান্দি ॥
স্বাধীনতার ৫১ বছরও পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রীর নামে “ লিয়াকত আলী স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজ”। বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণের প্রস্তাবের রেজুলেশন করা হয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায়। ঐ বছর ১০ এপ্রিল স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় লিয়াকত আলী স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজ এর নাম পরিবর্তন করে“ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজ ”এর নাম প্রস্তাব করে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে পাঠানোর হয়েছে বলে জানায় অধ্যক্ষ এ কে এম সিরাজুল ইসলাম।
এক সময়ের খর ¯্রােতা গড়াই আর চিত্রা নদীর মিলন স্থল রাজবাড়ী জেলার নারুয়া ইউনিয়নে আদি ব্যবসা কেন্দ্র নারুয়া বাজার । বর্তমান বালিয়াকান্দি উপজেলা শহর হতে সড়ক পথে সোজা ১০ কিঃ মিঃ পশ্চিমে নারুয়া বাজার। এর উত্তরে কালুখালী উপজেলা দক্ষিনে মাগুড়া জেলার শ্রীপুর উপজেলা। বাজার সংলগ্ন স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটি। দীর্ঘ ৭১ বছরের পথচলা এ প্রতিষ্ঠানটিতে মুক্তিযোদ্ধা হতে শুরু করে বহু গুনী জন শিক্ষা গ্রহণ করলেও স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন হয়নি।
জানা গেছে, জমিদারী প্রথা চালু থাকা অবস্থায় নারুয়া এলাকা শিক্ষা বিস্তার তেমন অগ্রসর ছিল না। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার হার ছিল নগন্য। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর ১৯২৭ সালে নারুয়া ইউনিয়নে প্রথম মুসলিম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় মোঃ ইসমাইল হোসেন বিশ্বাস। এলাকার শিক্ষা বিস্তারের কথা চিন্তা করে ১৯৩২ সালে তিনি পাটকিয়াবাড়ী গ্রামে প্রথম হতে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত এম. ই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫০ সালে বাঙ্গালী বিদ্বেষী প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান আতোতায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর সারা পাকিস্তান ব্যাপী শোকের অংশ হিসেবে নারুয়া বাজারে বটতলায় এক শোক সভায় তার স্মৃতি রক্ষার্থে “লিয়াকত আলী মেমোরিয়াল হাই স্কুল” প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৫১ সালে জানুয়ারির প্রথমে নারুয়া বাজারে আমির আলী মন্ডলের টিনের ঘরে শিক্ষানুরাগী উদ্যমী যুবক মোঃ ইসমাইল হোসেন বিশ্বাস, হাতেম পিএলএ , নকাতুল্লা, ডাঃ মাখন লাল রায়, কাজী নিয়ামত সেখ , মনসূর আলী মোল্যা ,তাছের আলী খান সহ সকলে সিদ্ধান্ত নেয় পাটকিয়াবাড়ীতে প্রথম হতে পঞ্চম শ্রেণী থাকবে আর এই ঘরে “লিয়াকত আলী মেমোরিয়াল হাই স্কুল” নামে ষষ্ঠ হতে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পাঠদান চলবে। প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন মোঃ ইসমাইল হোসেন বিশ্বাস।প্রতিষ্ঠাতা সহকারী শিক্ষক হিসেবে গোপী নাথ সাহা, আব্দুল ওয়াজেদ শিকদার, আজিজুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, প্রশান্ত কুমার সাহা, একেএম সামসুদ্দোহা দায়িত্ব পালন করেন। পরে এলাকার দানবীর বিল ধামু গ্রামের ফটিক মন্ডল ২.৮৫ একর জমির উপর বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৩ সালে কলেজ শাখা অনুমোদন হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি “লিয়াকত আলী স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজ” নামে চলছে। স্কুল শাখায় ২ শিফটে ক্লাস চলে । স্কুল কলেজ মিলে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১হাজার ৫ শ জন । প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্মচারীর সংখ্যা রয়েছে ৬৮ জন। এ প্রতিষ্ঠান হতে শিক্ষা লাভ করে দেশ বিদেশে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সচিব সহ বহু গুনীজন গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এদের মধ্যে সচিব মোঃ ফয়জুল্লাহ, প্রকৌশলী তোফাজ্জেল হোসেন,ডাঃ প্রশান্ত কুমার সাহা, অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, ডাঃ আজিজুল ইসলাম, প্রকৌশলী মোতাহার হোসেন, প্রকৌশলী আবুল কাশেম, ডাঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, ডাঃ ফারুক হোসেন, ড. সাজ্জাদ হোসেন, মেজর সাইদ, যুগ্ম সচিব রেজাউল করিম সহ নাম না জানা অনেকে। এ প্রতিষ্ঠানের কারনেই আজ নারুয়া শিক্ষা নগরীতে পরিনত হয়েছে। এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ২ টি প্রাইমারী স্কুল, একটি বালিকা বিদ্যালয় ১টি কলেজিয়েট স্কুল, একটি ডিগ্রী কলেজ। এ প্রতিষ্ঠানে ২০০৯ সাল হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একাধারে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি দায়িত্ব পালন করলেও অজ্ঞাত কারণে এ স্বাধীনতা বিরোধীর নাম বাদ দেওয়ার কোন উদ্যোগ নেননি। অবশেষে এমপির কাছে গণদাবীর প্রেক্ষিতে পাকমন্ত্রীর নামের বিষয়টি পরিবর্তনের আশ্বস্তের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি ইউএনও এইচ এম রকিব হায়দার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি রেজুলেশনে আনেন। দীর্ঘ ৫টি বছর পেরিয়ে গেলেও সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সহ সচেতনমহল দ্রুত বাস্তবায়নের দাবী করছে।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান প্রধান অধ্যক্ষ এ কে এম সিরাজুল হক জানান, নাম পরিবর্তনের বিষয়টি অনেক আগেই রেজুলেশন করে পাঠানো হয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারনে ঐভাবেই পড়ে রয়েছে।