দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১জেলার প্রবেশদ্বার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট। তীব্র যানজটে পদ্মা নদী পারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে সহস্রাধিক যানবাহন। কোনো কোনো পরিবহনকে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে নদী পারের জন্য। যেকারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের।
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। পরিবারসহ বেশিরভাগ মানুষ দূরপাল্লার গণপরিবহনে ছুটছেন। এজন্যই স্বাভাবিকের তুলনায় গত দুদিনের চেয়ে শনিবার সকাল থেকে বাসের চাপ বেড়েছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকায় দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রায় ১০ কিলোমিটার দুই লাইনে যাত্রীবাহী বাসের দীর্ঘ সিরিয়ালের সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা। গরমে আটকা থেকে থেকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের আগে ও পরে ১০ দিন অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক বন্ধ থাকার কথা থাকলেও গত ভোর রাত থেকেই পণ্যবাহী ট্রাক ঢুকতে শুরু করেছে। এতে যানবাহনের সারি দীর্ঘ হওয়ার পাশাপাশি যাত্রীবাহী বাস পারাপারে বিঘœ ঘটছে। প্রতিটি যাত্রীবাহী বাসকে ফেরি পেতে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা সিরিয়ালে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
ফেরি বাড়ানো হলেও প্রয়োজনের তুলনায় দীর্ঘদিন ধরে ঘাট কম এবং নদীতে হালকা স্রোত থাকায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায় , ঈদ উপলক্ষে গাড়ির বাড়তি চাপ সামলাতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ২১ টি ফেরি চলাচল করছে । ১২টি রো রো (বড়), ৬টি ইউটিলিটি (ছোট) এবং ১টি কে-টাইপ (মাঝারি) ও দুইটি ডাম্প (টানা) ফেরি ।
শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটে অপেক্ষা করে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট হতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দুই লাইনে গোয়ালন্দ মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যাত্রীবাহী বাসের দীর্ঘ সারি। এর মধ্যে শতাধিকের বেশি অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকও রয়েছে। যাত্রীবাহী বাসগুলোকে ফেরির নাগাল পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা।
বরিশাল থেকে আসা ঈগল পরিবহনের স্টাফ জসীম শেখ বলেন, শনিবার সকাল ৬ টার সময় বরিশাল থেকে ছেড়ে এসে সাড়ে ৯ টার পরে গোয়ালন্দ রেলগেট এলাকায় সিরিয়ালে আটকা পরি। দুপুর ১ টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া লঞ্চ টার্নিং এলাকা পর্যন্ত আসতে পেরেছি। অর্থাৎ প্রায় ৪ ঘন্টায় ৪ কিলোমিটার পথ আসতে পেরেছি। এখান থেকে ঘাট আরোও আধা কিলোমিটার দূরে। গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পরছে। প্রচন্ড তাপদাহ ও ধূলাবালির জন্য বাইরেও যেতে পারছে না। আর কখন ফেরিতে উঠতে পারবো তাও জানি না!
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক ( বাণিজ্য) মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকায় দুটি ফেরি যুক্ত করে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ২১টি ফেরি চলছে। এবার ঈদের আগে অধিকাংশ যাত্রীই ভোগান্তি ছাড়া নদী পার হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ঈদের পরে ঘাটে কিছুটা সিরিয়াল থাকলেও কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়া মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে পারার কথা থাকলেউ ব্যাক্তগত গাড়ির চাপ বেশি থাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি জানান।