রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে মুজিববর্ষের নির্মাণাধীন ঘর ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের চরকৃষ্ণপট্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নজির হোসেন মোল্লা বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন এটি মুজিববর্ষের ঘর তা তিনি বুঝতে পারেননি।
জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের চরকৃষ্ণপট্টি এলাকায় মৃত ছাত্তার শেখের ছেলে আকরাম শেখ এর নামে একটি ঘর বরাদ্দ হয়। সেই ঘরে জায়গায় নিজস্ব দাবি করে নির্মিত ঘর পরিবারের সকলে মিলে ভেঙে দেন সহকারী অধ্যাপক নজির মোল্লা।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর ডিজাইন অনুযায়ী গোয়ালন্দ উপজেলায় ১০০টি ঘর নির্মাণ হচ্ছে। কৃষ্ণপট্টি এলাকার সরকারি দুই শতাংশ জমির ৪০০ বর্গফুট জায়গার ওপর নির্মিত প্রতিটি পাকা ঘরের সামনের বারান্দাসহ দুটি শয়ন কক্ষ, পিছনে রান্না ঘর ও শৌচাগার রয়েছে।
২লাখ ৫৯হাজার ৫শত টাকা ব্যায়ে প্রতিটি ঘর তৈরি হচ্ছে। ঘর নির্মাণ বাস্তবায়ন কমিটি সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সদস্য সচিব উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। সদস্য হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ।
মুজিববর্ষের ঘরের সুবিধাভোগী আকরাম শেখ জানান, প্রায় ৩০ বছর পূর্বে আমার পিতা ছাত্তার শেখ কৃষ্ণপট্টি এলাকায় ৭ শতাংশ জায়গা ক্রয় করেন। ঘর তোলার সামর্থ না থাকায় ঘর করতে পারিনি। স্ত্রী, মা ও তিন সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়ির বারান্দায় বসবাস করছি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি সরকারি পাকা ঘর বরাদ্দ হয়। সেই ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ঘর তৈরি অর্ধেক কাজের বেশি অংশ হওয়ার পর নজির মোল্লার বড় ভাই ফজল মোল্লা, তার স্কুল শিক্ষিকা বোন রাশেদা খাতুন লোকজন নিয়ে রাজ মিস্ত্রীদের মারধর করে সবাইকে তাড়িয়ে দেন। এসময় নির্মিত ঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেন।
ঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে রাতেই ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেনের সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সত্যতা পান গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুল হক খান মামুন।
রাজমিস্ত্রী নুরু সরদার বলেন, আমার ভাই বিল্লাল সরদার সহ ৫জন লোক কাজ করছিল। নজির স্যার এবং তার পরিবারের লোকজন সবাইকে তাড়িয়ে দিয়ে ভাঙচুর চালায়। বাধা দিলে আমাদেরও আঘাত করে।
ছোটভাকলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, আকরামের বাবার নামের জমির দলিল রয়েছে। ওই জমি মিউটিশন করা হয়েছে। সেখান থেকে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের নামে দুই শতাংশ জমি লিখে দেওয়ার পর আকরামের মুজিববর্ষের পাকা ঘরের কাজ শুরু হয়।
মুজিববর্ষের ঘর ভেঙ্গে দেওয়ার কথা শিকার করে কলেজ শিক্ষক নজির হোসেন মোল্লা বলেন, এটা মুজিব বর্ষের ঘর আমার বড় ভাই বা বোন কেউ বুঝতে পারেনি। যে কারণে ভেঙ্গে দিয়েছে। তবে আমি ঘটনাস্থানে ছিলাম না। এছাড়া যে জমিতে ঘর তৈরি হচ্ছে সেটা আমাদের নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুল হক খান মামুন জানান, ভাঙচুরের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সরকারি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক নজির হোসেন মোল্লাসহ বোন জামাই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিলন মন্ডলকে ডেকে এনেছিলাম। তাদেরকে বুধবারের মধ্যে ঘরের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিতে নির্দেশনা প্রদান করেছিলাম। দুই দিন পার হলেও পদক্ষেপ না নেয়ায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।