রাজবাড়ী রেল সেকশনের অধীনে ৩২টি স্টেশনের মধ্যে ১০টি স্টেশনে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। অন্য ২০টি স্টেশনে জনবল সংকট নিয়ে চলছে রেল। অনেক ঝুঁকিপূর্র্ণ রেল গেটগুলোতে নেই গেটকিপার। জনবল শূন্য রেল ষ্টেশনগুলোতে অনুমানের উপর নির্ভর করে চলে ট্রেন। জনবল সংকটের কারণে অবসরে যাওয়ার পরও অনেক রেল ষ্টেশনে চুক্তিভিক্তিক কর্মস্থানে রয়েছে ষ্টেশন মাস্টার। বছরের পর বছর এমনি ভাবে চলছে রাজবাড়ী রেল সেকশন। রাজবাড়ী রেল সেকশন রক্ষা করতে জরুরী ভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি রাজবাড়ী সহ দক্ষিণ-পশ্চিঞ্চলের সাধারণ মানুষের।
রাজবাড়ী রেল সেকশন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজবাড়ী রেল সেকশনে রাজবাড়ী, পাঁচুুরিয়া, গোয়ালন্দ বাজার, গোয়ালন্দ ঘাট, সূর্যনগর, বেলগাছি, কালুখালী, পাংশা, মাছপাড়া, খুকশা, খানখানাপুর, বসন্তপুর, আমিরাবাদ, অম্বিকাপুর, ফরিদপুর, তালমা, পুখুরিয়া, ভাঙ্গা, রামদিয়া, বহরপুর, আড়কান্দি, নলিয়াগ্রাম, মধুখালী, বোয়ালমারি, শাতল, বণমালিপুর, ¯্রহাইল, কাশিয়ানি, ভাটিয়াপাড়া ঘাট, চাপতা, গোপালগঞ্জ ও গোবড়া রেল ষ্টেশন রয়েছে।
এর মধ্যে গোয়ালন্দ বাজার, সূর্যনগর, বেলগাছি, মাছপাড়া, খানখানাপুর, বসন্তপুর, অম্বিকাপুর, বহরপুর, নলিয়াগ্রাম, রামদিয়া রেল ষ্টেশনে নেই ষ্টেশন মাস্টার সহ কোন কর্তকর্তা-কর্মচারী। কর্মকর্তা-কর্মচারী বিহীন ষ্টেশনগুলো নিয়মিত অনুমানের উপর নির্ভর করে ট্রেন থামানো হয়। যাত্রী উঠা-নামা করেন। অন্য ২২টি ষ্টেশনগুলো পর্যাপ্ত পরিমান জনবল নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্টেশন মাস্টার বলেন, একটি ষ্টেশনে ২জন ষ্টেশন মাস্টার, বুকিং সেক্টর ২জন, পি ম্যান ৪জন, পোর্টার ৩জন, টিকিট কালেক্টর ২জন ও সুইপার ২জন সহ মোট ১৫জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রয়োজন। সেই হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারী বিহীন ১০টি রেল ষ্টেশনে ১৫০ জন সংকট রয়েছে। অন্য ২২টি ষ্টেশনগুলোতে রয়েছে জনবল সংকট।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রেল সেক্টরে দুই প্রকার গেট রয়েছে। একটি ট্রাফিক গেট ও ইঞ্জিনিয়ার গেট। দুই গেটের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুমোদিত গেটগুলোতে গেট ম্যান নেই। বছরের পর বছর অনুমানের উপর নির্ভর করে ট্রেনগুলো চলাচল করে।
গোয়ালন্দ বাজার রেল ষ্টেশন সংলগ্ন একটি ট্রাফিক গেট (টি-৩) রয়েছে। এই গেটে ২জন কর্মরত থাকার নিয়ম। গুরুত্বপূর্ণ এই গেট ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ, রিক্সা-ভ্যান, অটো, প্রাইভেটকার-মাক্রোবাস, ট্রাক সহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন চলাচল করে। কিন্ত গুরুত্বপূর্ন এই ট্রাফিক গেট (টি-৩) কোন গেট কিপার নেই। গোয়ালন্দ বাজার রেল ষ্টেশনেও কোন ষ্টেশন মাস্টার সহ কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। কোন প্রকার নিরাপত্তা না থাকার কারণে গোয়ালন্দ বাজার ট্রাফিক গেট-৩ (টি-৩) গেটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
অনুসন্ধানে আরোও জানা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারী বিহীন রেল ষ্টেশনগুলোর ভবন তালা বন্ধ রয়েছে। জ্বলে না কোন লাইট। ষ্টেশনের মূল্যবান জিনিসপত্র দেখার জন্যও নেই কোন কর্মচারী। সন্ধ্যার পর এই সকল ষ্টেশনে ভুতুরে পরিবেশ তৈরি হয়। এই সুযোগে ষ্টেশনগুলো মাদকের আখড়া গড়ে উঠেছে। রেলের অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাচ্ছে। ষ্টেশনের আশ-পাশে মূল্যবান জমি দখল করে বহুতল ভবন এবং মার্কেট তৈরি হচ্ছে।
গোয়ালন্দ ঘাট রেল স্টেশনের হোটেল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ এই স্টেশনে পাশে হোটেল করছি। এক সময় এই রেল ষ্টেশনে রমরমা ছিল। সারাদিন একটার পর একটা ট্রেন আসতো। কর্মব্যস্ত থাকতো শতশত মানুষ। এখন এই রেল ষ্টেশন ভুতুরে অবস্থা তৈরি হয়েছে।
পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, রাজবাড়ী সেকশনে কতগুলো ষ্টেশন রয়েছে সঠিক জানা নেই তার। খোঁজ করে বলতে হবে।