প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আগে-ভাগেই শুরু হয়েছে পদ্মা নদীর ভাঙন। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে ভাঙনের তীব্রতা। অথচ নৌবন্দর আধুনিকায়নের বড় কাজ হবে। সেখানে থাকবে নদী শাসনের কাজও, তাই অন্যান্য বছরের মত আপদকালীন কোন কাজও হচ্ছে না ভাঙনরোধে।
এদিকে ফাইল চালাচালি ও বুয়েটের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আটকে আছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌবন্দরের আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ। এ কাজের অপেক্ষায় ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোন পদক্ষেপ না নিলেও এখন আতঙ্কে দিন কাটছে নদীপাড়ের মানুষের।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানাগেছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এ নৌ-রুটের দৌলতদিয়া চার কিলোমিটার ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় ২ কিলোমিটার স্থায়ীভাবে আধুনিকায়ন করার জন্য বিআইডব্লিটিএ কর্তৃক ৬৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে গত বছরের জানুয়ারী মাসে কাজটি করার দায়ভার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু করতে না পারা ও দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে এ কাজের বর্তমান ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ শত কোটি টাকা। যে কারণে নকশার বিশ্লেষন করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নতুন করে লঞ্চঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে, এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে পদ্মাপারের মানুষ। ভাঙন ঝুঁকিতে আড়াইশত বসতবাড়ীসহ দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট সহ বহু স্থাপনা। গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের লালু মন্ডলের পাড়া এলাকার বাসিন্দা তমছের শেখ বলেন, পদ্মায় এর আগে দুইবার বিলীন হয়েছে তার বসতবাড়ী। শেষ সম্বল চার শতাংশ জমির উপরে একচালা টিনের ঘর তাও এখন ভেঙ্গে নিয়ে বসতি গড়তে হচ্ছে সরকারী রাস্তার পাশে। সৃষ্টিকর্তার উপরই তার একমাত্র ভরসা। শুধূ তিনি নয়, তার মতো আরো অন্তত অর্ধশত পরিবারের এখন ভাঙ্গন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে। ক্ষোভের সাথে এলাকাবাসী বলেন, প্রতি বছরই মাপঝোপ হয় কিন্তু হয় না কাজ। গত চার বছর যাবৎ স্থায়ী কাজ হবে শোনা যাচ্ছে কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। বিআইডব্লিটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তাদের স্বার্থ হাসিলে পানি বৃদ্ধির সময় সামান্য জিও ব্যাগ ফেলে, সারা বছর তাদের আর কোন খোঁজ থাকে না। যে কারণেই ভাঙ্গনের কবলে পরে দৌলতদিয়া ঘাট।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটের ৪ কিলোমিটার এলাকার জন্য ৫১০ কোটি টাকা এবং পাটুরিয়া ঘাটের ২ কিলোমিটার এলাকার জন্য ১৭০ কোটি টাকাসহ ৬৮০ কোটি টাকা পাশ হয়েছে গত বছরের জানুয়ারীতে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি ও নকশার পরিবর্তনের কারণে নতুন করে সাড়ে ১২ শত কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। যা বুয়েটে পরীক্ষা নিরিক্ষা চলছে। এ বছরের ভাঙ্গন রোধেও জিও ব্যাগ ফেলা হবে, তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয় বলেও মনে করছেন তারা।