ভয়াবহ আগুনে শাবানার স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে পিতৃমাতৃহীন ও স্বামী হারা শাবানার স্বপ্ন। যিনি আশা করেছিলেন সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে একদিন এক টুকরো জমি কিনে সেখানে বাড়ি করবেন। একমাত্র ছেলে স্বাধীনকে (১৭) বিদেশ পাঠিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন। একটু সুখের নাগাল পাবেন। এ জন্য তিল তিল করে জমিয়েছিলেন ৩ লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু আগুনে তার জমানো সব টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুড়ে গেছে তার সুখের নাগাল পাওয়ার স্বপ্ন। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের ১ নং আশ্রায়ন কেন্দ্রে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ১০ টি পরিবারের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই আশ্রয় কেন্দ্রের একটি ঘরে বসবাস করতেন শাবানা ও তার একমাত্র ছেলে।
জানা গেছে, তেনাপঁচা গ্রামের হতদরিদ্র মালেক শেখের মেয়ে শাবানা। অভাবের কারণে খুব অল্প বয়সে ফারুক শেখ নামে এক যুবকের সাথে তাকে বিয়ে দেয় বাবা-মা। বিয়ের মাত্র ৬ মাস পর তার বাবার মৃত্যু হয়। এর পর তার মাও মারা যান। হতভাগ্য শাবানার দুঃখের এখানেই শেষ না। বিয়ের মাত্র দেড় বছরের মাথায় স্বামী তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। তখন তার কোলে মাত্র ৬ মাস বয়সী শিশু সন্তান।
শাবানা বিলাপ করতে করতে বলেন, মায়ের পেট থেকে পড়ার পর থেকেই কষ্ট করছি। বিয়ের পর ছেলের জন্ম হওয়ায় খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু স্বামী ফেলে চলে যাওয়াতে শিশু সন্তানকে নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখতে থাকি। কিন্তু ভেঙে পড়িনি। তিনি বলেন, গ্রামের লোকজনের সহায়তায় এই আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসের জন্য একটি ঘর পাই। বেঁচে থাকার জন্য লোকজনের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতে থাকি। পুরুষ শ্রমিকদের সাথে কৃষি শ্রমিকের কাজও করি। বাড়িতে কিছু হাঁস-মুরগি পালন করতেন। কোনদিন একটু ভালো খাবার কিনে খাইনি। একটা নতুন জামা-কাপর-স্যান্ডেল কিনে পরিনি। প্রতিবেশীদের দেয়া কাপড় চোপর পড়েই দিন কেটেছে। এভাবে খেয়ে-না খেয়ে চলতে থাকি। সেইসাথে তিল তিল করে সঞ্চয় করতে থাকি। এভাবে তার প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো সঞ্চয় হয়। ঘরের হাঁড়ি-পাতিল, টিনের বাক্স ও কাঁথা-বালিশের ভাঁজে ভাঁজে সে টাকা লুকিয়ে রাখে। যাতে কেউ বুঝতে না পারে। শত কষ্টের মধ্যেও ছেলেটাকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়েছে। আশা করেছিলাম তাকে বিদেশ পাঠাব। এজন্য কয়েকদিন আগে পরিচিত একজনের সাথে কথা বলি। সে জানায়, বিদেশ যেতে কমপক্ষে ৫/৬ লাখ টাকা লাগবে। ইচ্ছে ছিল আরো কিছু টাকা জমানোর পর বাকি টাকা লোন নেব। কিন্তু জমানো সব টাকা পুড়ে যাওয়ায় আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা ফুলচাঁদ সরদার ও সাহেদা বেগম জানান, আগুনে ১০ জনের সর্বস্ব পুড়ে গেছে। এর মধ্যে শাবানা মেয়েটার জন্য তাদেরও খুব কষ্ট হচ্ছে। ও বড় দুঃখী। অনেক কষ্ট করে সে ছেলেকে বিদেশে পাঠাবে বলে টাকা জমিয়েছিল। কিন্তু তার সব টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
গত বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি ও রাজবাড়ী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আসলাম মিয়া আশ্রায়ন কেন্দ্রে ছুটে যান। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ১০ টি পরিবারের মাঝে ১ বস্তা করে চাল, শুকনো খাবার, ১০ টি শাড়ি- কাপড় ও নগদ ১ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা দেন। সেইসাথে তিনি পরবর্তিতেও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমান বলেন, প্রশাসনের পক্ষ হতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মাঝে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ সহায়তার জন্য তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।